Tue 25 November 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে প্রদীপ গুপ্ত (গুচ্ছ)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে প্রদীপ গুপ্ত (গুচ্ছ)

ঘৃণিত প্রেম

মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবসন্ন 
অথবা ভালো না বাসার দারুণ ভয়ে 
তুমি আজও রাতে আমার কবিতার প্রেমে পড়বে।
পড়বেই। 
আমি জানি, 
মুখে না বললেও 
তুমি আমাকে ভালোবাসো।
আর সে হিসেবে আমার কবিতাও। 

আগামীকাল ফের পাগল হবে তুমি
ওফ্, সে যে কী অসম্ভব ঘৃণায়
আবার পাগল করবে আমায়,
করবেই। 
আমাকে ফের দূরে সরাতে চাইবে
মনের থেকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে ফের, 
যেমনটা আজও সারাটাদিন করেছো।
আজ যে কবিতাটা তোমায় মুগ্ধ করেছে,
ফিরিয়ে এনেছে প্রেমে, 
কাল সেই কবিতাকেই ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে 
ঘোড়া বা গরুর বিষ্ঠায়।
চাইবেই।

ফের রাত আসবে। 
চাঁদের জোছনায় আর কামিনী ফুলের সৌরভে
ভেসে যাবে চরাচর। 
ফের তুমি বুকে টেনে নেবে আমার কবিতার খাতা,
চুমু খাবে, আদর করবে, চোখের জলে ভাসিয়ে দেবে পৃষ্ঠা, 
দেবেই। 
ফের পাগল করে দেবে আমাকে, আমার কবিতাকে,
আর সে পাগলামোর সাক্ষী থাকবে 
চোখের জল, কবিতার খাতা, জোছনা, ফুলের সৌরভ 
আর দুটো হৃদয় ---


সংসার

চায়ের কাপটা ঠকাস করে রাখতে রাখতে
কীসব কথা গজর গজর করে যায় আমার বৌ
কোনও কথা কানে ঢোকে কোনও কথা ঢোকেনা।
আপনমনে টেবল গুছোয়, আলমারির তাকে
ডাই করে রাখা বইয়ের ধুলো ঝাড়ে, কুটনো কোটে
রান্না করে, সারাদিনে যত কাজ...

আমি বসে পত্রিকা পড়ি, টিভিতে খবর দেখি, আর...

সেরকমভাবে আর কিছু করিনা। আমার পৌরুষ আমাকে আটকে রাখে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় গিয়ে একটু চা করি, কাপপ্লেট
এগিয়ে দিয়ে একটু মিষ্টি হেসে তাকাই, একটু... একটুখানি খুনসুটি করি, 
আমার বৌ হলুদ মাখা হাত দুটো বেসিনে ধুয়ে কাপড়ে মুছতে মুছতে বলে উঠবে -- কী হলো হঠাৎ! তোমার মন ঠিক আছে তো! আর শরীর!

ছবিটা দেখি বটে কিন্তু পা ওঠাই না। থিতু হয়ে বসে থাকি।

একদিন - সেদিন সবে শীত
ফলের কুচি ভরা পিরিচ টেবিলে রাখতে রাখতে
আমার দিকে তাকালো। টিভির রিমোট হাতে তুলে নিয়ে বন্ধ করে দিলো টেলিভিশন। খবরের কাগজটা ভাঁজ করে পাশের সোফায় রাখতে রাখতে বলে উঠলো
বলার মতো কোনো কথা থাকেনা তোমার মনে?
তোমার - তোমারও কি?  
একমিনিট থমকে দাঁড়ালো সে। যেন ঝরে পড়ার আগেকার মেঘ না কি ভরন্ত শিউলি!
সারাদিন এতো কথা তাহলে কার সাথে বলি?
তোমার অন্তরের সাথে। সেসব শুধুই উচ্চারণ। কথা নয়।
কথা নয়?
না,শুধুই শব্দ।

কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলো সে।

আমাদের পাঁচটাই ঘর।
কিন্তু ঘরগুলোর কোনো অন্তর নেই। শুধুই থরেবিথরে
সাজিয়ে রাখা কিছু শব্দ।
কখনও উচ্চারিত কখনও বা অনুচ্চারিত গুমড়ে মরা
শোকেস ভরা শব্দদের গ্রন্থিত অবয়ব। 
এই ঘরকে আমরা বিজ্ঞাপিত করি সংসার নামের একটা মায়াময় মোহময় প্রাণহীন শব্দে।


দায়বদ্ধ

মৃতদেরও জীবিতদের কাছে একটা দায় থেকে যায়
দায় থেকে যায় জানিয়ে দেবার,
জাগিয়ে দেবার।
বুঝিয়ে দেবার যে জীবিতরা আদৌ বেঁচে আছেন
নাকি মনেপ্রাণে মরে গেছেন বহু আগেই।
বুঝিয়ে দেওয়ার যে, 
যেভাবে একজন মমি বেঁচে থাকেন, 
সেভাবেই বেঁচে আছে কিনা প্রাণ।

অন্ধকার আর আলো
দুয়েরই অহংকার আছে
কারও অহংকার, গোপন করার কৌশল
কারও আবার প্রকাশ করার গৌরব।

জীবিত অথবা মৃত
দুই অবস্থার জন্য একমাত্র আগুনই অপেক্ষায় থাকে।
জীবিতদের সাথে মৃতদের এটুকুই তফাৎ 
মৃতরা অপেক্ষায় থাকে জ্বলবার
আর জীবিতরা জ্বালানোর।

তুমি মৃত্যুকে ভয় পেতেই পারো
তুমিও জীবন্মৃত হতেই পারো
তবে
জ্বলবার আগে জ্বালিয়ে দিয়ে যেও
নইলে তুমি যে জন্মেছিলে
সে কথা আগুন জানবে কীভাবে?

আগুন যে জীবিতদের চেনার অপেক্ষায় থাকে
অপেক্ষায় থাকে এক প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশলাকার জন্য।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register