Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে আনোয়ার রশীদ সাগর (গুচ্ছ কবিতা)

maro news
কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে আনোয়ার রশীদ সাগর (গুচ্ছ কবিতা)

১। নীরবতা তোমার

মলাটবদ্ধ আঁচলে নিজেকে লুকিয়ে রেখে রেখে হারিয়েছো স্রোতধারা। অথচ শুকনো ভূমিতে সাঁতরিয়ে সাঁতরিয়ে মরুচর দিশেহারা। নদী আমার নদী, ঘুমঘোরে চলে চলে রক্তস্নাত আমি জংধরা নৌকাটায় বায় অভিমানে অভিযোগে কেঁপে কেঁপে স্মৃতির জানালায় সনাতনী আঁকি এঁকে এঁকে ভুলে যাই সভ্যতা, নীরবেই বুকের পৃষ্টাতে কষ্টগুলো ঢেকে রাখি। মেঘ জমে, জমে-জমে বৃষ্টি ঢালে নদীর বুকে বিষণ্নতার জলে সে জল-কী জল থাকে!- থাকে না,আটকিয়ে যায় মলাটবদ্ধ আঁচলে। ধূলোমাখা রাতে পাপোষ পেড়ে পেড়ে আঁধারে আঁধারে হাঁটি সিন্দুকভরা হাসি জেগে ওঠে,মনে হয় এ প্রেম বুঝিইবা খাটি।

২। আঁধার-আলো

আঁধার কেন ভালোবাসি জানো নিকষরাতে তুমি আলো জ্বেলে আসো নিঃশব্দে নিরালায় নিঃসংকোচে নামো নীরব নদীর জলে জলকেলিতে নিঃসঙ্গতা ভেঙে স্রোতস্বিনী হও নিখুঁত প্রেমের জ্যোৎস্না জলে, জ্বলে জ্বলে জলাবর্ত তুমি কামনার ক্ষুধা মিটিয়ে সাইরেন বাজাও। আলোছায়ায় আবছায়া আলাভোলায় ভুলিয়ে ভাটিয়ালী গাও চেনা জানা জঙ্গলে নামিয়ে দীর্ঘায়িত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফেলে যুদ্ধ করো বেখেয়ালে খাটিবাংলায়। নেচে নেচে নাচিয়ে তোলো নতুন নতুন সুরে বনফুলে ভাঁজখোলা ভাঁজে মেঘের গর্জনে ককিয়ে ককিয়ে ভাসো মেঘের ভেলায়। আঁধার কেন ভালোবাসি জানো কোলাহলহীন কোলে কলসভরা জল তুলে তুমি আনন্দালো জ্বেলে-জ্বেলে, জ্বলো জঙ্গার জলে।

৩। স্বচ্ছজল

যখন ডান-ডানার উপর হেলান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলো,'জানো- অনেক ভালোবাসি তোমাকে' তখন মধ্যবয়সী গাছের হুলুদ পাতাগুলো ঝরঝর করে ঝরে পড়ে ঝরে পড়ে জমাটবদ্ধ আবেগ থেকে স্মৃতির জানালা, চোখ রাখি দূরবিরহের তপ্তরোদে, পুড়ে যায় খাখা; এত কাছে তুমি-শরীরের স্পর্শে একটুও জেগে ওঠে না বয়স্ক আবেগ। এটা কী প্রেম -প্রিয়তমা, নাকি তোমার মায়াবী মমতার ছায়া; আমি বুঝতে পারি না-বুঝতে পারি না। যখন শাড়ির আঁচল ছুঁয়ে পাশাপাশি হাঁটি কিশোররাতে তোমাকে দিই বিদায় তখন মনে হয় কী এমন হয়েছে আমাদের, থাকতে পারি না রাতভর; বলতে পারি না সারা-জীবনের ফেলে আসা কথামালা, তাহলে কী আমরা কোনো বিধিনিষেধে বাঁধা পড়ে গুমড়িয়ে গুমড়িয়ে কেঁদে উঠি রাতশেষে! আড়ালে-আবডালেও কী বলতে পারবো না সে কথা?- যেখানে জেলেরা ভিজে ভিজে নদী থেকে উঠে এসে তার জাল থেকে নিংড়িয়ে মাছের স্মৃতিগুলো ফেলে দেয় মাটিতে, ছটফট করে দাপানো মাছগুলো কুড়িয়ে নেয় কুড়নিরা আনন্দে- আমরা কী আর কোনোদিন সে আনন্দ ভোগ করতে পারবো না, পারবো না মাছহীন-পতঙ্গহীন স্বচ্ছপ্রাণের জল হতে!

৪। আজো খুঁজি

আমি আজো সে রাত খুঁজি যেখানে জ্যোৎস্না ছিল গাছের ছায়ায় লুকোচুরি ছিল ছিল আধো ভয় আধো সাহসের অনুভূতি যেখানে ছিল হঠাৎ হঠাৎ পাখা ঝাপটানোর শব্দ নীরব অনুভূতির কেঁপে কেঁপে ওঠা তরঙ্গ। আমি আজো সে দুপুর খুঁজি যেখানে বাগান বাড়ির কোলাহল ছিল আড়ালে আবডালে লুকোচুরি ছিল ছিল আবেগের চোখাচোখি-আলিঙ্গণ যেখানে ছিল ছায়া সুনিবিড় শান্তির অন্বেষণ চুপিসারে পালিয়ে পালিয়ে ধরাধরি। আমি আজো খুঁজি সে মাঠ যেখানে ঝোঁপের আড়াল ছিল সবুজ ফসলের বিছানা ছিল ছিল চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে আকাশের নীল দেখা দৃশ্য যেখানে ছিল দুটি পাখির মিলনমেলার আয়োজন দু'জনে মিশে যাওয়ার অবাধ সুযোগ।

৫। জেলখানা

নিভৃতে দাঁড়িয়ে বৃত্ত আঁকতে আঁকতে এঁকে ফেলি জীবনজলের উল্লাস এঁকে ফেলি জলসাঁতারের মহাচিহ্ণ এ এক নষ্ট পথে হাঁটা,হাঁটতে হাঁটতে পা পিছলে পড়ার ভয়ে আঁকতে থাকি লম্ব ; আঁকতে আঁকতে এঁকে ফেলি ত্রিভুজ। তখন মনে হয় এঁকেছি মাতৃভূমির ছবি- শুধু আঁকতে থাকি ত্রিভুজ পাতার পর পাতা। এক সময় দুটো ত্রিভুজ মিলে হয়ে যায় সমান্তরাল বা রম্বস। আমি ভয় পাই, ভয় পেতে পেতে রেখাটি কাটতে গিয়ে হয়ে যায় কর্ণ। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি- আমি আর এগুতে পারছি না, দৌড়াচ্ছি- দৌড়াতে দৌড়াতে হারিয়ে যাচ্ছি আমার মাতৃভূমি, আমার চেতনা, আমার বোধ থেকে যোজন-যোজন দূরে। আমি এখন অন্ধকারে অন্ধদূয়ারের নাগরিক- পথ হারিয়ে চলছি শাসকের পথে, শোষণের পথে, অত্যাচারের পক্ষে আমার খুঁটিময় অবস্থান! ছিঃছিঃ নিভৃতে দাঁড়িয়ে আঁকতে পারি না ত্রিভূজ। বলতে পারি না কথা,নাচতে পারি না মুক্তমঞ্চে। আমার অবস্থান শাসকের জেলখানা।

৬। রাতের কোরিওগ্রাফি

রাতের অভিমানী মুখ বড়ই অন্ধকার, স্বপ্নেরা উড়ে উড়ে হারিয়ে যায় নীরব বারান্দার করিডোরে। স্মৃতির পাখামেলে আত্মহত্যা করে উঁইপোঁকা। পাথর হৃদয় নিভৃতে নির্বোধ নদীর কাছে সাঁতার কাটে জীবনভর। বসন্তের অভিমানী চাঁদ কংক্রিটের দরজায় উঁকি দেয় স্বাধীনতাহীন। নিস্প্রাণ নীলিমায় নির্বিচারে নৃত্য করে আঁধারের রোমাঞ্চকর বনে। মেঘের আড়ালের নগ্ন নৃত্য নিমিষেই ক্লান্ত হয় সৃজনের ঘাটে। রাত শুধু জেগে থাকে না,জাগিয়ে রাখে লালঠৌঁটের অমানিশায়। জলাধারে জল ভাসে আকাশের আঁকা আদি ও নান্দনিক কোরিওগ্রাফি।

৭| মায়াজালে

বসন্ত ছায়ায় ঘ্রাণমূখর লতাগুল্ম জড়িয়ে রাখে মায়ায়-মায়ায় কী করে ভুলি বলো, মলাটবদ্ধ করেছি যে! রেখেছি বুকের পাঁজরে নীরব অভিমানে...। অভিমানে অভিযোগে জেগে জেগে হারিয়েছি রোদ ও বৃষ্টিকে মেঘে মেঘে ছেয়ে থাকা আলোকিত তুমি, বসন্ত হাওয়ায় ফিরে ফিরে আসো মায়াবী মমতায় বাঁধো, অপলক চেয়ে থাকি থেকে থেকে থোকায়-থোকায় পুস্প আঁকি। এঁকে এঁকে , এঁকে ফেলি জীবন্ত ছায়াকে সে ছায়া গন্ধময় জ্যোৎস্না হয়ে, হেঁটে যায় পতাকা হাতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে থাকে ঝরাফুলের বারান্দায়-ফুপিয়ে ওঠে দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসে। কী করে ভুলি বলো,সাদা পাতায় রেখেছি যে! রেখেছি ছন্দময় দুঃস্বপ্নের মায়াজালে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register