Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৮)

ইচ্ছামণি

পর্ব ২৮

“অফিস যাওয়ার আগে তোমার মার্কেটের গল্প শোনার ধৈর্য নেই। ভারি তো ইনভেস্টমেন্ট এক্সপার্ট- লাখের ভ্যাল্যু চল্লিশ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।”

“তোমার খোঁটার চোটে যদি সব বিক্রি করে না দিয়ে ধরে রাখি ধৈর্য্য ধরে, তাহলে ঠিকই ফেরৎ পাব। কিন্তু রিয়েল এস্টেটের দাম যা হচ্ছে, তা ক্রমশ আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। রিয়েল এস্টেট শেয়ারগুলোরই দাম যা বাড়ছে না। ওদিকে নিজের বাড়িতে নিজের অংশটুকু ক্লেম করেও তুমি থাকবে না। বাচ্চা নিয়ে কি শেষে ফুটপাথে দাঁড়াব?”

“ফুটপাথে রেখেছি তোমায়? রাজপ্রাসাদ দেখে বিয়ে করলেই পারতে।”

“সাধারণ বাড়ি দেখেই সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু জানতাম না আমাদের সেখানেও জায়গা হবে না। অথচ সেই বাড়ির ধার-দেনা, মেনটেইনেন্সসহ সব খরচা তোমায় দিতে হবে। আবার এদিকে ভাড়ার টাকাও গুণতে হবে।”

“ঐ তো, সব কথা ঐ এক দিকে টেনে আনবে। এখন পেন না পাওয়ার সাথে ওসবের সম্পর্ক কী?”

“আমার কথায় কান দিলে এসব কথা উঠত না। আমার শেয়ার নিয়ে কটাক্ষ করছ, ওদিকে তোমার জামাইবাবুর পাল্লায় পড়ে কী ছাতার চেইন বিজনেসে টাকা ঢাললে আমার অনিচ্ছা সত্বেও, সে তো ভোঁভা।”

“টাকাটা সমীরদা হজম করেন নি সেটা নিশ্চই বিশ্বাস কর।”

“কিন্তু তিনি এনশিওর করেছিলেন গ্লোবাল টাকা ফেরৎ দিক না দিক উনি নিজের দায়িত্বে নিচ্ছেন, নিজের দায়িত্বে দিয়ে দেবেন। অথচ ফোনে সামান্য খবর নিলেও রে-রে করে ওঠেন। অন্যের টাকা ডুবিয়ে দিয়ে এত গলার জোর পান কী করে?”

“যেমন তুমি জোর পাও এক লাখ কুড়ি হাজারের মূল্য চল্লিশ হাজারে নীচে নেমে যাওয়ার পরও।”

“আমি নিজের দায়িত্বে নিজের টাকা লাগিয়াছি। আগের টার্মিনালগুলো উঠে না গেলে আমার এত টাকা ফেঁসে যেত না। এঞ্জেল সিকিউরিটির সঙ্গে যখন কাজ শুরু করলাম তখন অলরেডি সব কেঁচে বসে আছে। আমি লাগিয়েছি আমি উদ্ধার করব। কোম্পানিগুলো একজ়িস্ট করছে। গ্লোবালের মতো লোকের টাকা মেরে কেটে পড়েনি। কুটুমবাড়ির ব্যাপার, তাই আমরা কিল হজম করছি। দেখবে যাও অন্য লিডাররা রীতিমতো গালমন্দ খাচ্ছে, মারের হুমকি খাচ্ছে।”

সকাল সাড়ে আটটা। তখনও ভাত হয়নি। অতীন ভালো করেই জানে। ঘোষণা করল, “আমায় খেতে দিয়ে দাও।”

“স্নান সারতে সারতে ভাত হয়ে যাবে। মাছটাও জাস্ট একটু বাকি। আগে স্নান করবে তো?”

“আগে খেয়ে পরে স্নান করব।”

“রোজ তো স্নান করে খাও।”

“পেট পরিস্কার হয়নি। না খেলে বেগ আসবে না। তোমার অসুবিধা থাকলে খেয়ে কাজ নেই। অত কৈফিয়ত দিতে পারব না।”

সোজা কথা স্নান-টান ইত্যাদির ফাঁকে রুমার রান্নার কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেই সময়টা তাকে দেওয়া যাবে না। তাই তখনই ভাত চাই। মাছটা সদ্য ভাজা হয়েছে। কালিয়ার মশলা কষা হচ্ছে। একদিকের গ্যাসে ভাত হতে হতে অন্যদিকে মাছটাও সচ্ছন্দে হয়ে যায়। তাছাড়া ফ্রীজের তরকারি গরম করা বাকি। কিন্তু ঐ যে, সময় দেওয়া চলবে না।

ফ্রীজে রাখা ঠান্ডা ভাত সাধারণত গরম ফ্যান ঢেলে গরম করে নেয়, টাটকা ভাতে মেশাতে চায় না রুমা। সেটা দুজনে গরম ভাতের সঙ্গে ভাগ করে খেয়ে নেয়। আজ তালেগোলে ভাতটা বার করা হয়নি। আজকের ভাত তখনও গ্যাস থেকে নামেনি। ঠান্ডা করকরে ভাতের সঙ্গে উচ্ছেভাজা, ফীজে রাখা গরম না করা তরকারি, টাটকা কিন্তু না সাঁতলানো ডাল, আর মাছ ভাজার গোঁজামিল দিয়ে খেয়ে বাথরুমে ঢুকল অতীন। রুমা ঝুঁকি না নিয়ে টিফিনবক্সটা টেবিলে না রেখে অতীনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। নইলে হয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাবে।

গুবলুকে ঘুম থেকে তোলার এতক্ষণে সময় পেয়েছে রুমা। মেয়েটাকে প্রচুর আদর করে কোলে বসিয়ে হামুর পুকুরে চুবিয়ে তবে ঘুম থেকে তুলতে হয়। খিটিমিটির জেরে ঠিকমতো আদর আসছে না। তবু কোলে বসিয়ে জাগানোর জন্য নাড়া দিয়ে চলল।

“নিজে ইনডিসিপ্লিনড । মেয়েটাকেও নষ্ট করছ ”। বাথরুম থেকে বেরিয়ে মন্তব্য করল অতীন।

গুবলুকে ওর পাওনা আদর আর হামু দিয়ে চলল রুমা। উত্তর দিল না। তার সমস্ত রান্না এতক্ষণে সারা হয়ে গেছে। এখন দুজনে একসাথে বসলে মোটেই দেরি হোত না। মেয়েকে বিছানায় ফেলে রেখে আর রান্নাঘরে দৌড়নোর মানে হয় না। এখন অতীন মেয়েকে তুলতে খাওয়াতে দেরি হচ্ছে বলেও কথা শোনাবে, আবার নিজের সময় মতো উপযুক্ত খোরাকের অভাবে পেট পরিস্কার হল না বলেও।

অতীন নিজের শার্ট ইস্ত্রী করতে বসেছে। শার্টের পর ট্রাউজার। “একদিন কি অফিস যাওয়ার আগে ইস্ত্রী করা জামাটাও এক্সপেক্ট করতে পারি না?” রুমা ভুলভাল ভাঁজ করে ফেলবে বলে ইস্ত্রী করা কাজটা কখনই বৌকে দিয়ে করায় না অতীন, বরং বৌয়ের গায়ে লাট খাওয়া পোষাক দেখলে খুলিয়ে ধোপদুরস্ত করে দেয়। এই অনুযোগের উত্তরও নীরবতা ছাড়া কিছু হতে পারে না। রুমা বাচ্চা কোলে কেবল দেখে যাচ্ছে। অতীন গায়ে বডি স্প্রে দিল। এটা সেটা করে দশ বারো মিনিট কেটে গেল। তারপর জামা প্যান্ট খুলে তোয়ালে পরে বাথরুমে। পেট পরিস্কার হয়নি। রুমা বাচ্চাটাকে ঠিক সময়ে খাইয়ে ঘুম পাড়াতে পারে না বলেই অতীনের রাতে শুতে দেরি হয়। আর রাতে দেরি হয় বলেই কোষ্ঠ অপরিস্কার থেকে যায়। মেয়ে যে বাবা-মা পাশে না শোওয়া পর্যন্ত কিছুতেই বিছানায় যাবে না, সেটা যদি জেনেও কেউ না জানে কী আর করা যাবে? শেষ পর্যন্ত অতীন গেল বেশ খানিকটা দেরি করেই; অথচ তার ঠিকমতো খাওয়া হল না। গুবলুকে খাওয়ানোর পঁয়তাল্লিশ মিনিটের অনুষ্ঠান শেষ করে রুমা যখন নিজে গরম ভাত, ডাল, তরকারি, মাছের রসা, চাটনি (এটা অবশ্য অতিনের প্রিয় নয়) নিয়ে বসল, তখন চোখে জল এল। অতীন ইচ্ছা করে অখাদ্য অরুচিকর খেয়ে সারা দিনের মতো বাইরে গেল।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register