Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ২৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ২৩)

রেকারিং ডেসিমাল

জাঁদরেল গিন্নী শ্বাশুড়ি হন যখন বউমাদের ঝালাপালা করে রাখেন শাসনের চোটে। কিন্তু সেই মানুষই ঠাকুমা হয়ে দিদিশাশুড়ি পোস্ট পেলে আল্লাদের মানুষ হয়ে ওঠেন। দিদার দেয়া নানান আদরের ডাক আসে। সোনা বউ। কেশবতী রাজকন্যা। সাজগোজ করে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে দাদু দিদার ঘরে ঢুকে সাজ দেখিয়ে আসাটা কম্পালসারি। আবার মাঝে মাঝে সাজ পাল্টাতেও হয়। -- এই শাড়ির সাথে এই রকম খোঁপা ক্যান। লম্বা বেণী ত মানাইত ভালো।
চুল খুলে বেণী করে নতুন বউ। ভারি মজা লাগে তার। কেমন ডাক দ্যান দিদা বুড়ো বরকে।
-- এই দ্যাখো, কেমন ? সাজখান দেখো দিখি? দাদু হো হো করে হাসেন।
আরে, এত পুতুল একটা। বাহ খাসা সাজ হয়েছে। আজ আমার নাতিবাবু কুপোকাত। এ ঘরে সাত খুন মাপ। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। রাতে পেটের গন্ডগোল। অনেক বার বাথরুমে যাওয়ার আওয়াজ পেয়েছেন দিদা। চা করতে দেরি হওয়ার বকুনি খাওয়া শুনে জানালা দিয়ে ডাক আসে। এই সোনা এই ঘরে আয় দেখি। আমি কই আমার শরীর খারাপ লাগে তাই আমার কাসে আসে। বকুনি একটু কম খাবে তাইলে। রাতে কত বার বাথরুম দৌড়াইসো ? বরেরে কও ওষুধ আনে জ্যান। সুরুৎ করে দিদার খাটে গিয়ে বসে নতুন বউ। পালানোর প্রকৃষ্ট পদ্ধতি। কত ছোটবেলার গল্প বলেন সাদা চুলে সিঁদুর পরা মানুষটি। কুলীন প্রথার গল্পই পড়েছে বইপত্রে নতুন বউ। এই প্রথম চোখের সামনে জলজ্যান্ত দেখে এই প্রথার শিকার একজন নারীকে। একটা ছোট্ট মেয়ে কোনো দিন দেখেনি জানেনা কে তার বাবা। কেউ একজন এসে এক রাত কাটিয়ে গেছিল কুলীনের হাতে সম্প্রদান করে দেওয়া তার মায়ের সাথে। মায়ের বাপের বংশের ভারি নাকি পুণ্য হয়েছিল তাতে। মা বাপের বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। সেখানেই সন্তান হয়েছে। সেই দৌহিত্রী মানুষ হয়েছেন দাদূর ঘরে, মামা বরিশালের জনপ্রিয় চিকিৎসক কাশী ডাক্তারের দ্বায়িত্বে। মামাবাড়ির দয়ায় বড় হয়ে ওঠা মেয়ে অতি ছোট বেলা থেকে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির ফ্যান গালতে শিখেছে। রান্নাবান্না কাজকর্ম সবেতেই হাত না লাগালে মামিমাদের কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যাবেনা এটা নিজস্ব বুদ্ধির ধারে বুঝে উঠেছে বলেই কর্মঠ হয়ে উঠেছে চোখকান খোলা রেখে। তাদের গঞ্জের জমিদার চক্রবর্তী মশাইয়ের বাড়িতে স্বাধীনতা সংগ্রামের মিটিং হয়। দেখতে যায় এরা। চক্রবর্তী মশাইয়ের মা বড় দয়ালু মানুষ। তিনি দুপুরে সারা পাড়া ঘুরে সবার খাওয়া হয়েছে দেখে তবে নিজে খেতে যান। কারো অভাব থাকলে তাঁর বাড়ি থেকে সিধে আসে। এক শীতে আগুন লেগে কাশী ডাক্তার আর চারপাশের সব বাঁশের বেড়া দেওয়া বাড়ি পুড়ে গেছিল। চক্রবর্তী বাড়ি থেকে শীতবস্ত্র, কম্বল সব এসেছিল এই পরিবারগুলোতে। অনেকদূরে দৃষ্টি ভাসিয়ে গল্প বলেন দিদা। কত কত গল্প।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register