Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত

বাউল রাজা

দ্বিতীয় খন্ড ( একত্রিংশত্তম পর্ব )

গুরুপদবাবার ঘরটা যেন একটা পূর্ণ মৌভান্ডার। ঘর বারান্দা মানুষে ভরে আছে। বিচিত্র তাদের পোষাক আসাক, বিচিত্র তাদের সাজসজ্জা। আদুল গায়ে লুঙ্গি পরিহিত, কাঁধে গামছা মানুষও যেমন আছেন, সেরকম ধুতি পাঞ্জাবী পরা মানুষেরাও আছেন। বলা বাহুল্য, পীতাম্বর ও রক্তাম্বর ধারী মানুষেরা তো আছেনই। বারান্দা উজিয়ে ঘরের ডানদিকের যে দোর, সে দোরের ভেতর সোনাবাবার ঘরেও জনা আট দশেক মানুষ চাটাই পেতে বসে আছেন। সাজসজ্জায় বিভিন্নতা থাকলেও একটা বিষয়ে সবাইকেই একইরকম দেখলাম। সেটি হলো, যে যেভাবেই বসে থাকুন না কেন, উবু হয়ে বা আসন পেতে, কেউ বা বজ্রাসনে, তবে সবাই মোটামুটি একটা বৃত্তকে ঘিরে বসে আছেন, আর বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে একটা ধূমায়িত কলকে। ঘর বারান্দা ঘন কুয়াশার মতো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বারান্দায় বসে একজন গ্রাম্য মানুষ গানটা গাইছিলেন। বুঝলাম, এদের জন্যই সোনাবাবা চাতালে কড়াই চাপিয়েছেন আর এদের জন্যই সকালে ব্যাগ ভরা চাল, ডাল, আনাজ বয়ে এনেছেন বাজার থেকে।

যে গানের টানে চাতাল থেকে বারান্দায় ছুটে এলাম, সে গানটির কথা পল্লীগীতির মতো হলেও সুরে অদ্ভুত এক বাউলিয়া টান। গান গাওয়া শেষ করে ভদ্রলোক কাঁধের গামছা দিয়ে মুখ মুছে হাত বাড়ালেন, আর সাথে সাথেই সেই হাতে বৃত্ত ভেঙে কলকিটা একজন বাড়িয়ে ধরলেন। বারান্দা ছেড়ে আমি গুরুপদবাবার ঘরে ঢুকলাম, সেখানেও অন্তত জনা পনেরো মানুষ, গুরুপদবাবার আসন ঘিরে গোল হয়ে বসে আছেন। তাদের মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন সেই হিমালয়ের সাধুবাবারা। সেই ঘর ছেড়ে সোনাবাবার ঘরে উঁকি দিলাম -- আচ্ছা, আমি কি কাউকে খুঁজছি! আমি, মানে আমার মন কি... গানটার ভেতর নদী শব্দটি কি আমার অবচেতনে কোনোভাবে নাড়া দিয়ে গেলো? কিন্তু যতই হোক, নদীকে খুঁজতে তো আমি ঘরে ঘরে উঁকি দেবো না। তাহলে কাকে খুঁজছি আমি!

আসার সময় বাউলনির সাথে দেখা হয় নি। দেখা হয়নি, নাকি সে ইচ্ছে করেই দেখা করেনি? ধ্রুবদার কথাগুলো নিশ্চয়ই ওদের অভিমানে ধাক্কা দিয়েছে। কানাইদাও যে বলেছিলেন, তিনি পেছন পেছনেই আসছেন, কই? এখনও পর্যন্ত তো কানাইদাও এলেন না। এবারে ধ্রুবদার ওপর সত্যিই রাগ হচ্ছে। এভাবে কথাটা ধ্রুবদা কি ইচ্ছে করেই বললেন, না কি ওর গুরুজনসুলভ চরিত্রের প্রতিফলন এটা? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে আশ্রমের ঘর ছেড়ে পাদপদ্মের চাতাল - বামদেবের সমাধিমন্দির, পিটুলিতলার বাঁধানো চাতাল, শ্মশান পেরিয়ে নদীর ধারে এসে পৌঁছে গেছি খেয়ালই করিনি। ঘোর ভাঙলো এক নারীকন্ঠের উচ্চারণে। ---" কেঁদে কেঁদে যে আমার সইয়ের দু-চোকে রক্ত জমে গেলো গো ঠাকুর ! শিগগির যাও, মানিনীর মান ভেইঙে দে আসো গে। " কে? কে বললো কথাগুলো? চারদিকে খুঁজতে যেতেই ফের একটা হাসির শব্দ আর ছলাৎ করে একটা ঢেউ এসে পাড়ে আছড়ে পড়লো।

( চলবে )

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register