Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬৪)

রেকারিং ডেসিমাল

  আলমারি গোছাতে গিয়ে পুরোনো একখানা ডায়েরি বেরিয়ে এল। দুহাজার তিন সাল একখানা মানুষ প্রমাণ কালীপ্রতিমার দাম আড়াইশ টাকা। পুরো পুজোর খরচ, আড়াই হাজার টাকা। গালে হাত দিয়ে ভাবি, যে কাণ্ড করা হয়েছিল, সে ত এখন পঁচিশ হাজারেও হবে না। ভাগ্যিস ডায়েরি লিখি। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে সব ছবির মত মনে পড়ে যায়। একটা দুপুরে খাবার পর গোল টেবিলে সামনের দিকের বারান্দায় বসে শ্বাশুড়ি মায়ের ঘ্যান ঘ্যান। ওরে, এত কিছু করে বেড়াস, আমার একটা কাজ করে দেবার ব্যবস্থা করতে পারিস ? তখন ছেলের বয়েস পাঁচ, মেয়ের সাত। দু নম্বর ফ্ল্যাট কিনে নতুন করে লটবহর টেনে এনে আবার সংসার সাজানো চলছে। একটা মস্ত আঠারো বাই বারো ঘরে একদিকে পড়ার টেবিল, খেলনার বাক্স ছোট্ট রঙিন মাদুর, হারমোনিয়াম দিয়ে বাচ্চাদের নিজস্ব জায়গা। একদিকে বড় খাট, ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল। তাও অনেক ফাঁকা জায়গা বাকি। সারা ঘরের তিন দিকের দেয়াল জুড়ে বড় বড় গ্রীল দেওয়া জানালা। আলো হাওয়া থই থই করে ঘরে, খাটে। জানালা দিয়ে চোখ ভাসালেই গুলমোহর আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে অজস্র পাতার নাচ আর ফুলের হুল্লোড়। কত রঙ। ছানারা দেখে দেখে খুব খুশী হয়ে থাকে। এ ঘরের মধ্যে লাগোয়া ছোট্ট বাথরুম। রাতে ছোটদের উঠে যেতে ভয় নেই। সব দিকে আরাম। পাশের লম্বা ঘরের কোলে আরেকটা বাথরুম, রান্নাঘর, আর দেয়ালে আয়নার সামনে স্ট্যান্ডে সাজানো কল আর বেসিন। পুচকে দিদির মাথা বেসিন ছাড়িয়ে মায়ের কাঁধ ছুঁয়ে ফেলেছে। সে অনেকটাই লম্বা ধাঁচের। ভাই এখনো বেসিনের সমান। মা কোলে করে ঘুম ঘুম চোখে দু জনকেই নামিয়ে এনে ব্রাশ হাতে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দ্যান সকালে। ইস্কুলের গাড়ি আসবে। দুই ছোট হাত এগিয়ে আসে, পেস্টু দাও। মনে করিয়ে দেয়া হয় রোজই। পেস্টু খেয়ে ফেলো না জেনো। রান্নাঘরের সামনে খাবার টেবিল। আরেকটু এগিয়ে বসার ছোট্ট জায়গা। দেয়ালের তাকে টেলিভিশন, নিচের তাকে গান শোনার স্টিরিও আর ক্যাসেটের ঘোরানো স্ট্যান্ড । এক কোনের উঁচু তাকে টেলিফোন। ছোটদের হাতের থেকে দূরে। এরই এক পাশে ভাঁজকরা কাঁচের দরজা, আর এক ফালি দক্ষিণের বারান্দা। তারপর, আরেকটা মাঝারি শোবার ঘর। সেখানে মাঝে সাঝে বাবা শোন বা অফিস থেকে ফিরে কাগজ টাগজ পড়েন। যদিও ঘুমের সময়, চার জন সেই বড় খাটেই পাশাপাশি। গান আর গল্প নইলে ত কারো ঘুমই হয় না। ছোট শোবার ঘরে, বেশিরভাগ সময়েই ঠাকুরদা ঠাকুরমা এসে থাকেন। আর অন্য সপ্তাহের শনি রবি বার দুই ছানাকে বগলদাবা করে বাবা মা দৌড়ান টালিগঞ্জ রসা রোডের বাড়িতে। এই ছোট গন্ডীর মানুষ কটিকে সামলেই ছোট মায়ের হেব্বি কনফিডেন্স। তাই শ্বাশুড়ি কাঁচুমাচু মুখ করতেই কলার তুলে ফেলল। হ্যাঁ,  হ্যাঁ , করে দেব। কি এমন কাজ শুনি। এই জন্যেই প্রাজ্ঞ লোকে বলে গেছে,  ফুলস গো ইন হোয়ের এনজেলস ফিয়ার। গাধা খুদিরাম আগেই লাফ দিয়ে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ পারব। যিনি বলছেন, তিনি ত জানেন কাজ এত ছেলেখেলা না। তাই চিন্তিত মুখেই বলেন, আমি যে মানত করে ছিলাম। বৌ বোঝে পুজো আচ্চার ব্যাপার। তা তার বাপের বাড়িতে কথায় কথায় মা মাসিদের অনেক অনেক পুজো করতে দেখছে সে অজ্ঞান বয়েস থেকে। সুতরাং উৎসাহিত হয়ে বলে, আরে বলই না। পিন পিন করে বলেন শ্বাশুড়ি, আসলে ছেলের বিয়েতে কত সম্বন্ধ দেখা হচ্ছিল, কিন্তু শেষ অব্ধি ফাইনাল হচ্ছিল না তো, তাই মানত করেছিলাম। আহা, তারপর ত আমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেছে সেই কবেই। এদ্দিন দাওনি কেন পুজো? তুই বুঝছিস না। এত কাণ্ড করতে কেউ সাহস পাবে না যে চট করে। ভেবলে যায় বউ। তবে কি দুর্গম কোন তীর্থে যাবে মানত করে বসে আছে মানুষটা? আচ্ছা ঝেড়ে কাশো তো। শ্বাশুড়ি বউয়ের সম্পর্কটা বড়ই, যাকে বলে, আনকনভেনশনাল , হয়ে দাঁড়িয়েছে তত দিনে। এক গেলাশের ইয়ারের মত কথাবার্তার ধরন। মনে হয় তার কারণ শ্বাশুড়ি বুঝে নিয়েছেন, যে বেয়াড়া বেয়াদব হলেও এই এক পিস তাঁর কপালে যা জুটেছে, তাকে বললে কোন কাজ, সে হনুমানের গন্ধমাদন বওয়ার মত সেটা সেরে দেবার চেষ্টা করবে। এবং বেশিরভাগ সময় পেরেও যাবে। তাই দু বার ঢোক গিলে মিহি স্বরেই বলেন, তোদের বাবা ত এমনিতেই পুজো আচ্চায় বিশ্বাস করে না। আর মূর্তি এনে পুজো করা, সে কত ঝামেলা। কে করে দেবে। দেখছিস ত বাবু অপিস করেই ক্লান্ত। এইসব বললে গলা টিপে দেবে এক্কেরে। মায়ের বাবু, খুবই আদরের ছেলে। কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু বউয়ের ত সে বর। কাজেই তাকে জবরদস্তি জ্বালাতন করাটা গিন্নী জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন। সেই সাহসে ভর করেই উদার আশ্বাস দিয়ে ফেলল দুই খোকাখুকুর মা। কিচ্ছু চিন্তা কোর না। বাড়িতে মূর্তি এনে কালি পূজা, এই তো?  ঠিক হয়ে যাবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register