Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ১)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্ত্তী (পর্ব - ১)

নর্মদার পথে পথে 

ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা ব্রহ্মপুরীর ঘাটে এসে পৌঁছেছি। এই সেই বৈদুর্য পর্বত, যাকে আমরা বিন্ধ্যাচল বা বিন্ধপর্বত বলি।এর অপরদিকে রয়েছে সাতপুরা পর্বত। এই দুই পর্বতের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে পূণ্যতোয়া নদী নর্মদা। পূন্যভূমি ভারতের ঠিক মধ্যভাগে প্রবাহিত এই নদীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বয়ে গিয়েছে। উৎস থেকে মোহনায় পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য আটশ'তেরো মাইল বা একহাজার তিনশ'আট কিলোমিটারের একটু বেশি। অমরকন্টকের মহাকাল বা মেকল পর্বত থেকে বেরিয়ে গুজরাতের ভারোচে গিয়ে কাম্বে উপসাগরে পরেছে। তাই এই নদীকে স্থানীয় মানুষেরা মেকলকন্যা বলে সম্বোধন করে। এই নদীর উৎপত্তি নিয়ে নানারকম পৌরাণিক ও লৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে। 'রেবাখন্ড' এবং' নর্মদা পঞ্চাঙ্গ' অনুসারে, মর্ত্যলোকে অমরত্ব লাভকরার জন্য কোনো এক সময়ে দেবাসুরের মধ্যে অমৃতকলস লাভ করার জন্য সংগ্রাম শুরু হয়। যখন সমুদ্রমন্থন শুরু হয় তখন মন্থনের দন্ড হয়েছিলেন মৈনাক পর্বত আর মন্থনরজ্জু বা দড়ি হয়েছিলেন বাসুকিনাগ। দই থেকে মাখন তোলার মত করে বাসুকিনাগের মুখের দিক ধরে দানবকূল এবং লেজের দিক ধরে দেবকূল ক্রমাগত নিজের নিজের দিকে টানতে শুরু করে। এর ফলে নাগরাজ বাসুকির মুখ থেকে তীব্র হলাহল উত্থিত হয়। এই বিষ মাটির সংস্পর্শে এলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য মহাদেব মন্থনজাত বিষ কন্ঠে ধারন করেন এবং নীলকন্ঠ হন। বিষের জ্বালায় আতুর হয়ে দেবাদিদেব তখন যোগবলে সমাধিস্থ হন। দীর্ঘকাল এইভাবে সমাধিস্থ থাকার সময়ে তাঁর কন্ঠ থেকে বিন্দু বিন্দু স্বেদ বা ঘাম নির্গত হয়ে ডানপায়ের ওপর পরে এবং এক দিব্যকন্যা জন্ম নেয়। জন্মলগ্ন থেকেই কন্যা মহাদেবের ডানপায়ের ওপরে দাঁড়িয়ে শিবের ধ্যানে মগ্ন হন। স্বয়ম্ভু যথাসময়ে সমাধি থেকে ব্যুত্থিত হয়ে দেখলেন পিঙ্গল জটাধারী ধ্যানমগ্না লাবণ্যময়ী এই কন্যাকে। কঠোর তপস্যায় রত এইকন্যার পরিচয় জানতে পেরে মন্ত্রমূর্তি মহাদেব অত্যন্ত প্রীতি লাভ করেন। তিনি তাঁর এই কন্যার সাথে সবসময়ই অবস্থান করবেন অর্থাৎ 'নিত্যযুক্তা' থাকবেন বলে বর দিলেন। এইটুকু বর দিয়ে পিতার মন ভরল না বলে মহাদেব তাঁর কন্যার কোলে পুত্ররূপে অবস্থান করবেন বলে কথা দিলেন। তখন থেকেই পূণ্যতোয়া নর্মদা নদী হল মহাদেবের আনন্দবিলাস ক্ষেত্র। আজও একমাত্র নর্মদার জলেই মহাদেব অবস্থান করছেন চিন্ময়শক্তি সম্পন্ন শিবলিঙ্গ রূপে। কথায় আছে, নর্মদা কা কঙ্কর /হর কঙ্কর মে শঙ্কর। নর্মদায় অবগাহন করলে শিব সান্নিধ্য লাভ হয়। নর্মদা পরিক্রমা করলে সূক্ষ্মরূপে "মাহেশ্বর যোগ" নামক একটি যোগক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register