Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি -তে আবদুল বাতেন

maro news
গল্পেরা জোনাকি -তে আবদুল বাতেন

চাপাও ওস্তাদ, চাপাও

কে একজন আসাদের হাতঘড়িটা খুব দ্রুত খুলে নেয়। ওমিগা ব্রান্ডের ঘড়িটা তাঁর খুব প্রিয়, সুইডেন থেকে বন্ধু মিঠুর পাঠানো। সে প্রাণপণে চোখ খোলার চেষ্টা করে।কিন্তু কোনভাবে খুলতে পারেনা।কে যেন তাঁর দু’চোখের পাতা সেলাই করে দিয়েছে। কিংবা তাঁর দু’চোখে আস্ত যুগল পাহাড় বসিয়ে রেখেছে।ঘড়িটা পকেটে রেখে লোকটা আসাদের ওয়েডিং রিংটা খোলার জন্য উঠে পড়ে লাগে।একবার ডানে আরেকবার বায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে টেনেটুনে বের করার নানা কসরত চালিয়ে যায়।আসাদের ভেতরটা ভেঙেচুরে যেতে থাকে।তাঁর শিরা উপশিরাগুলো পটাপট ছিঁড়তে থাকে।সে লোকটার পায়ে পড়ে বলতে চায় -প্লিজ, ওটা নেবেন না।ওটা আমার ওয়েডিং রিং, আমার বেহেস্তবাসী শ্বাশুড়িমার দেয়া প্রথম উপহার। কিন্তু তাঁর গলা দিয়ে কোন অথপূর্ণ শব্দ বের হয়না। শুধু সামান্য অস্পষ্ট চিনচিন আওয়াজ ওঠে, পুকুরজলের বুদ্বুদ যেনবা।

আসাদের মাথার ক্ষতস্থান থেকে গলগল করে রক্ত ঝরে। থুতনিটা তাঁর মুখের সাথে ঝুঁলে আছে, মনে হয়। জিভে বড় নোনতা নোনতা ঠেকে।দাঁতের অস্তিত্ব টের পায়না, সে।ডান পাটা ভয়ানক কনকন করে, কিন্তু নড়াতে পারেনা।একসময় খেয়াল করে, হাঁটু থেকে তাঁর বাঁ পাটা উধাও! সত্যি কি নেই? কেন ওটার অস্তিত্ব সে অনুভব করছেনা? দুমড়েমুচড়ে থাকা আসাদকে ঘিরে কয়েকটা মাছি উড়ে।ভনভন শব্দ হয়।উড়ে উড়ে একটা তাঁর নাকে বসে।নাকটা শিরশির করে চুলকায়।মাছিটাকে তাঁর লোকটার মত বদমাস বদমাস লাগে। লাল কি কালো পিঁপড়া তাঁর হাত বেয়ে উঠে। সে হাত নড়াতে চড়াতে পারেনা। হাত সরাবার সামান্য শক্তিও তাঁর আর অবশিষ্ট নেই।

সে নিশ্চয় এখনো বেঁচে আছে। ধীর শ্বাসপ্রশ্বাসে তাঁর বুক উঠানামা করছে।যে বুকে আসাদ তাঁর মা, মেয়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে সযতনে রেখেছে। মানুষ মরে গেলে কি এতসব বুঝতে পারে? নিশ্চয় পারেনা।তাঁদের কোচটা ঠিকমত চলছিল, রাতের আঁধার চিরেফেঁড়ে।ইসলামি ওয়াজ ও সংগীতের ছোঁয়ায় ঝিমাচ্ছিল, নাইট কোচের সবাই। কায্বা নামায আদায় করছিল, মুরব্বীরা কেউ কেউ।আতরের সুঘ্রাণে ভেসে যাচ্ছিল আশেপাশের সিটসমূহ।আবার বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেষে লতাজীর স্নিগ্ধ সুরের মূর্ছনায় সব ভিজে একাকার। অফিসের জরুরি কাজে দিনাজপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছিল, আসাদ।অনেকক্ষণ ধরে পিছনের কোচটা হর্ণ চাপিয়ে যাচ্ছিল, একনাগাড়ে।দুম করে সেটা তাঁদেরকে ওভার টেক করতে গেলে যাত্রীদের কেউ কেউ গা ঝারা দিয়ে ওঠে। সমস্বরে বাহাদুরি ফলাতে শুরু করে -চাপাও ওস্তাদ, চাপাও। ড্রাইভার সেই যে চাপাল, আসাদের আর কিছু মনে নেই।একটু একটু করে তাঁর কানে কোলাহল জড়ো হতে থাকে।কান্নাকাটির শব্দ তাঁকে আস্তে আস্তে জাগিয়ে তোলে। সে এখন তাঁর কাছাকাছি এ্যামবুলেন্সের সাইরেনে শিহরিত হয়। ভারী ভারী পায়ের আওয়াজে ভীষণ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register