Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে চার অক্ষর (পর্ব – ১০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে চার অক্ষর (পর্ব – ১০)

রাজপুত্রের গল্প

১০

বাকু মোড়লের প্রশ্ন যথেষ্ট সঙ্গত। সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে দিয়ে এখানে অনন্ত ছুটি কাটাবে বলে যে এসেছিল সে নিজেই এখন সাইড নিতে চাইছে ? এই মুহূর্তে “বাড়ির জন্য মনখারাপ?” বলা ছাড়া রাজপুত্রের আর কোন উপায় নেই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, যুক্তি হিসাবে তা জোরালো হলেও, সেটা একেবারে ডাঁহা মিথ্যে। “আসলে কি জানেন স্যার, আমি মিমাসে এসেছিলাম এই ভেবে যে কেউ কোথাও থাকবে না। আমিও ডিস্টার্ব হবো না, লোকেও আমাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবে না। কিন্তু এখানে তো আপনারা আছেন, ম-মানে আপনাদের-ই জায়গা এটা এখন। তাই কিছু যদি মনে না করেন, আমি বরং আপাতত বাড়ির দিকেই রওনা হই” রাজপুত্র খানিকটা মরিয়া হয়েই মুখ খুললো।
“উটকো মানুষ তোমাকে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু এখনো তোমার মিমাস ছাড়ার সময় আসেনি। তুমি আসন্ন দেরার জন্য প্রস্তুতি নাও। এই বিষয়ে তোমাকে পরে জানানো হবে”
রাজপুত্রের প্রচণ্ড ইচ্ছা হচ্ছিল বাকু মোড়লের মুখের ভেতরে বন্দুক ঢুকিয়ে ব্রাশ ফায়ার করবার। মনে মনে বাকু মোড়লকে গোটা তিরিশেকবার খুন করেও ফেললো রাজপুত্র। তরোয়াল বর্শা লেজার রকেট ডাঙোশ ইত্যাদি সব ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করে বিভিন্ন রকম ভাবে সে সব খুন । শেষ বারে তো বিনা কারণে এতদিন ধরে হাড় জ্বালানোর জন্য আরেকটু হলেই রাজপুত্রের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বাকু মোড়ল ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে আলমারির সাথে সাথে মোড়লের বাড়ি থেকে রাজপুত্র বেড়িয়ে রাস্তায় চলে এসেছে তাই বাকু মোড়লের ক্ষমা চাওয়াটা খুব তারিয়ে উপভোগ করবার সময় পেলোনা রাজপুত্র। ওইদিকে বাকুদের টিদিম মানে রান্না বান্না আর চাষ বাস শুরু হয়েছে। চাষ বলতে কালো রঙের ব্যাঙের ছাতা আর চিংড়ির মত দেখতে বিশাল বিশাল পোকা। খেতে খারাপ না। প্রথম প্রথম একটু আঁশটে গন্ধ লাগলেও রাজপুত্র সকাল বিকেল দিব্যি টেনে দিচ্ছে। রাজপুত্র বিশাল ডেকচি গুলোর দিকে তাকিয়ে একবার বিষ মেশানোর কথা ভেবেই নিজস্ব প্ল্যান নাকচ করে দিলো। দৈত্য গুলোর ওপর বিষ কাজ করবে কিনা বলা মুশকিল।
যথারীতি আবার বাকু স্টেডিয়ামে রাজপুত্রকে মধ্যমণি করে দেরা শুরু। সেই দু পিস বাকুর মধ্যে মন কষাকষি। সেই বাল্যখিল্য কারণ। এদের সব ঝামেলা গুলো ব্যক্তিগত স্তরে হবার জন্য রাজপুত্রের পক্ষে সহজ হয়েছে ঝামেলা মেটানোর। এরা যদি দল তৈরি করে ঝামেলা করতে শুরু করে, তাহলে সত্যিকারের চাপ ছিল। আজকের দুশোঊনোআশি আর তিনশোসাতষট্টির মধ্যে লেগেছে ব্যাঙের ছাতা তোলা নিয়ে। দুজনের প্রতি দুজনেরই কমপ্লেন কাজের সময় বেশি নেওয়া নিয়ে। সকালে বাকু মোড়লের ওপর রাগ থেকেই রাজপুত্র আজকে ঠিক করলো অন্য রাস্তায় হাঁটবে। অনেক ভালমানুষের পোঁ সাজা হয়েছে আর নয়। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো যতটা নাটকীয় করলে চোখে লাগে বেপরোয়া উঁচু গলায় রাজপুত্র ঠিক সেরকম ভাবে শুরু করলোঃ
“ দুশোঊনোআশিবাবু আর তিনশোসাতষট্টি বাবু, আপনাদের মতবিরোধ আজ অব্দি আমার শোনা সমস্ত দেরা –র থেকে আলাদা। মহান বাকু আপনারা। আর মহান বাকু বলেই এই মতবিরোধ একশো পারসেন্ট সঙ্গত। তিনশোসাতষট্টিবাবু, আপনার প্রতি দুশোঊনোআশিবাবুর বক্তব্য আপনি একটি ল্যাদোশরাম। দুশোঊনোআশিবাবু্, আপনার প্রতি তিনশোসাতষট্টি বাবুর ধারণা আপনি পাথরের থামের থেকেও নির্বোধ। আপনারা দুজনেই দুজনের প্রতি চূড়ান্ত অবমাননাকর ধারণা পোষণ করেন। বাকুজাতির স্বার্থে, আপনাদের শক্তি পরীক্ষা আজ করতেই হবে।”
রাজপুত্র একটু থেমেই চারপাশে দ্রুত তাকিয়ে নিলো। সবাই চুপ। ঠিক দু সেকেন্ডের মাথায় সব বাকুরা নিজেদের বাঁ পা দিয়ে একসাথে মাটিতে লাথি মারতে শুরু করে দিলো যার মানে করতে রাজপুত্রের কোন রকম অনুবাদ দরকার পড়লো না। মুখে একটা বিজয়ী সুলভ হাসি টেনে রাজপুত্র স্টেডিয়ামের ভিড় কাটিয়ে, একঝলক বাকু মোড়লের দিকে তাকালো। বাকু মোড়ল স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে। মোড়লের তিনখানা চোখ যেন রাজপুত্রের মাথার ভেতর অব্দি পড়ে ফেলতে চাইছে। রাজপুত্র পাত্তাই দিলো না সেই তাকানো।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register