Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

এক নিশুতি রাতের রহস্য

সুজয়ের ঘুম ভেঙে গেল। মোবাইলের আওয়াজে। রাত দেড়টার সময় কে তাঁকে ফোন করতে পারে? যাহোক, ফোন তুলে নিলেন। “সুজয়, সতী মারা গেছে।” উত্তরে সুজয় বললেন, “সে তো পাঁচ বছর আগে মারা গেছে।” সতী সুজয়ের স্ত্রী। সুজয়ের বয়স এখন আটাত্তর। একাই থাকেন। একমাত্র মেয়ে বিবাহিতা। সে উলুবেড়িয়াতে থাকে। সুজয় পালটা জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কে? এতো রাতে ফোন করছেন?” কান্নার গলায় উত্তর এলো, “সুজয়, আমি বাণীব্রত, আমার স্ত্রী সতী মারা গেছে। এক ঘন্টা আগে। ভাবলাম তোকে জানাই।” ঘটনাচক্রে বাণীব্রতের স্ত্রীর নামও সতী।

এই বয়সে এমনিতেই রাতে বেশি ঘুম হয় না। তাও আবার এমন অনভিপ্রেত সংবাদ শুনে সুজয়ের মনটা বিষিয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুম এলো না। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ হেঁটে তিনি রওনা দিলেন বাণীব্রতের বাড়ির দিকে। এন্টালি থেকে তালতলা। রাস্তা বেশি না হলেও, অসুস্থ সুজয়ের পক্ষে অনেকটাই। বাণীব্রতের বাড়ির কাছে এসে দেখলেন দরোজা দিয়ে এক প্রৌঢ় বেরোচ্ছেন মর্নিং ওয়াক করতে। তাঁকে দেখে সেই প্রৌঢ় বললেন, “আরে, সুজয় বাবু, এখানে এই ভোররাতে?” “বাণীব্রতের স্ত্রী মারা গেছে। সেখানে যাবো।” “এটা তো আপনার পুরনো নিবাস, যা আপনি বিক্রি করে কবেই চলে গেছেন।” সুজয়ের সম্বিত ফেরে। বুঝতে পারেন বহুদিনের নিবাসের পথ কি আর ভুল হয়। একটা ঘোরের মধ্যে সেখানেই চলে এসেছেন।

বাণীব্রতের বাড়ি এই পাড়াতেই। সুজয় তখন হাঁপাচ্ছেন। পুরনো বাড়ির সামনের শিরীষ গাছটার নীচে গোল করে বাঁধানো চাতালের উপর বসে পড়লেন বিশ্রাম নিতে। কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন নিজেও জানেন না। হঠাৎ একজন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম ভাঙালেন। তিনি বললেন, “সুজয় কি ব্যাপার? পুরনো পাড়াতে? এই সকালে? শরীর ভালো আছে তো?” সুজয় দেখেন সামনে বাণীব্রত দাঁড়িয়ে। “তুই আমাকে দেড়টার সময় ফোন করলি না?” মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বাণীব্রত বললেন, “অতো রাতে আমি তোকে ফোন করতে যাবো কেন?” বলে বাণীব্রত দাঁড়ালেন না। বললেন, “সকালের বাজারটা ভালো বসে। গ্রামের মেয়েরা টাটকা সবজি নিয়ে আসে। আমি চলি। বাসে চেপে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যা।”

সুজয় বাড়ি ফিরে আসেন। চা বানিয়ে খবরের কাগজ নিয়ে বসে্ন। ভিতরের পাতায় ছোট করে লেখা একটা খবরের দিকে নজর পড়ে যায়। তাতে লেখা, গতকাল সন্ধ্যায় তালতলায় এক বাস দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধ ব্যক্তি মারা গেছেন। নাম বাণীব্রত চক্রবর্তী। সুজয় তখনি বাণীব্রতের নম্বরে ফোন করেন। ফোন বেজে যায়। পরে আর এক বন্ধু নিখিলের কাছ থেকে শুনেছিলেন বন্ধু বাণীব্রতেরই মৃত্যু হয়েছে।

তাহলে সেই দিন সকালে তাহলে তিনি কাকে দেখেছিলেন?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register