Wed 19 November 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক গল্পে বিশাখা বসু রায়

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক গল্পে বিশাখা বসু রায়

অদ্ভুতুড়ে 

অবিশ্বাসীরা এড়িয়ে যাবেন...

পর্ব - এক

অর্ক Taj Bengal এর Parking lot থেকে bike টা নিয়ে গেট এর দিকে এগোলো। মনে মনে গজগজ করতে করতে এসে গেট এর সামনে দাঁড়ালো। খুবই বিরক্ত ও... বিড়বিড় করে বললো... ডাক্তার গুলো সব এক সে বড়কর এক! বিনা পয়সায় মাল পেয়ে হামলে পড়েছে, থামতেই আর চায়না! Bar বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনেই Bar Counter এ হানা দিয়ে একসঙ্গে তিনটে চারটে drinks এর জন্যে অশান্তি করতে লাগলো! Drinks শেষ করে dinner খেয়ে নিলে তবেই তো আমরা খেতে পারবো! সে ভাবনা কি ওদের আছে? তার ওপর Senior রা না খেলে কি আমরা খেতে পারি? ডাক্তার দের খাওয়া শেষ হলে ওদের বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে রওনা করে, তবেই তো আমরা বেরোতে পারবো !? এতো রাত হয়ে গেলো, বাড়িওয়ালা ঝামেলা না করে! অবশ্য আমি বলেই এসেছি আজ ডাক্তারদের Conference আছে, রাত হবে ফিরতে!

.

.

অর্ক, মানে অর্কপ্রভ শিকদার, মাত্র কয়েক মাস আগে এই চাকরিতে যোগ দিয়েছে। প্রথম কয়েক মাস কুচবিহারে কাজ করার পর, সবে কলকাতায় বদলি হয়ে এসেছে। B. Pharm পাস করার পরই চাকরিটা পেয়ে গেলো, কি ই বা বয়েস ওর, এরই মধ্যে বাঁকুড়ার গ্রামের বাড়িতে বাবা মা কে ফেলে চাকরির শর্ত পূরণ করতে শহরে চলে আসতে হয়েছে!

.

.

Taj Bengal এর সামনের রাস্তাটা One Way..

ডানদিকে গেলেই বড় রাস্তা, কিন্তু সে দিকে যাওয়া যাবে না, বাঁ দিকে যেতে হবে! Signal লাল থেকে সবুজ হলো, সামনে দাঁড়ানো গাড়িগুলো এগোলো, ও ও বাঁ দিকে বেঁকলো। National Library 'র সামনে থেকে, বাঁ দিকে বেঁকে ও এগোলো... বাঁ দিকে মহিলাদের সংশোধনাগার ফেলে এগিয়ে এসে রাস্তার মোড়ে পড়লো, ডান দিকে একটা রাস্তা বেঁকে গেছে Presidency সংশোধনাগার এর দিকে, আর সোজা এগোলেই বাঁ দিকে " উত্তরণ ", তার পর খ্রীষ্টান দের কবরখানা। সেদিকে তাকিয়ে Bike এর গতি বাড়িয়ে দিলো ও, গা টা ছমছম করে উঠলো যেন! তাড়াতাড়ি করে Park Circus উড়ালপুল এ উঠলো, এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে ওকে , রাত বারোটা যে বাজতে চললো!অনেক খুঁজে পেতে একটা সাধ্যমতো বাসস্থান পেয়েছে ও, কিন্তু জায়গাটা খুব একটা সুবিধের নয়! জায়গাটা নির্জন,  বাঁ দিকে আবার একটা বিশাল, খোলা গোরস্থান আছে..! সামনের বিস্তৃত এলাকায় একটা বিরাট আবাসন তৈরী হচ্ছিলো, কিন্তু সেটা নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আধতৈরী হয়ে পড়ে আছে! বিলাসবহুল আবাসন টা উচ্চবিত্ত দের জন্য তৈরী হচ্ছিলো, হয়ে গেলে এই এলাকাটার দামদর বাড়ার সাথে সাথে জনবহুল ও হয়ে যেতো, কিন্তু এখন সেখানে অন্ধকার ই অন্ধকার! অর্ক আর একবার ঘড়িটা দেখলো... নাঃ, বারোটা বেজে গেছে, এখনও বাঁ দিকের গোরস্থানটা পেরোতে হবে! ও জোরে accelerator দাবালো, কিন্তু একটু এগোতেই Bike টা হঠাৎ থেমে গেলো!!! Bike থেকে নেমে পড়ে ও চেষ্টায় লেগে পড়লো। Bike টা start দেওয়ার! কিন্তু কোথায় কি, bike তো কোনো সাড়া দিচ্ছে না!চাকরিটা পেয়ে ও এই Second hand bike টা কিনেছিলো, কিন্তু আজ অবধি এই bike টা ওকে কোনোদিন এভাবে বিপদে ফেলেনি! বিপদ বলে বিপদ! পাশেই গোরস্থান, রাত বারোটা বেজে গেছে, ওর বেশ অস্বস্তি হচ্ছে! Bike টা ঠেলতে শুরু করলো, অন্ধকারে headlight জ্বালিয়ে এগোতে লাগলো, হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে একজন মহিলা এসে ওর সামনে দাঁড়ালো! ওর পিলে চমকে উঠলো!! কে এ ? আগে তো দেখিনি একে ? আর এতো রাত্তিরে কি করছেন উনি এখানে ? পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো ও, কিন্তু মহিলা দুহাত ছড়িয়ে ওকে আটকিয়ে দিলো! বললো... দাঁড়াও, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে! অর্ক'র শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল ঘাম নেমে গেলো! কি বলছে এই মহিলা, ওর সঙ্গে কথা আছে ? কি কথা থাকতে পারে ? বললো.. আমার সঙ্গে? কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না? ..চেনো, চেনো ! খালি এখন চিনতে পারছো না! তোমার সঙ্গে আমার এ জন্মের না, তোমার আগের জন্মের চেনা ! আমি এতকাল অপেক্ষা করে আছি, কবে তোমার সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে !! ... আগের জন্মের ? এ সব কি বলছেন আপনি ? ... হ্যাঁ, ঠিকই বলছি! আমি কত যে খুঁজেছি তোমায়, জানতাম একদিন না একদিন ঠিক দেখা হবে! আবছা আলোয় অর্ক যতটুকু দেখতে পেলো তাতে বুঝলো মহিলা খুব সুন্দর দেখতে, পরনে লাল রঙের সিল্কের শাড়ী, জরি পাড় দেওয়া, মাথায় ছড়ানো টকটকে লাল সিঁদুর, কপালে লেপ্টে থাকা সিঁদুরের মধ্যে একটা বড়সর লাল টিপ যার ধারে ওগুলো কি চন্দনের ফোঁটা !? অর্ক 'র সব গুলিয়ে যাচ্ছে ! এ কে, কেনই বা ওকে খুঁজছে ? .... জানি তুমি আমায় চিনতে পারছোনা, পারার কথা ও নয়, আসলে তোমার তো এটা নতুন জন্ম, তাই....!
... মানে ?
...মানে....? সেই মানে বুঝতে হলে তোমায় প্রথম থেকে সব কথা শুনতে হবে!
... দেখুন, অনেক রাত হয়েছে, আর এই জায়গাটাও ভালো না, আমি আজ আসি! এর পর আর বাড়িতে ঢুকতে পারবোনা!
... দাঁড়াও !!
তোমার জন্য এতকাল অপেক্ষা করেছি, সহজে ছাড়ছিনা তোমায়! সব শুনিয়ে তবে ছাড়বো! অর্ক বিরক্ত হয়ে Bike টা start করার চেষ্টা করলো, কিন্তু কোথায় কি, কোনো সাড়া নেই! মেয়েটা এবার ওর সামনে এসে বললো... শোনো সুবীর....
... সুবীর? সুবীর কে? আমি সুবীর না!
এই জন্য বলছিলাম, আপনি কারুর সঙ্গে আমায় ভুল করছেন...
... না! ভুল করিনি !
আজ তোমার নাম অর্ক, কিন্তু আগের জন্মে তোমার নাম ছিলো সুবীর.., সুবীর চট্টোপাধ্যায়, পন্ডিত বাচস্পতি চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে! হাবিবপুর গ্রামে আমরা থাকতাম! ছোটবেলায় একসঙ্গে খেলা করতাম আমরা, একই পাঠশালায় পড়তে যেতাম, খুব ভালোবাসতাম দুজন দুজনকে! বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাই হলো কাল! সুবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রুকসানা খাতুনের ভালোবাসার বিয়ে কেউ মেনে নিলোনা ! লুকিয়ে চুরিয়ে দূর গ্রামের মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা, কিন্তু খবর পেয়ে গ্রামের লোকেরা মন্দিরে এসে হামলা করলো, সঙ্গে আমাদের দু বাড়ির লোক ! টেনে হিঁচড়ে দুজনকে নিয়ে গাছে বেঁধে ঢিল পাটকেল মারতে লাগলো! প্রথম ইঁট টা এসে তোমার কপালে লাগলো, তোমার কপাল ফেটে দরদর করে রক্ত ঝরছে দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই! পরের পর ইঁট পাটকেল এসে লাগলো তোমার আমার গায়ে। তুমি বোধহয় আগেই প্রাণ ত্যাগ করেছিলে, আর আমি খুবই জখম হয়েছিলাম, কিন্তু মরিনি, জানো তো! আসলে মেয়েমানুষের প্রাণ তো, বলে কই মাছের মত জান! কিন্তু কেউ পুলিশ কে খবর দিয়েছিলো, তাই ওরা আসছে শুনে আমাকে নিয়ে আমার দাদারা গাড়িতে তুলে সোজা এখানে এনে ফেললো! প্রমাণ লোপাট করার আশায়, রাতের অন্ধকারে, আমায় জ্যান্ত গোর দিয়ে দিয়েছিলো !! সেই থেকে আমার অতৃপ্ত আত্মা অপেক্ষা করে আছে, কবে তোমার দেখা পাবো! কদিন আগে তোমাকে দেখেছিলাম, গাড়ি করে ফিরছিলে, সঙ্গে আরো লোক ছিলো, তাই পথ আটকাই নি! আশা ছিলো শিগ্গির তোমার দেখা পাবো, আর তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারবো!...এ সব কি বলছেন আপনি ? আমি একদম বিশ্বাস করি না আপনার কথা ! আপনি ঠিক কি চান বলুন তো? আমায় ভয় দেখিয়ে কি পাবেন... আমার কাছে তো সামান্য কটা টাকা আছে.... তাই চাই ? ...না সুবীর, আমার আজ আর টাকা পয়সা গয়না গাটির কিছুই প্রয়োজন নেই, আমি মুক্তি চাই.... মুক্তি ! ....মুক্তি ? মানে? ...হ্যাঁ সুবীর, আমাদের তো বিয়ে হয়েছিলো, তাই আমি তো তোমার স্ত্রী! ... স্ত্রী !!! আপনি কি পাগল হলেন ? আমার কোন স্ত্রী নেই! ... আঃ, কেন বুঝছো না, এই জন্মে নেই, কিন্তু আগের জন্মে তো আমাদের বিয়ে হয়েছিলো, তাই আমি তোমার বউ, আর আমাকে মুক্তি তোমাকেই দিতে হবে ! আমার আত্মার শান্তি চাই , সেটা তুমিই দিতে পারবে! অর্ক 'র গা ছমছম করে উঠলো, তাহলে কি সত্যি ও প্রেতাত্মা? ভীষণ শীত করছে ওর, November মাসের মধ্যরাত , তবুও সেরকম ঠান্ডা তো পড়েনি ? তাও কেন এতো শীত করছে ? Blazer এর মধ্যে দিয়েও যেন ঠান্ডা হাওয়া ওর হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে! কি করা উচিৎ , কি বলা উচিৎ , ও কিছুই বুঝতে পারছে না! এটা সত্যি, না স্বপ্ন, সেটাও বুঝতে পারছে না, শেষে নিজের হাতে নিজেই চিমটি কেটে বেশ ব্যথা পেলো!

ক্রমশঃ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register