Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পতে নীল নক্ষত্র

maro news
গল্পতে নীল নক্ষত্র

পারিজাত

এখন গভীর রাত। অমলকৃষ্ণ ছবি আঁকায় খুব ব্যস্ত। খুব ভালো লাগে সেই সব ছবি আঁকতে ভালোবাসে যা সে মনের আয়নায় দেখতে পায়,দেখে সবসময়।

বাড়ির বাগানে একটি সুন্দর ফুলের গাছ দেখেছিল যখন সে খুব ছোট ছিল। মায়ের কাছ থেকে জেনেছিল সেই ফুলের নাম কাঞ্চন। সেই কাঞ্চন ফুল আজ আর দেখা যায় না কোথাও।পুজোয় সেই ফুল লাগে কিনা জানেনা সে আজও ।

ফুলের দোকানে অনেক খুঁজেছে, পাওয়া যায়নি। কোথাও পাওয়া যায় না সেই ফুল আজ আর।

যখন সে কলেজে পড়ে তখন একদিন বন্ধুদের সাথে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিল। সেদিন সে অনেক খোঁজ করেছিল সেই ফুলের।কেউ বলতে পারেনি সেই ফুলের কথা। অনেকে শোনেইনি তার নাম।

কত কিছু হারিয়ে যায় এই পৃথিবীতে, হারিয়ে যায় কালের নিয়মে। বনে, জঙ্গলে, পাহাড়ের খাঁজে, নদীর ধারে, কত নাম না জানা ফুলের সমারোহ।কে আর তার খোঁজ রাখে আজ।

অমলকৃষ্ণ আজ আর মনে করতে পারে না , মনে পড়ে না তার সেই ফুলের গন্ধের কথা। স্বর্গের পারিজাতের কথা শুনেছে সে।সেই ফুল কেউ কোনদিন দেখেছে বলে শোনেনি সে আজও।

সেই ফুল নাকি রাতে ফোটে, খুব ছোটবেলায় মা তাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলেছিল সে কথা। সে কথা কি সত্যি, না শুধুই এক গল্প কথা! আর মা-ই বা জানলো কি করে সে কথা? মা তো নিজে কখনো দেখেনি সেই ফুল।স্বপ্নে দেখা পরীদের মতো সুন্দর কি সেই ফুল! হয়তো সত্যি বা সত্যি নয়।

আমাদের এই পৃথিবীতে তো দিনের আলোয় সব ফুল তার পাপড়ি মেলতে শুরু করে। লাল,নীল প্রজাপতির শিরশিরানী খুশি ছুঁয়ে যায় তার এক একটা পাতা।

অমলকৃষ্ণ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না তাহলে পারিজাত স্বর্গে কেন রাত্রি নিশীথে চাঁদের আলোয় তার এক একটি পাপড়ি মেলে ধরে। স্বর্গের রাত কি এই পৃথিবীর রাতের থেকেও বেশি সুন্দর। রাত জাগা পাখিটা কি জানে সে কথা! হয়তো জানে বা জানে না।

অমলকৃষ্ণ আজো জানতে চায় সে কথা। এই ইচ্ছেটাই তাকে টেনে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে নীল আকাশের নিচে দিনের আলোয়, মাঝের রাতের অন্ধকারে।

ঘরের খোলা জানালা দিয়ে এক ফালি চাঁদের আলো এসে পড়েছে তার বিশাল ক্যানভাসের ওপরে, এক নক্ষত্রহীন রাতের অন্ধকারের ছায়া গায়ে মেখে। এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে ক্যানভাসের দিকে রঙ আর তুলি হাতে নিয়ে।

সেই "শেষ পাতা" ছবিটা তার খুব প্রিয়।খুব ইচ্ছে করে সেইরকম একটা ছবি যদি কোনদিন সে আঁকতে পারে সেই মহান শিল্পীর মতো যেটা হবে তার মাষ্টার পিস।

ক্যানভাসের গায়ে তুলির ছোট ছোট আঁচড়। একটু একটু করে ফুটে উঠছে কিছু একটা। কিসের অবয়ব জানে না সে। মনে হয় অমলকৃষ্ণ আজ নিজে কোন ছবি আঁকছে না।আজ তার তুলি ও রঙ নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে কি ছবি, কিসের ছবি ফুটে উঠবে ঐ বিশাল ক্যানভাসের গায়ে।

তুলির টানে অমলকৃষ্ণের হাতের সবকটি আঙুলে আজ খুসির জোয়ার। একটু একটু করে ফুটে উঠছে সেই ছবি, রঙ তার সাদা। একটা নীলচে আভা তার গায়ে জড়ানো।

অমলকৃষ্ণ এই ফুলটাকে আগে কোথাও দেখেনি। জানে না সে এই ফুলের কি নাম।সদ্য আঁকা ফুলের দিকে তাকিয়ে সে একটা সুন্দর গন্ধ পায়।

অমলকৃষ্ণ জানে না গন্ধটা কার, ফুলের না নিজের!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register