Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

বীণাপানি

এবছর সরস্বতীপূজোর পঞ্চমী বেলা ন'টায় ছেড়ে যাবে। তারমধ্যে পূজোয় বসতেই হবে। এদিকে ভোরথেকেই পাড়ায় হৈ হৈ কান্ড শুরু হয়েছে। সানু, বনী, বেলা সকালে মন্ডপে এসে দেখে সরস্বতীর প্রতিমা মুখ থুবরে পড়ে ভেঙে আছে। ওরাতো গভীর রাত পর্যন্ত জেগে মন্ডপ সাজিয়ে, আলপনা দিয়ে, ঠাকুর বসিয়ে রেখে ঘুমোতে গেছে। কিন্তু ঠাকুরের মূর্তিটা পড়ে গেল কিভাবে? কখন ভাঙল ? কে প্রথমে দেখেছে? -সকাল থেকে এই নিয়ে তুমুল জল্পনা চলছে। পুচুমাসি তখন বুদ্ধি করে বলে পুরুতমশাই আসার আগে তোরা একবার ফুলুপিসির কাছে যা। পিসিকে গিয়ে বুঝিয়ে বল যে পিসির মেয়ে বীণাকে আজ তোরা সরস্বতী সাজিয়ে পূজো করবি। পিসি নিশ্চয়ই আপত্তি করবেনা। কারণ পিসিতো গতবছর বীণাকে জগদ্ধাত্রীপূজোতে "কুমারী" করেছিল। মেয়েটা একেবারে দুর্গাপ্রতিমার মতো দেখতে। ওকে সরস্বতী সাজালে খুব সুন্দর লাগবে। তোরা যা একবার। ভগবানের কি লীলা দেখো! যে মেয়ে এত সুন্দর দেখতে তাকেই কিনা বোবা করে রাখল! তবে মেয়েটা খুবই শান্তশিষ্ট। আর আজকাল ওকে স্পেশাল চাইল্ড কেয়ার স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। তাতে কিন্তু উপকার হয়েছে। ও এখন সবার কথা বুঝতে পারে। নিজেও ইশারায় সব বুঝিয়ে দিতে শিখেছে। ওদের যিনি স্পেশাল এডুকেটর ম্যাডাম আছেন তিনি খুব ভালো। বীণাকে খুব ভালবাসেন। ম্যাডাম বলেছেন, বীণার তো মাত্র আট বছর হল। ও যেভাবে কথা বলতে চেষ্টা করছে তাতে ভবিষ্যতে হয়তো কোনোদিন হঠাৎই বীণা কথা বলতেও পারে। ওদের তো আধুনিক পদ্ধতিতে স্পিচথেরাপি করানো হচ্ছে। আর এতে নাকি অনেক বাচ্চাই ধীরে ধীরে একটু একটু করে নিজের কথা ঠিকভাবে বলতে পারছে। জিভের জড়তা কাটাতে একটু সময় তো লাগবেই। ম্যাডামের ভরসা দেয়া কথাগুলো পিসির মনে আশা জাগিয়েছে। তাইতো পিসি ওকে রোজ জাতীয় সংগীত শোনায়। ঠাকুরের স্তোত্র পাঠ করে শোনায়। পিসির তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। তবে ওই আরকি ভগবান ওকে ছোটবেলা থেকেই শব্দজব্দ করে রেখেছে। পুচুমাসি তাড়া দেয়, তোরা তাড়াতাড়ি যা। সাতটা নাগাদ পুরুতমশাই চলে আসবেন। তার আগে ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে বসাতে হবে তো। পুচুমাসির কথামতো বেলা আর সানু ছুটল ফুলুপিসির কাছে। ওরা কাল মাঝরাত পর্যন্ত প্যান্ডেল সাজিয়েছে।পুরো মন্ডপ জুড়ে আলপনা দিয়েছে। তারপর সরস্বতীকে সুন্দর করে বসিয়ে দিয়েছে। সব কিছু গুছিয়ে রেখে ঘরে গিয়ে একটু ঘুমিয়েছে। সকালদি', ছোটমামা আর দিলু তখনও ছিল প্যান্ডেলে। ওদের তিনজনের সকাল পর্যন্ত থাকার কথা ছিল। ওরা কি তবে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল? নাকি বাড়িতে চলে গিয়েছিল? তা না হলে সরস্বতীর মূর্তিটা ওইভাবে মুখ থুবরে পড়েগেল আর কেউ দেখতে পেলনা কেন? এখন আবার ঠাকুর কিনে এনে পূজো করতে হলে এবছর আর সরস্বতী পূজো হবেনা। তাইতো ফুলুপিসির কাছে ছুটতে হচ্ছে। তবে পুচুমাসির আইডিয়াটা হেব্বি। মাসি সবাইকে বলে দিয়েছে, "আমাদের এবছর মানুষ ঠাকুরের পূজো হবে। তাই ঠাকুর দেখতে হলে পঞ্চমী থাকতে থাকতেই আসতে হবে। পরে আর দেখতে পাবে না।" এখন বীণাকে বীণাপানি সাজিয়ে আনতে যা দেরি।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register