মুখী আসার পর থেকেই আমাদের বাড়ির পরিবেশ অনেকটা পাল্টে গেল....আগে যে বাড়িতে বড়'জার খিলখিল হাসি আর বিলেসীর হম্বিতম্বি ছাড়া কোনো আওয়াজ শোনা যেত না.... এখন সেখানে যখন তখন মুখীর খ্যানখ্যানে কাংস্যনিন্দিত গলায় ঝগড়া চিৎকারে সর্বত্র মুখরিত হয়ে উঠতো....যখন তখন যেখানে সেখানে যার তার সঙ্গে....ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার আর করার এক অসম্ভব প্রতিভা ছিল মুখীর... আমি অনেক বার বারণ করেও তাকে থামাতে পারতাম না... বেশি কিছু বললে.... চিৎকার করে কাঁদতো আর অভিশাপ দিতো....এমন কি বিলেসী যে বিলেসী একেবারে ডাকসাইটে ঝগড়ুটি...সে অবধি কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল....
আমার বড়'জা প্রথম প্রথম মুখীকে একেবারে সহ্য করতে না পারলেও.... ক্রমশঃ নানা ঘটনায় ও শয়তানীর খেলায়....মুখী বিলেসীকে সরিয়ে ধীরে ধীরে বড়'জার প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠছিল
মুখীকে আমি আমার ঘরের নীচেই বিছানা করে শুতে বলেছিলাম...কারণ অর্ক আমার ঘরে আসতোই না...আর যেহেতু মুখীকে আমি এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি...তাই ওর নিরাপত্তার একটা দায়িত্ব আমার থেকেই যায় (যদিও মুখীর যা মুখ...তাতে ওর নিরাপত্তার ভয় অমূলক)... কিন্তু ইদানিং অবাক হয়ে দেখতাম....ছুতোয় নাতায় মুখী আমাকে নানাভাবে অপমান করতো....
একদিন বিলেসীর সাথে চিৎকার করে ঝগড়া করার সময় আমি অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে মুখীকে বারণ করলাম....তাতে মুখী আমাকে খুব বিশ্রী ভাবে অঙ্গ ভঙ্গি করে বললো....
"ইললো্ মরে যাই লো....উনি এয়েচেন আমারে শিক্কে দিতে....ঝার নিজির ভাতার অন্যের আঁচলা ধরে পড়ে থাকে...মোটে পোঁচেনাকো...সে আবার সোমসারে মুক নাড়ে..."
আমি রেগে গিয়ে বললাম...."মুখী তুমি এক্ষুণি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও.."
"না....ও যাবেনে..."
আমি চমকে ঘুরে তাকিয়ে দেখি জ্বলজ্বলে চোখে বড়'জা দাঁড়িয়ে আছে.... বড়'জা কে দেখেই মুখী ন্যাকা কান্নায় ভেঙে পড়লো...
"ও মা.... তোমার সোমসার....তোমারেই অগেরায্যি করে আমারে যেতে বলতেছে... আমি কইলাম...বড়মা বললি আমি চলি ঝাবো...তাতে বলে,ও বেদবা ডাইনী মাগী...আমিই এ বাড়ির মালকিন... আমারই সোয়ামী আমারই সব... আমি ঝা বলবো তাই সবাই শোনবে "
বড়'জা গনগনে মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো....
"কিরে ছোট...তোর তো দেখচি খুব বাড়বাড়ন্ত হয়েছে... আমার রূপটা কি ভূলে গেলি??!!!"
মুখীর মিথ্যে নাটকে আমি এতই অবাক হয়ে গেছিলাম যে মুখ থেকে কথাই বেরোচ্ছিল না....
বিলেসী বোধহয় এত মিথ্যে আর সহ্য না করতে পেরেই হোক....বা মুখীর প্রতি রাগেই হোক....বলে বসলো
"বড়-বৌমনি এই বুড়ি মাগীটার কথা বিশ্বেস যেওনা...ছোট বৌমনি এসব কিচ্ছু বলেনি গো....এই মাগীটা বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতেছে...."
মুখী বড়'জার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করে বললো...."দেকচো তো বড়মা....একেনে তলে তলে সাঁট হতেচে.... তোমারই খেয়ে পড়ে তোমার সামনি অন্য ঝনকে সাপোট করচে গো...."
বড়'জা গম্ভীর মুখে "তাই তো দেকচি.." বলে আমার আর বিলেসীর দিকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেল....পিছন পিছন মুখী... তবে যাওয়ার আগে আমার আর বিলেসীর দিকে তাকিয়ে একটা গা জ্বালানো হাসি হাসতে ভূললো না....
তার পরদিন দুপুরে বিলেসী হঠাৎ আমার ঘরে এসে উপস্থিত....চোখে জল নিয়ে আমার হাত দুটো জড়িয়ে ধরলো সে....
"নোতুন বউ আমাকে মাফ করে দাও গো.... তোমার উপর অনেক অত্যেচার করিচি....কি করবো নোতুন বউ তুমি তো সবই জানো..ঐ কাঁচা খেগো ডাইনির ভয়ে... আর....আর লোভে গো... আমার দ্যাশের বাড়ির জন্যি এ্যাত এ্যাত ট্যাকা পাঠাতো ঐ ডাইনি... আর আমারে দিয়ে য্যাতো পাপ কাজ করিয়েছে....আর আজ ঐ বুড়ি রাক্কুসিটা ওর প্রেয় হয়ে গ্যালো... তুমি খাল কেইটে কুমির ঢুক্যেছ গো নোতুন বউ....ঐ বুড়ি তোমার সব্বোনাশ.....
আমি কিছু বলে ওঠার আগেই আমার ঘর সেই বিখ্যাত কাংস্যনিন্দিত খ্যানখ্যানে স্বরে গমগমিয়ে উঠলো.....
"দেকেচ মা ?? তোমারে কইনি??? তোমার আড়ালে কেমনি তোমার সব্বোনাশের শলা হতেচে...তোমারে কইনি মা??? নিজির চোকে দ্যাকো
তুমি তো ওই মাগীরে এতোটি জিনিস পত্তর দ্যাও...
আর ঐ মাগী.... ছোট বোয়ের কাচে তোমার নামে কেমনি ছালা খুলে বসেচে...মুয়ে আগুন মাগীর..."
বিলেসী সাদা হয়ে যাওয়া মুখ নিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলতে গেল.... কিন্তু তার আগেই বড়'জা সাপের মতো হিমশীতল চোখ দিয়ে বিলেসীর দিকে তাকালো...আর..স্পষ্ট দেখলাম বিলেসীর কথা আটকে গেল... বড়'জা মুখী কে হুকুম করলো..."মাগীটারে পিচনের ঘরে নে আয়..."
বলে আমার দিকে একটা অসম্ভব তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল...
সেদিনের পর থেকে বিলেসী কে আর কেউ কখনো দেখেনি....
অর্ক কয়েকদিন পর খেতে বসে বিলেসীর কথা জিজ্ঞেস করলে...বড়'জা অবহেলা ভরে উত্তর দিয়েছিল..."সে দেশে চলে গ্যাচে..."
আমি জানতাম অর্ককে কোনো কিছু বলেই কোনো লাভ নেই......তাই.... দেশে চলে যাওয়া বিলেসীর সব জিনিসপত্রই বা কি করে পড়ে থাকে... অথবা কি করেই বা ওর সেদিনের পরণের কাপড়ের একটা রক্তমাখা টুকরো আমি বাড়ির পিছনের বাঁধানো কুয়োতলায় পাই...এই প্রশ্নগুলোও আমি নিজের মনের গহীনে জমে থাকা আতঙ্ক আর ভয়ের সাথেই গচ্ছিত রেখে দিলাম।
এরপর যত দিন কাটতে লাগলো... আমাদের বিশাল প্রাসাদোপম বাড়িটার আনাচেকানাচে আশঙ্কা ভয় আতঙ্কের ফিসফিসানি ক্রমশঃ আরো বেশী করে ঘুরপাক খেতে লাগলো....আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো কাকের উপদ্রব...
মুখী আসার পর বাড়ির যে কয়েকটি বিশেষ পরিবর্তন হয়েছিল.....এই কাকের উপদ্রব তার মধ্যে অন্যতম....ছাদের আলসে থেকে শুরু করে উঠোন পর্যন্ত সব সময় কাক গিজগিজ করতো... বড়'জা....
এমন কি ছোট কাকা অবদি কাকের উপদ্রবে অবাক ও বিরক্ত হয়ে যেত....
মুখী এ বাড়িতে আসার পর আরো একটা জিনিস হয়েছিল....সেটা প্রথম দিকে লক্ষ্য না করলেও..পাত্তা না দিলেও.. পরের দিকে আমার দৃঢ় ধারণা হয়েছিল যে মুখীই কোনো না কোনো ভাবে এর সাথে সম্পর্কিত...সেটা হলো এই যে...
আমাদের সবার অসুখ বিসুখ বিপদ আপদ সবই যেন মুখী আসার পর লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল..
আমার শাশুড়ি মার অবস্থা দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছিল.....অর্ক আর শ্রিয়াও প্রায়ই জ্বরজারি তে ভুগতে শুরু করেছিল.... আমি তো এমনিতেই মানসিক অশান্তিতে আশঙ্কায় শুকিয়ে থাকতাম....কিন্তু কিছুদিন যাবত যেন শরীরে কোনো জোর পেতাম না...শরীর টা যেন দিনে দিনে ভেঙে আসছিল....প্রথমে ভাবতাম হয়তো আমাদের উপরে তন্ত্র মন্ত্রের প্রভাবে এসব হচ্ছে... কিন্তু যেদিন শুনলাম ছোট খুড়শ্বশুরও আমাদের মতই অসুস্থতায় কাবু... সেদিনই আমার মনে হলো...মুখীর এ বাড়িতে আসার সঙ্গে এইসব অমঙ্গলের কোনো যোগসাজশ নেই তো?
এক এক সময় আমার নিজের উপরই নিজের ভীষন রাগ ধরতো... আমার জীবনে কি অশান্তি ঝামেলা কিছু কম ছিল!!! যে আমি ঐ মূর্তিমতী অশান্তিকে নিজে হাতে করে নিজের জীবনে ঝামেলা বাড়ানোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম......!!!!
অসম্ভব খিদে ছিল মুখীর....আর এত বিশ্রী ছিল সে খাওয়ার ধরণ....যে বড়'জা পর্যন্ত অবাক হয়ে বলতো..."ওমা গো...বুড়ির খাওয়া দ্যাকো....যেন ব্রেহ্মান্ড টা পেটে পুরে নিচ্চে...ওরে...ওরে..এই মাগী ও তোর ক্যামন খাওয়ার ছিরি!!! সব একসাতে পিন্ডির মতো করে গিলতিছিস ক্যানো..??এই আপদ তো খিদে তে আমারেও হার মানালো দেকতিচি..."
মুখী এসব কথায় কিছুই মনেও করতো না...পাত্তাও দিতো না....হাম হাম করে বিশ্রী ভাবে থাবা থাবা খাবার মুখে ঠেসে ঠেসে ঢোকাতো.....না চিবিয়েই সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গিলতো...গেলার সময় ওর ছোট ছোট ঘোলাটে চোখগুলো তৃপ্তি তে জ্বলজ্বল করে উঠতো... কিন্তু গলার স্বরে যতটা দুঃখ ফোটানো সম্ভব....ফুটিয়ে বলতো...."আর কি কই মা....যে মেইয়েমানুষরে তার বর খেতে দিতে পারেনে....যে নিজির বর্ রেই আস্তো গিলে খেয়ে নেলেও খিদা মেটাতি পারে নে...তার কপালি তো এরমই হয় গো মা... তুমি তো নিজিই সেটা বোজো..." আশ্চর্য ভাবে বড়'জা মুখীর কথায় কিছু মনে করার বদলে উল্টে হেসে গড়িয়ে পড়তো...." রকম দ্যাকো বুড়িমাগীর...নাটক করতেছে" বলে....
আমি মুখীর এই অপার্থিব খাওয়ার সামনে বেশিক্ষন থাকতে পারতাম না... আমার ঘেন্না ছাপিয়েও যে অনুভূতি জেগে উঠতো...সেটা হলো ভয়.... নিখাদ সীমাহীন আতঙ্ক... আমি সেখান থেকে তাড়াতাড়ি সরে যেতাম।
তবে সারাদিন সর্বত্র ঘুরে বেড়ালেও রাতটি হলেই মুখী কিন্তু এসে আমার ঘরের মেঝেটিতেই শুতো..... আমি বিরক্ত হয়ে বারণ করলেও পাত্তা দিতো না
এইভাবে একদিন মুখী আমাকে হয়তো না বুঝে ই বাঁচিয়ে দিলো...
সেদিন রাতে কি একটা কারণে বড়'জার উস্কানি তে অর্ক একটা লাঠি নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতেই... মুখী এমন হাঁউমাউ করে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল..."ও বাবা গো...মেরে ফেললো গো...হায় হায় গো..." করে...যে.. আমি স্পষ্ট দেখলাম... মুখীর চিৎকারে অর্ক র চোখের ঘোলাটে ভাব হঠাৎ করে অনেক টা যেন কেটে গেল...
ক্ষনিকের জন্য ও আবার আগের মত হয়ে উঠল
"এ কি চিনি... আমার হাতে লাঠি কেন?? এই বুড়িটাই বা এরকম করে চিৎকার করছে কেন"??
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বড়'জা উপস্থিত হয়ে মুখীর গালে ঠাস্ করে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়ে "চুপ মার হারামজাদি" বলে অর্ককে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেছিলো।...যাই হোক.. আমি চোরের মার খাওয়া থেকে বেঁচে গেছিলাম.... আমার ইদানিং মার খেতে কষ্টের চেয়েও ভয় বেশি হতো.... আমার গর্ভের সন্তানের জন্য....
এর মধ্যেই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো....
সেই রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম....শ্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে....এই বাড়ির ঘরগুলো বিশাল বড় আর পুরোনো দিনের নকশা করা সেগুন কাঠের আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো...বিশাল বিশাল জানলায় মোটা মোটা লোহার গরাদ.....মার্বেল পাথরের সাদা কালো চৌকো কাটা মেঝেতে আমার খাটের থেকে অনেকটা দূরে একটা মাদুর আর বালিশ নিয়ে শুয়ে আছে মুখী... আমি ঐ সময়ে ঠিক করে ঘুমোতে পারতাম না....সর্বদাই একটা দমচাপা....কখন কি হয় আতংক এবং উৎকণ্ঠা অজান্তেই মনের ভিতর নড়েচড়ে বেড়াতো.... সেদিনও আমার পলকা ঘুম এক অদ্ভুত আওয়াজে ভেঙে গেল
আওয়াজটা আর কিছুই না...প্রচুর কাকের একসঙ্গে চেঁচামেচি.... আমি ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসলাম....ঘরের টিমটিমে আলোতে দেখলাম শ্রিয়া অঘোরে ঘুমুচ্ছে...আর মুখীও.... কিন্তু কাকের চিৎকার অব্যাহত....
আমি ঘুম চোখে পায়ে পায়ে উঠে দক্ষিণপূর্ব দিকের বড় জানলাটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম...কারণ আওয়াজগুলো সেখান থেকেই আসছিল....
জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রথমে কিছুই দেখতে পেলাম না....তারপর... হঠাৎ ই যেন দেখলাম...এক অদ্ভুত দৃশ্য.....
এই বাড়িতে আসার পর থেকে অনেক অলৌকিক, অপার্থিব,আতংক জাগানো অপদৃশ্যের সাক্ষী হয়েছি আমি....ভয় পেতে পেতে হয়তো ভয়ের অনুভূতি কিছুটা ভোঁতাও হয়ে পড়েছিল...না হলে আমার বড়'জার স্বরূপ জানার পর ও.... যেন কিছুই না এমন ভাব করে দিনের পর দিন কাটাচ্ছি কি করে.... কিন্তু সেদিন আমি যা দেখেছিলাম...
আমি দেখলাম....স্পষ্ট দেখলাম....(আজ ও সেই দৃশ্য ভাবলে আমার সর্বাঙ্গ কাঁপতে থাকে)....ছাদের আলসেতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর কেউ নয়...সেই নোংরা সাদা কাপড় পরা আমাদের মুখী....
মুখীর হাতে একটা কুলো...সেটা দিয়ে চাল ঝাড়ার ছপ ছপ আওয়াজ আমি ঘর থেকেই পরিস্কার শুনতে পাচ্ছিলাম....মুখীর মাথার উপরে গোল করে চক্কর দিয়ে দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য কাক....মুখীর চারদিকে আর কাকগুলোরও চারদিকে এক অদ্ভুত নীলাভ আলো বের হওয়া ধোঁয়া ....সেই উড়তে থাকা ঘন নীলচে ধোঁয়া ধোঁয়া আলোতেই আমি আরো সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম...
আমি নিস্পন্দ হয়ে দৃশ্য টা দেখতে লাগলাম...যেন আমার চারপাশ থেকে সব কিছু গায়েব হয়ে গেছে...চরাচর বিলুপ্ত হয়ে...আছি শুধু আমি...তাও যেন একটা অন্য আমি... আমার ভিতরের আমি...যার সাথে রক্ত মাংসের আমির কোনো সম্পর্ক নেই...
মুখী কিন্তু তার সেই জরা মাখা লোলচর্ম কুৎসিত মুখে আর পিঙ্গল চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল.... একদৃষ্টিতে....অপলকে...সেই দৃষ্টি যে কি ভয়ঙ্কর....অবর্ননীয় ...তাতে পৃথিবীর সমস্ত ক্ষুধা, তৃষ্ণা,ক্রোধ,যন্ত্রনা, অমঙ্গল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল অথচ আমার এই ভয়ানক অতিপার্থিব দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়েও কেন জানি না চোখ ফিরিয়ে চলে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না...এমন কি অদ্ভুত ভাবে আমিই যেন চাইছিলাম....অনন্ত কাল ধরে এই দৃশ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকতে!!!
এক সময় মুখী আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো....এক ভয়াবহ শব্দহীন হাসি...ওর চুপসে যাওয়া প্রায় দন্তহীন মুখের বিশাল কৃষ্ণগহ্বর দেখতে দেখতে আমি সেখানেই ঢলে পড়লাম।
0 Comments.