Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদিকা উবাচ

maro news
সম্পাদিকা উবাচ

গত পরশু অর্থাৎ ২৫শে নভেম্বর ছিল প্রিয় কবির জন্মদিন -

বাংলা ভাষায় হাতে গোণা গ্র্যান্ড কবি, তাঁদের একজন শক্তি। শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আসলে প্রত্যেক ভাষায় মাঝেসাঝে এমন একেকজন আসেন, যাঁরা আসেন বলে সেই ভাষার আয়ু আরও পঞ্চাশ কী একশো বছর বেড়ে যায়। কেন বাড়ে? কারণ তাঁর লেখার শক্তিতে, সামর্থে সেই ভাষার কাছে আসতে বাধ্য হয় হাজার হাজার, কখনও বা লাখ লাখ একই ভাষাভাষী পাঠক-পাঠিকা। এবং আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, সেটা হল মহাকবির কাব্যবোধের চুম্বকশক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখতে আসেন পরবর্তী তরুণরাও। আজ আর বুঝতে বাকি নেই যে মাইকেল হয়ে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ হয়ে জীবনানন্দের পর সেই গ্র্যান্ড গ্র্যান্ড গ্র্যান্ড কবির নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায় হলেন সেই সমুদ্র যেখানে মুহুর্মুহু ভাবনার ঢেউ এসে ভাঙছে বালির পাড়, জ্বলে উঠছে সাধনার ফসফরাস, উত্তাল শব্দের কোরাস, আর হাওয়ার প্রবল আবেগ। কখনও কখনও আবার কলম বিদ্যুত্‍ তরঙ্গের মত ঝলসে ওঠে, বুকের ভেতর উথালপাতাল, আপনি দৌড়চ্ছেন-জন্ম তাড়া করলে মৃত্যুর দিকে, মৃত্যু তাড়া করলে জন্মের দিকে.! অর্থাত্‍ কিনা বিপজ্জনকভাবে নিমজ্জিত আপনি, আমি, শক্তির সৃষ্ট সমুদ্রে পড়ে এবং পড়তে পড়তে.। আমি বিশ্বাস করি, শক্তি যাঁরা পড়েছেন তাঁদের কাছে 'ধর্মে আছো জিরাফেও আছো'র এই ডিসকোর্স স্পষ্ট। কীভাবে কেউ কখনও বলে উঠতে পারে, আমি 'সোনার মাছি খুন করেছি'-প্রবল ভাবে জানেন 'শক্তি-শালী' পাঠক। এও আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে শক্তিকে পাঠ করতে হলে শক্তিশালি পাঠক হয়ে উঠতে হয়। কারণ তিনি তথাকথিত ভালো কবি নন, এমনকী খুব ভালোদের মধ্যেও পড়েন না 'হেমন্তের অরণ্যে'-এর 'পোস্টম্যান'। যেহেতু শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানে খাঁটি কবি'। মহা প্রতিভা, বোঝেন নিশ্চয়ই। 'অবনি বাড়ি আছো'র মতো ভুরি ভুরি কবিতা সাধারণ মানুষের কন্ঠেও পর্যন্ত আজ সমানভাবে উচ্চরিত হয়৷ 'অনন্ত কুয়োর জলে চাঁদ পড়ে আছে'র মতো অসংখ্য! যা দেখেশুনে বলতেই হয়, কবিতা জগতে এমন বেনজিরের কারিগরও তিনিই। এই যেমন, মোটামুটি যাঁরা কবিতা পড়েন তাঁদেরকে 'কান ধরে' কবিতা পড়ালেন, পড়িয়ে চলেছেন আজও। জলজ্যান্ত প্রমাণ কবির বইয়ের বিক্রি। শক্তি চট্টোপাধ্যায় কবিতায়ও স্বশক্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। শক্তি তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের জীবনের চিত্র নিজেই তুলে ধরেছেন। কবিতার সেই পঙ্ক্তি থেকে আলাদা করা যায় তাঁর জীবনের ইতিহাস। আবার আলাদা করা যায় তাঁর কবিতার ইতিহাসও। যদি পারো দুঃখ দাও, আমি দুঃখ পেতে ভালোবাসি দাও দুঃখ, দুঃখ দাও – আমি দুঃখ পেতে ভালোবাসি। তুমি সুখ নিয়ে থাকো, সুখে থাকো, দরজা হাট-খোলা। আকাশের নিচে, ঘরে , শিমূলের সোহাগে স্তম্ভিত আমি পদপ্রান্ত থেকে সেই স্তম্ভ নিরীক্ষণ করি। যেভাবে বৃক্ষের নিচে দাঁড়ায় পথিক, সেইভাবে একা একা দেখি ঐ সুন্দরের সংশ্লিষ্ট পতাকা। ভালো হোক মন্দ হোক যায় মেঘ আকাশে ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাওয়া তার বন্ধনে বাহুর। বুকে রাখে, মুখে রাখে – ‘না রাখিও সুখে প্রিয়সখি! যদি পারো দুঃখ দাও আমি দুঃখ পেতে ভালোবাসি দাও দুঃখ, দুঃখ দাও – আমি দুঃখ পেতে ভালোবাসি। ভালোবাসি ফুলে কাঁটা, ভালোবাসি, ভুলে মনস্তাপ – ভালোবাসি শুধু কূলে বসে থাকা পাথরের মতো নদীতে অনেক জল, ভালোবাসা, নম্রনীল জল – ভয় করে।   লিখতে থাকুন পড়তে থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ৷ রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register