Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব - ১০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব - ১০)

হায়দ্রাবাদের সালারজং মিউজিয়াম

সালারজং আমার মতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিউজিয়াম। আর আজ আমরা সেই বিশ্ব বিখ্যাত মিউজিয়াম দেখতে যাচ্ছি। সকাল সকালই তৈরি হয়ে গিয়েছি আমরা। ইডলি ধোসা আর ফল খেলাম প্রাতঃরাশে। এখানে ফলটা বেশ সস্তা। দক্ষিণে বেড়াতে আসলে আমি মোটামুটি দক্ষিণের খাবারই খাই। ধোসা আমার প্রিয় খাবার। যাইহোক তিনজনেই রেডি। এবার মিউজিয়াম দেখতে যাব। বেশ টেনশনে আছি শুক্রবার ফেরৎ গিয়েছি মিউজিয়াম বন্ধ ছিল। এখানে জুম্মাবারে দোকান পাট সব বন্ধ থাকে। রবিবারে সব খোলা। শুক্রবার স্নো ওয়ার্ল্ড দেখেছি। শনিবার রামোজি ফিল্ম সিটি দেখে আজ মিউজিয়াম দেখব। হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা অটো নিলাম। চেনা রাস্তা ভাড়াও জানা তাই নো চিন্তা। হায়দ্রাবাদের ঘন ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে আমরা মুসি নদীর তীরে অবস্থিত হায়দ্রাবাদ শহরের সেই বিখ্যাত জাদুঘর দেখতে যাচ্ছি। এই যাদুঘর সেকেন্দ্রাবাদের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনা হচ্ছে। পৃথিবী বিখ্যাত সালারজং মিউজিয়াম। মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালাম। এত ভালো এত সমৃদ্ধশালী মিউজিয়াম এর আগে কখনও আমি দেখিনি। তবে এই মিউজিয়াম দেখতে হলে মিউজিয়াম তৈরির একটা ছোট্ট ইতিহাস অবশ্যই জানা দরকার বলে আমার মনে হয়েছে। যে জায়গায় যাচ্ছি তার ভৌগলিক অবস্থান এবং তার ইতিহাস না জানলে সেই জায়গাটা সম্পর্কে ভালো করে জানাই হয় না। অনুভব করা যায় না। মিউজিয়াম দেখতে দেখতে এক একসময় আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে। কী অসাধারণ সব শিল্পকর্ম! পান্না রঙের ঝাড়বাতি দেখে আমি চোখের পলক ফেলতে পারছিলাম না। পান্না রঙের, গাঢ় গোলাপি রঙের কাচের কারুকার্য করা এই ঝাড়বাতি পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা জানিনা। সেগুলো কার তৈরি কোন শতাব্দীর,, এগুলোর ইতিহাস তো জানতেই হবে। সব লেখা আছে অবশ্য মিউজিয়ামে। কিন্তু অত সময় কই? বেড়াতে গিয়ে পড়ব না দেখব তাই আগেই একটু হোম ওয়ার্ক করে নেওয়া ভালো। আমরা একেরপর এক বিখ্যাত শিল্পীর অসাধারণ সব শৈল্পিক কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখেছি, থেকেছি চার ঘণ্টারও একটু বেশি সময়। একটা মিনিটও একঘেয়েমি লাগে নি। কিভাবে যে হুশ করে কেটে গিয়েছে বুঝতেই পারি নি। আসলে এসব পুরোনো ইতিহাস ঘেঁটে দেখার কী যে আনন্দ সেকথা ভেবে আর কী হবে। তিন চারদিন সময় আমাদের হাতে নেই। তাই এই সীমিত সময়ে যতটুকু দেখে খুশি থাকা যায় আরকি। যা বলছিলাম স্বাধীনতার এক দেড়শ বছর আগের ঘটনা এবং ৪০০/৫০০ বছরের পুরোনো সারা বিশ্ব থেকে তিল তিল করে সংগ্রহ করে আনা সব উল্লেখযোগ্য অসাধারণ দামি দামি প্রত্নবস্তু। তার ইতিহাস একটু না জানলে মিউজিয়ামের সঙ্গে যে ভালোবাসা হবে না। কত শতাব্দীর কোন দেশের জিনিস ,,কিভাবে তৈরি হল মিউজিয়াম,, কার উদ্যোগে হল এসব যাবতীয় তথ্য না জানলে এই মিউজিয়াম দেখার কোন মানেই হয় না। এক একটা ল্যাম্প শেড মার্বেলের মূর্তি আসবাবপত্র দুষ্প্রাপ্য ছবি যা দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। এত অপূর্ব যে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু এটুকু বলতে পারি একবার দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছে করবে। তিন চারদিন হাতে সময় নিয়ে ধরে ধরে দেখলে তবে বেশ ভালো করে দেখা হবে। আমাদের হাতে কালকের হাফ বেলা আছে। কাল রাতের ট্রেনে তিরুপতি যাব।এখনও চারমিনার দেখা হয় নি। গোলকুন্ডা ফোর্ট দেখতে হবে। ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। শিবাজি আমার স্বপ্নের নায়ক। সুতরাং উত্তেজনা আমার চরমে। আমাদের অটো রাস্তার ভীড় কাটিয়ে দ্রুত ছুটে চলেছে। আমাদের যেমন তাড়া ড্রাইভারেরও তাড়া। আমাদের নামিয়ে আর একটা সওয়ারি নেবে। আজ রবিবার মিউজিয়ামে বেশ ভীড় হবে। অনেকেই আমাদের মতো প্রথম দিন এসে ফিরে গেছে। মিউজিয়াম দেখে দুপুরে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি খেয়ে চারমিনার দেখব। সেরকমই পরিকল্পনা করে রেখেছি আমরা। অটো ছুটছে,, বার বার ঘড়ি দেখছি কতক্ষণে যে পৌঁছাব! আমাদের যে সেভাবে খুঁটিয়ে দেখা হবে না বুঝতেই পারছি। কোন কেনাকাটাও করি নি। হায়দ্রাবাদে এসেছি আর মুক্তোর ঝুমকো কিনবনা এ হয় না। যাইহোক এখন আমরা চলেছি মিউজিয়ামের উদ্দেশ্যে। কুড়ি পঁচিশ মিনিটের পথ। এরই ফাঁকে আমি এবার পৃথিবীর সেরা জাদুঘর সালারজং সম্পর্কে বলব। ক্রমশঃ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register