Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

বর্ষায় প্রেম সংখ্যার গল্পে সোনালি

maro news
বর্ষায় প্রেম সংখ্যার গল্পে সোনালি

প্রেম রতন

“ পাওজী ম্যনে রাম রতন ধন পাও, পাও জী—” নাটমন্দিরে খচমচ আওয়াজ ওঠে খঞ্জনীতে। কত গলা এক সাথে মিলে যায়। সন্ধ্যা আরতি চলছে মদনমোহন আর প্যারী রাধারানীর। মনোমোহিনী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে । রাজাবাজার সায়েন্স কলেজি খাতায় তার নামছিল মোহনা । বাংলা পড়তে ভালবাসতেন মা । তিনিই নাম রেখেছিলেন । এম এসসির ফাইনাল পরীক্ষার আগেই মায়ের হার্ট এটাক হয়েছিল। আধ ঘন্টাও সময় পাওয়া যায়নি। বাবা কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন তারপর থেকে । পিসি জেঠারা মিলে মোহনার বিয়ে ঠিক করে ফেলল, বাবা বিশেষ কিছুই বললেন না । খালি মেয়ের মাথায় যাবার সময় হাত রেখে বললেন , সবাই তোমার ভাল থাকার জন্যে এত চেষ্টা করেছে , খেয়াল রেখো , যেন বাড়ির সুনাম নষ্ট না হয়। মোহনার বর মস্ত ব্যবসায়ী বাড়ির ছোট ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই গদিতে বসছে। তার ব্যবসাবুদ্ধির অনেক তারিফ বাড়িতে। শ্বশুর বহু বছর আগে মারা গেছেন । শ্বাশুড়িই ব্যবসা আর পরিবারের মাথা । বিয়ের পরেই মোহনাকে তিনি মনোমোহিনী বানিয়ে নিয়েছেন। এটা মারোয়াড়ী বাড়িতে নাকি মানানসই । ছোট বউ । কাজকর্ম বেশি না। খালি সব ঘরে ঝাড়ু লাগানো আর ডাস্টিং করার দায়িত্ব ওকে দিয়ে রেখেছেন শ্বাশুড়ি । আর মাথা থেকে ঘোমটা সরা বারন। বুদ্ধিমতী ব্যবসাদার , কলেজি বউ যাতে মাথায় না ওঠে সেইটা প্রথম থেকে খেয়াল রাখছেন আর কি। সায়েন্স পড়ার দরুন একটিই সম্মানের কাজ করতে পায় মোহনা । এত খাঁটি ঘি আর ক্ষীরের চাপে শ্বাশুড়িকে রোজ পাঁচ ইউনিট ইন্সুলিন নিতে হয় রাতের খাবার আগে । বিয়ের পর থেকে ছোটি বহু এই ইঞ্জেকশানটি দেবার অধিকার পেয়েছে। কম্পাউন্ডার মদনের ছুটি । মোহনার বর মানুষ খারাপ না । মায়ের বারন না থাকলে বউকে ইস্কুলে পড়াতে বা পিএইচডি করতে দিতে আপত্তি ও ছিলনা ।
মোহনা রাতে সিরিঞ্জে পাঁচের জায়গায় শিশির পুরো ইন্সুলিনটাই টেনে নেয়। চামড়ার তলায় দেবার বদলে পায়ের মোটা হয়ে ওঠা শিরায় এটুকু ইঞ্জেক্ট করায় তার অসুবিধে হবার কথা না । ইন্ট্রাভেনাস ব্লাড নেওয়া তার অভ্যেস ছিল । দরজা টেনে দিয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে যায় সে । আধ ঘণ্টা পরে কিচেনে গিয়ে মায়ের খাবার বেড়ে দিতে বলে । এরমধ্যে এত হাইডোজ ইন্সুলিনে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হয়ে শ্বাশুড়ি মুক্তি পেয়েছেন সে নিশ্চিত । প্রায় পঁচাশি , বাড়িতে খুব দু:খিত কেউ হবে না। আজ পুণ্যতিথি। নিচের মন্দিরে মাইক্রোফোনে গান ভেসে আসে , “ বস্তু অমোলক দি মেরে সৎ গুরু ---” মনে মনে কলেজের প্রফেসারদের প্রণাম জানায় মোহনা ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register