Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অনুগল্পে পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়

maro news
অনুগল্পে পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়

বয়স কমের ঝক্কি

শ্যামবাবু বাড়ি ফিরে শিবুর মাকে বললেন যে শিবুকে এবার স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। কারণ কি জিজ্ঞাসা করাতে শ্যামবাবু বললেন যে শিবুর বয়স ছয় বছর হতে দুই মাস বাকি। শিবুর মা ছাড়নেওয়ালি নন। তিনি বিকেলেই হেড মাস্টারের বাড়ি গেলেন। গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টারের সঙ্গে শ্যামবাবুদের আত্মীয়তা আছে। শিবুর মা হেডমাস্টারকে অনুনয় করে বললেন যে শিবু গ্রামের সব ছেলের থেকে অনেক এগিয়ে। তিনি হেডমাস্টারকে কথা দিলেন যে শিবু তাঁর মুখ রাখবে। কিন্তু হেডমাস্টার বললেন যে স্কুল পরিদর্শক এলেই তিনি জানতে পারবেন এবং তাঁর জন্য স্কুল কমিটি এবং কমিটির সেক্রেটারি পঞ্চায়েত প্রধানকে অপমানিত হতে হবে। শিবুর মা তখন বললেন, “আমি শিবুকে বলে দেবো, স্কুল পরিদর্শক এলে ও হয় ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যাবে বা বেঞ্চের নীচে লুকিয়ে পড়বে।” শিবুর মায়ের নাছোড়বান্দা মনোভাব দেখে হেডমাস্টার নিমরাজি হলেন। বলে দিলেন পরের দিন স্কুলে শিবুকে পাঠিয়ে দিতে। এক মাসের মাথায় স্কুল পরিদর্শক এলেন। হেডমাস্টার ইঙ্গিত করলে শিবু বেঞ্চের নীচে বসে পড়ে। স্কুল পরিদর্শকের হাত থেকে শিবু সেবার রেহাই পেয়ে যায়। কিন্তু, বছরের শেষ দিকে পরিদর্শক আবার এলেন। শিবু এবারও বেঞ্চের নীচে বসে পড়লো। পরিদর্শক পড়াশোনা কেমন হচ্ছে জানতে একটা প্রশ্ন করলেন ক্লাস ওয়ানের ছেলেদের। কেউ উত্তর দিতে পারলো না। মেধাবী শিবু উত্তর জানতো। যখন শেষ ছেলেটিও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না, তখন শিবু আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “আমি উত্তর জানি।” সঠিক উত্তর শুনে পরিদর্শক বাহবা দিয়ে শিবুকে জিজ্ঞাসা করলেন যে সে এতক্ষণ বেঞ্চের নীচে বসে ছিল কেন? শিবু উত্তর দিলো, “আমার বয়স কম।” উত্তর শুনে পরিদর্শকের সাথে ক্লাসের সব ছাত্রেরা হেসে ফেললো। শুধু হেডমাস্টারের চোখ রক্তবর্ণ। পরিদর্শক স্কুল ছেড়ে চলে গেলে হেডমাস্টার শিবুকে ডেকে পাঠালেন। দুই কান ধরে বেশ দলাই মলাই করে পরে বললেন, “ক্লাসে ফিরে যাও। আমি ব্যাপারটা সামলাবো।” পরীক্ষায় শিবু প্রথম হলো। হেডমাস্টার রেজাল্টের দিন শিবুদের বাড়ি এসে শিবুর মাকে বললেন, “ছেলেটার প্রতি নজর রাখবেন।”
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register