Tue 25 November 2025
Cluster Coding Blog

কথা সাগরে মৎসকন্যা (ধারাবাহিক) নীলম সামন্ত - স্বাদকাহন (পিটা রুটি ও হুমাস)

maro news
কথা সাগরে মৎসকন্যা (ধারাবাহিক) নীলম সামন্ত - স্বাদকাহন (পিটা রুটি ও হুমাস)

স্বাদকাহন - পিটা রুটি ও হুমাস

রুটি তো আমরা সকলেই জানি কিন্তু পিটা রুটি! পিটাই পরোটার মতো কিছু কি? না, একেবারেই নয়। সামান্য ভোজনরসিকরা তো অবশ্যই জানে পিটা রুটির কথা বিশেষ করে যারা বেকিং করেন৷ কয়েকদিন আগেই এক দিদির পোস্টে দেখলাম পিটা রুটি ফালাফেল ও হুমাস সহযোগে পরিবেশন করেছেন৷ এতো লোভনীয় দেখতে হয়েছিল। তাই ভাবলাম এতো খাবারের গল্পের সাথে পিটা রুটির গল্পটাও যোগ করে দিই৷ 

ভাত যেমন আমাদের দেশেই উৎপাদিত খাবার তেমনি রুটি এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। সে আজকের কথা নয়। মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার গল্প। যে যুগে মানুষ পাথর দিয়ে শস্য পিষে খেত৷ প্রাচীন মিশরীয় শহরগুলির খননকাজ থেকে দেখা যায় যে তারা গম এবং বার্লি চাষ করত এবং এগুলি দিয়ে রুটি তৈরি করত। বিশ্বাস করা হয় যে মিশরীয়রা দুর্ঘটনাক্রমে খামিরযুক্ত বা ভাজা রুটি আবিষ্কার করেছিল যখন শস্য এবং জলের মিশ্রণটি একটি উষ্ণ জায়গায় রেখে দেওয়া হত, যা প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন খামির মুক্ত করে এবং একটি ফুলে ওঠা ময়দা তৈরি করে। আবার পরে যখন ময়দা মাখা হবে তখন তাতে আগের মাখা ময়দা খানিকটা মিশিয়ে দিত। ফলে সেটিও সহজেই ফুলে উঠত। 

আবার কোথাও কোথাও এমনও বলা হয়েছে পিটা রুটি বা পিটা ব্রেডের উৎস হিসেবে যে অঞ্চল উল্লেখযোগ্য তা ফার্টাইল ক্রেসেন্ট নামে খ্যাত৷ এই এলাকাটি আরব মরুভূমি এবং আর্মেনিয়ান হাইল্যান্ড পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত ছিল এবং চাঁদের বাঁকা আকৃতির মতো বিস্তৃত ছিল— এলামের অঞ্চল থেকে শুরু করে আসিরিয়া পর্যন্ত উপরে এবং সেখান থেকে ভূমধ্যসাগরের উপকূল ধরে নিচে মিশর পর্যন্ত প্রসারিত। এখানকার উর্বর জমি এবং কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত হওয়ায়, ভ্রমণকারী এবং দেশ বিদেশ বিজয়ীদের ফার্টাইল ক্রিসেন্ট অঞ্চলের প্রতি আকর্ষণ কম ছিল না। শোনা যায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম কৃষিভিত্তিক মানব সমাজ এখানেই গড়ে উঠেছিল। 

কোন কোন খাদ্যবিদ বলে থাকেন, বেদুইনরাই সম্ভবত প্রথম পিটা রুটি তৈরি করেছিল। দীর্ঘ দিন রোদে কাটানোর পর, মরুভূমিতে ঘুরে, তারা ক্যাম্প করে একটি সামান্য বিশ্রাম তৈরি করেছিল। গুঁড়ো শস্য জলের সাথে মিশিয়ে ময়দা তৈরি করা হত যা থেকে চ্যাপ্টা গোলাকার রুটি তৈরি করা হত। রুটিগুলি মিশ্রণ পাত্রের নীচে রাখা হত এবং খোলা আগুনে বেক করা হত। এই রুটিটি পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হত, পাশাপাশি খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

যাইহোক, সেই আবিষ্কৃত প্রাচীন খাবারটি বহনযোগ্য ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। আর বিখ্যাত কোন জিনিসের সব সময়ই উন্নত সংস্করণ দেখা যায়। সহজিকরণও ঘটে। ১৬৬৫ সালে, একজন উদ্যোগী বেকার তার সংরক্ষিত ময়দার সাথে ব্রিউয়ারের খামির যোগ করার কথা ভাবলেন। আর তারপর থেকেই পুরনো ময়দা মাখা ব্যবহারের জায়গায় শুরু হল খামির অর্থাৎ ইস্টের ব্যবহার৷ একটু আগেই বললাম না, পাথরের সাহায্যে শস্য পিষাইএর কাজ হত, পরের দিকে একটি যন্ত্রও আবিষ্কার হয়েছিল৷ ব্যবহারটি ছিল অনেকটা এরকম— একটি গবাদি পশু-চালিত পাথর একটি নিচু, লম্ব, স্থির পাথরের উপরে ঘুরত। আর শস্যও পিষাই হয়ে যেত। সেটির সময়ের সাথে সাথে উন্নত সংস্করণ ঘটেছে, গবাদি পশুর পরিবর্তে জলকল বা বায়ুকল ব্যবহার করা হল। আঠারো শতকের শেষের দিকে, একজন সুইস মিলার একটি ইস্পাত রোলার প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন যা পিষে ফেলার প্রক্রিয়াটিকে ব্যাপকভাবে সরলীকৃত করেছিল। অর্থাৎ রুটি যে সারা বিশ্বব্যাপী লোকের মস্ত চাহিদা তা বোঝাই যায়৷ 

এই চাহিদার পেছনে আরও একটা বিশেষ কারণ আছে৷ তা হল, পিটা রুটি কে মাঝ বরাবর কেটে দিলেই একটি পকেট দেখা যায়৷ যেখানে মানুষ নানান টপিংস যোগ করে সহজেই পেট ভরিয়ে খেতে পারত। টপিংস মানে, মাংস সবজি, স্যালাদ, ডিপ ইত্যাদি। এই পিটা ব্রেডের সাথে ব্যবহৃত ডিপটিই হল হুমাস। খ্রিস্টপূর্ব ১৩ তম শতকে মিশর ও লেভান্ত অঞ্চলের খাদ্য সংস্কৃতিতে ছোলা পেস্ট ছিল। ১৩শ শতকের মিশরের এক কূটনৈতিক কুলিনারি বইতে আজকের মতো হুমাসের রেসিপি পাওয়া যায়। ধরা হয় সেই সময় থেকেই এই ডিপের প্রচলন। আজকের খাদ্য দুনিয়ায় পিটা রুটির মধ্যে এই ছোলার পেস্ট ও ছোলার বড়া (যা ফালাফেল নামে খ্যাত) সাথে লেটুস ও অন্যান্য স্যালাদ বেশ প্রচলিত। ফাইবার, প্রোটিনে ভরপুর খাবারটি কিন্তু তৈলাক্ত খাবারগুলির তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে বলেই আমার মনে হয়।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register