Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়
আজকের দিনে ১৮৫৬ সালে অবিভক্ত ভারতবর্ষে প্রথম বিধবা বিবাহটি হয়েছিল৷ এ তথ্য অনেকেরই অজানা৷ স্বাভাবিক, এটা কিইবা এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য? একে তো মেয়েমানুষ তায় আবার বিধবা! সংসারের এক কোণায় ভাঙ্গা আসবাবের মত পড়ে থাকা বাতিল৷ ধূলো জমা ধ্বংসাবশেষ৷ যমেরও অরুচি! রাক্ষুসে মেয়েমানুষ ছেলেটাকে গিলে খেল গো! কী আশ্চর্য না! একটা মানুষের মৃত্যুর জন্য আর একটা মানুষের ওপর দোষ চাপান কত সহজ! একবারও কেউ ভেবে দেখেছে যে মানুষটাকে দায়ী করা হচ্ছে সেই মানুষটার সবচেয়ে কাছের মানুষটাকে হারিয়েছে সে৷ তার সাথে চলে গেছে তার জীবনের রঙ, রস, গন্ধ, স্বপ্ন৷ শেষ হয়ে গেছে সংসার সংসার খেলা৷ আলোর আসা যাওয়া৷ বাতাসের আনাগোনা৷ চেনা মুখগুলো ক্রমশ দূরে সরে যায়৷ সমাজ সংসার আত্মীয় পরিজনহীন ছুঁড়ে দেয় কটুক্তি শ্লেষ ঘৃণা৷ মুমূর্ষু জীবন৷ অথচ বিপত্নীক স্বামীকে কখনও নিতে হয় না এই দায়৷ চাইলেই আজীবন রং নিয়ে বাঁচতে পারে৷ প্রজাপতি রামধনু কিংবা রম্ভা উর্বশী কোন কিছুই ত্যাগ করতে হয় না৷
কোন এ বৈপরীত্য? কেন এ অবিচার, অপমান, ছুঁড়ে দেওয়া কলঙ্ক! এ তো ভারতের আদি ইতিহাস নয়! পুরুষ কখন যেন নিজের অজান্তেই শারীরিক অনুকূলতার আঁচে পুরুষতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে ধীরে ধীরে সমাজের লাগাম হাতে নিয়েছে৷ এ কী সম্মানের? বঞ্চিত করেছে যারা তারাও কি অপরাধী নয়? নয় কি নিন্দার যোগ্য ? তবে কি প্রাচীন ভারতবর্ষ অনেক, অনেক বেশি আধুনিক ছিল আজকের ভারতবর্ষের চেয়ে? নারী পুরুষ নির্বিশেষে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন আপনারা৷ আমরা আদি বৈদিক যুগের থেকেও পিছিয়ে গেলাম! গার্গী, মৈত্রেয়ী নামগুলো শুনেছেন তো ?
বৈদিক যুগের আদি পর্বে নারীরা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই পুরুষের সঙ্গে সমানাধিকার ভোগ করেছে। পতঞ্জলি বা কাত্যায়ণের মতো প্রাচীণ ভারতীয় বৈয়াকরণের লেখা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আদি বৈদিক যুগে নারীরা শিক্ষিত ছিলেন। ঋক বেদের শ্লোক থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নারীরা পরিণত বয়সে বিবাহ করতেন এবং সম্ভবত স্বয়ম্বরা নামক প্রথায় নিজের স্বামী নির্বাচনের বা গান্ধর্ব বিবাহ নামক প্রথায় সহবাসের স্বাধীনতা তাদের ছিল। ঋক বেদ, উপনিষদের মতো আদি গ্রন্থে বহু প্রাজ্ঞ ও ভবিষ্যদ্রষ্টা নারীর উল্লেখ আছে, গার্গী ও মৈত্রেয়ী যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আমাদের এই ফেলে আসা আদি ভারতবর্ষের কথা ভাববেন একবার, ভেবে দেখবেন, ভেবে দেখবেন সেইসব পুরুষেরা যারা ক্ষমতা প্রয়োগ করে অন্যকে দমিয়ে রাখতে চান ৷ কুক্ষিগত করতে চান গোটা সমাজ৷ আর সেই মহিলারাও একবার গার্গীদের কথা মনে করুন, যারা নিজেদেরকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনকারী যন্ত্র হিসাবে দেখেন, ভোগবিলাসের সামগ্রী হিসাবে ভাবেন কিংবা অত্যাচারীত হওয়ার আাধার হিসাবে গণ্য করেল৷ আর কত নিজেদের ছোট করবেন, সম্মান কেউ এমনি এমনি দেয় না, আদায় করে নিতে হয়৷ গার্গী ও মৈত্রেয়ীদের মত নিজেকে বিদূষী করে তুলুন, প্রাজ্ঞ করে তুলুন৷
১৮৫৬ সালের আজকের দিনটায় শুধুই একটা ঘটনা ঘটেনি৷ দিনটা একটা মাইল স্টোন হয়ে উঠেছে৷ একটা যুগের শুরু, একটা অধ্যায়ের শুরু৷ বহু অসহায় নারী আলোর পথে হাঁটার ঠিকানা পেয়েছিল৷ বিদ্যাসাগরের বহুদিনের সংগ্রামের জয় সূচক এই দিন৷ সমাজের উত্থানের দিন৷ আলোয় ফেরার দিন৷ আর নেপথ্যে রয়ে গেলেন আরও এক নারী তিনি রাণী রাসমণি৷
অজ্ঞতার অন্ধকার দূর হোক, জ্ঞানের আলোয় চারিদক আলোকিত হোক৷
✍️ রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register