Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

পাঁচমিশালীতে (নির্বাচিত কবিতা) কুণাল রায়

maro news
পাঁচমিশালীতে (নির্বাচিত কবিতা) কুণাল রায়

১। সৈকত

স্মৃতির ভেলায় ভেসে, পৌঁছে গেলাম সুদূর, সমুদ্রের দেশে, যেখানে পরে রয়েছে এক রাশ বালির চর, কত পদ চিহ্নের ভারই না বহন করেছে সে, সময়কে উপেক্ষা করে নীরবে রচনা করেছে, সম্মুখ সমুদ্রের ভাঙ্গা গড়ার কাহিনী!
আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি, কুলকুল শব্দে জানায় তাঁর অনবদ্য উপস্থিতি, প্রবল উচ্ছাসে স্পর্শ করছে সৈকতকে, অসংখ্য বারিবিন্দুতে রূপান্তরিত হচ্ছে তাঁর কায়া, আবার মিলেমিশে একতার ছন্দ বপন করে চলেছে নিরন্তর! অবিরাম এই সৃষ্টির খেলায়, প্রকাশ পাচ্ছে এক দর্প, এক ঔদ্ধত্য, এক আধিপত্য!
আমি একা বসে সেই সমুদ্রের সম্মুখে, স্মৃতিপটে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা বিষয়, শব্দমুখর শহর থেকে বহু দূরে, এক পরম শান্তি যেখানে বিরাজ করে! অস্তগামী সূর্যের এক অপরূপ সৌন্দর্য, মুগ্ধ করেছে বারবার, মুগ্ধ হয়েছে এই চেতনাস্রোত! তবু ফেরবার পালা যখন তার প্রহর গুনছে, ফেলে এলাম সেই জলস্রোত, ফেলে এলাম সেই উষ্ণ বালির উপস্থিতি, পরম সম্বল তখন এক মুঠো স্মৃতি, যা হয়ে উঠবে আগামীদিনের এক মাত্র অবলম্বন!!

২। পড়ন্ত বিকেল

দ্বিপ্রহরের সমাপ্তি ঘোষণা করে, তোমার নিস্তব্ধে আগমন। মৃদুমন্দ সমীরণ জাগায় এক শিহরণ। সূর্যদেব তাঁর পাটে যেতে বড় ব্যাকুল যে আজ! আমি মুগ্ধ, তৃপ্ত আজ তোমার উষ্ণ পরশে। সম্মুখে এক ক্ষুদ্র জলাশয়ে প্রতিবিম্ব স্পষ্ট আজ, যদিও স্মৃতির ভিড়ে মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় তাঁর সেই স্বচ্ছতা, সেই অকপটতা!
আজ ও সেই একই দিনের ভাগ, আজ তুমি আমার অতীত না বর্তমান, অনুধাবন করতে ব্যর্থ আমি! তবুও প্রকৃতি তাঁর অমোঘ নিয়মে, ঘোষণা করবে এক নিবিড়, নিস্তব্ধ পড়ন্ত বিকেল! আর আমি এক নিঃসঙ্গতাকে পরম যত্নে আপন করে--- চেয়ে থাকব সেই পড়ন্ত বিকেলের অভেদ্য নীল আকাশের দিকে। থাকবে না কোনো গ্লানি, থাকবে না কোনো অভিপ্রায়, থাকবে না কোনো অভিলাষ, থাকবে না কোনো অভিযোগ, থাকবে শুধু তোমার উপস্থিতি, চিরন্তন মোর মনের মণিকোঠায়!!

৩। ক্রীতদাস

সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল যবে, যবে মানুষ হয়ে উঠেছিল মানুষের শত্রু, তবে থেকেই এই নির্মম প্রথার বীজ বপন করা হয়, মস্তিষ্কে ও মননে!
কোন এক সময়ের কথা, এক ছোট্ট শিশু বিশ্বাস করেছিল আপন রক্তকে, অবুঝ মন বুঝতে পারেনি সেদিন এই বিশ্বাসের মূল্য! পার্থিব অর্থ লালসায়, নিয়ে যায় সে তাকে সদূর আরবে! চারিদিকে শুধু ধু ধু মরুভূমি, তারই মাঝে চলছে এই নির্মম ক্রীড়া! মানুষ যেখানে আজ পণ্য, খন্ডিত হয়েছে যার মর্যাদা, লুণ্ঠিত হয়েছে যার আত্মঅভিমান, চূর্ণিত হয়েছে যার দর্প, সেই ছোট্ট শিশুটি আজ ক্রীতদাস!
আপন শৈশব হারিয়ে যে পরের গোলাম আজ, নিপীড়ন ও ক্রন্দন যার চিরসাথী, মুক্তি যার কাছে এক অলীক স্বপ্ন মাত্র! বিধাতা বুঝি আজ নিশ্চুপ, এক অসহায় দর্শক মাত্র! তারই অমূল্য সৃষ্টি মানব, আজ এক অভিশাপ- যার বিষাক্ত নিঃশ্বাসে আকাশ বাতাস কুলষিত! কে হবে পরিত্রাতা? মানব না মহামানব! আজ অজানা- তবুও প্রভাতের প্রথম কিরণের ন্যায়, আশায় বুক বাঁধে ওই শিশুটির মন- মুছে যাবে সকল গ্লানি, মুছে যাবে সকল যন্ত্রনা, বিশ্বমাঝে মানবই হয়ে উঠবে মানবের পরম মিত্র!!

৪। সেলিব্রিটি

বাবা মায়ের একটি মাত্র সন্তান, নাম ঋজু, ঋজু চৌধুরী, ছাত্ৰ হিসাবে বেশ মেধাবী, খেলাধুলোয় বেশ পারদর্শী, তবুও যেন কাজ করে এক অতৃপ্তি, সবার সেরা, সবার উপরে থাকতেই হবে তাকে! প্রত্যাশার মূল বীজ বপন করা হয়, কারণ তার বাবা নয় মা- ঋজুকে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, হিমালয় সম পর্বতের চূড়ায়!
দিন অতিবাহিত হতে থাকে, প্রত্যাশার অনল একটু একটু করে গ্রাস করতে থাকে, বসার ঘরের রিক্ত ফ্রেম অপেক্ষায় ঋজুর ছবির, নিয়তি মৃদু হাস্যময় আজ! মেতেছে এক ভয়ঙ্কর খেলায়- দিবানিশি শুধু এক বক্তব্য, সেরার সেরা হতেই হবে তোমায়, "চয়ন তোমার নয়, চয়ন আমার"!
বিধস্ত ঋজু অবলম্বন করে অন্য পথ, এক অসৎ উপায় বেছে নেয় সে, কিন্তু বৃথা সেই প্রয়াস! সূর্য তখন তাঁর পাটে, শুনতে পায় তাঁর …

৫। সেই দিনগুলো

নীল আকাশের নীচে ছোট্ট এক গ্রাম, চারদিকে শুধু সবুজের সমারহ, দুই দিক দিয়ে একে বেঁকে গেছে, লাল মাটির রাস্তা! সে আমারই দেশ, ছিল এক সময়, বোধকরি আজও আছে, মনের এই মণিকোঠায়! সে যে মাটির টান, তাঁর সোঁদা গন্ধ আজও আসে আমার কাছে!
মনে পড়ে বৃষ্টি ভেজা সেই রাস্তা, এক সাথে স্কুলে যাওয়া, ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চে বসে তবলা বাজানো! শিক্ষক মহাশয়ের কাছে শাস্তি, ছিল বড়ই এক অস্বস্তি!
আজও সেই স্মৃতি বলে, বিকেলের রোদ মেখে, যেতাম যখন মাঠে, খেলতাম কোনও এক খেলা, অজান্তেই নেমে আসত গ্রামীন সন্ধ্যে, সাথে থাকত ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, বাড়ি বাড়ি বেজে উঠত শাঁখ- আর উলুধ্বনির মাঝে, নেমে আসত এক নিবিড় আলো ছায়ার খেলা!
হ্যারিকেনের আলোয় বুজে আসত চোখ দুটো, তবুও মায়ের বকুনির ভয়, মেনে নিতে হত সবই! ছিল না কোন অবকাশ, শুধু ছিল একরাশ অভিমান!
আজ আমি শহরে, বৃষ্টি আজ বহু দূরে। সভ্যতার বেড়াজাল ভেঙে, বারে বারে ছুটে যেতে চাই সেখানে! কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তি বেঁধেছে আমাকে, নিরুপায় করেছে আমার অস্তিত্ব! এক সত্য- বেঁধেছে সে কায়াকে, মনকে তো নয়! তাই বুঝি আজও ফিরে যেতে চাই, সেই মাটির কাছে, সেই মাটির সন্ধানে, সেই মাটিতে নিজেকে মিশিয়ে দিতে!!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register