Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬)

রেকারিং ডেসিমাল

দিদার ছোট ছোট অনেক কৌটো বাউটা। তাতে নানা রকম সম্পত্তি রাখা থাকে। দাদু দিদার ঘরের দেয়ালে ছোট ছোট কাঠের তাক। তার ওপরে নিচে শিশি, বোতল, প্লাস্টিকের কৌটো, কাঠের বাক্স কি নেই?
দাদু ওষুধ খেতে বড্ড ভালো বাসেন। বলতে নেই অসুখবিসুখ খুব একটা করে না। নিয়ম মেনে খাওয়া দাওয়া করেন। সকালে উঠেই ছাদে পায়চারি। টবে সারি সারি গাছের পরিচর্যা। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফের ছাদে হাঁটার অভ্যাস। নব্বই পেরিয়েও একেবারে সিধা আছেন ছয় ফুট মানুষটি।
দিদার বরং নানা রকম কষ্ট। হাই প্রেসার। ব্লাড সুগার এত হাই যে দু বেলা ইন্সুলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে নিয়ে দুই পায়ে কালশিটে। কত বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তার আর হিসেব নেই। কিন্তু তাঁর এত বাছবিচার ও নেই। দিব্যি সবার সঙ্গে হইচই করেন। সব ঘরে টুকটুক করে হেঁটে যান। কে কি আড্ডা দিচ্ছে তাতে মিচকি হেসে ফোড়ন দিয়ে আসেন। আর সবকিছুই খান অল্পস্বল্প। সিঙারাই হোক, কি রাবড়ি, ব্লাড শুগার বলে বাদ যায়না কিছুই। ফিক করে হেসে বলেন, অসুখ ত চিরকাল। তাই বলে মইরা ত যাই নাই। দাদু নিজের ঘরে নিত্যকার খবরের কাগজখানা মুখস্থ করে ফেলেন আদ্যোপান্ত, তার পুরোনো ঢাউস সাদা কালো টিভিতে খবর শোনেন চশমা এঁটে। এক বড় নাতিই সাহস পায় অফিস থেকে ফিরে দাদুর পাশ ঘেঁষে খাটে শুয়ে গল্প করতে। আর সবাই গর্জন শুনে দূরে কেটে পড়ে।
সেদিন বিকেলে একটা লার্জ সাইজ চমচম খেয়ে থেকে দাদু ঘ্যানঘ্যান করে চলেছেন। --কি যে এনে দেয় এরা। বলি একটা হাল্কা ফল কিছু এনো। তোমার আহ্লাদী মেয়ে। নিজেও পেটুক। অন্যকেও খাইয়ে মারবে। কি রকম অম্বল অম্বল লাগছে। গ্যাস হয়েছে নির্ঘাৎ।
দিদা বিরক্ত হয়ে টিভির নব ঘুরিয়ে দ্যান। জোরে চলতে থাকে দূরদর্শন।
দাদু, ধুত্তোর বলে খাট থেকে উঠে পড়েন। দিদার দেয়াল তাকের কৌটোদের দেখতে দেখতে, একটা কৌটো খুলে তার ভিতর থেকে গুঁড়ো মত কি কৌটোর ডাকনায় ঢেলে মুখে দিয়েই চীৎকার। দৌড়ে বারান্দায় বেরিয়ে রান্নাঘরের পাশের বেসিনে থু থু করে কি সব ফেলা হতে থাকল। মুখ ধোয়া হতে থাকল এবং চীৎকার। সব ঘর থেকে সবাই ছুটে এসেছে ততক্ষণে। ---- কি হল? কি হল? --- দাদু কি খেয়েছ? --- বাবা কি মুখে দিলে, কি হয়েছে?
দাদু কুলকুচি করার ফাঁকে ফাঁকে চেঁচিয়ে চলেছেন। বিষ!! বিষ!
ইনো লেখা কৌটোয় বিশ্রী কি সব রাখা। পুচ! আমি বুঝি না ভেবেছ ? পুচ! সব কটাকে তাড়িয়ে দেব আজই!! পুচ!
আমায় মেরে বাড়ি দখল করার ষড়যন্ত্র । ঠিক টের পেয়েছি!! পুচ! ওরে বাবা রে!! কি হবে আমার!! পুচ!! কে কোথায় আছো শীগগির ডাক্তার ডাকো। আর আমায় বাঁচানো যাবে না, হায় হায়!! পুচ পুচ!!
অশোককাকু এগিয়ে আসে। -- দেখি দেখি, কি খেয়েছেন। এত ইনোর কৌটো।
-- সেই ভেবেই ত খেলাম। পুচ! গ্যাস হল ত। তার থেকেই সর্বনাশ। আর বাঁচব না --
-আরে এত গুঁড়ো সাবান মনে হচ্ছে। মা ?
দিদা এতক্ষণে মুখ খোলেন। -- এই হাড় জ্বালানি বুড়োর যন্ত্রণায় একটু টিভি দেখার ও জো নেই রে? অম্বল অম্বল করে সেই বিকেল থেকে মাথা খাচ্ছে। কেন আমার জিনিসপত্রতে হাত দিয়েছ শয়তান ? এই একটু সার্ফ চেয়ে রাখি বউমাদের থেকে কখনো কিছু রুমাল টুমাল ধুতে লাগে যদি ভেবে, সেইটার শ্রাদ্ধ করে সেরেছে। আমায় জিগেস করতে কি মুখে তালা লেগেছিল ? তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে তবু আক্কেল নেই রে।
অশোককাকু এইবারে সবটা বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি গামছা এনে মুখ মুছিয়ে ঘরে নিয়ে যান দাদুকে। গ্লাসে জল এনে খাওয়াতে খাওয়াতে বোঝান, কিছু হবে না বাবা। ভিতরে যায়নি বিশেষ কিছু। হাসপাতালে যেতে লাগবে না। আপনি একটু শুয়ে থাকুন দরকার হলে আমি ডাক্তারকে কল দেবো না হয়।
বাড়ির বাকি সব্বাই বসার ঘরে এক সাথে হেসে কুটিপাটি। ছোটরা মাটিতে গড়াগড়ি। বড়রা সোফায় পেট চেপে। দরজা কিন্তু আগেই বন্ধ রাখা হয়েছে। এই হাসি দাদু দেখতে পেলে আর রক্ষা নেই। এক্ষুনি বলবেন, সবকটাকে বের করে দেব বাড়ি থেকে, এত বড় আস্পদ্দা!! ।।

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register