Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ক্যাফে কাব্যে নব কুমার দে

maro news
ক্যাফে কাব্যে নব কুমার দে

ক্ষতিপূরণ অথবা

তেমন কিছু না এটা তখনকার গল্প যখন বাঘেরা সিগারেট খেতো।

আর এই রাজ্যে ছিল অপার শান্তি। কারণ এই রাজ্যে চলতো শান্তিপ্রিয়, আবেগী , সবার প্রিয় রানীর শাসনে। রাণীমা হয়ে উঠেছিলেন সবার ঘরের মেয়ে। কারো মা কারো দিদি তো কারো পিসি।

দান খয়রাতে রাণীমা ছিলেন উদার হস্ত।

এই দান খয়রাতের যোগানের জন্য রাণীমা সমস্ত স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন তাদের শাস্ত্রী সামন্তদের। রানীর রাজ্যে কোনো চোর ডাকাত খুনী ছিলোনা। তাই চুরি ডাকাতি তছরুপ খুন সবকিছু করার একমাত্র অধিকার ছিল রানীমার সৈন্য সামন্ত দের।

রানীমা রাজ্যের মহিলা প্রজাদের জন্য একটি মাসোহারা ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কারণ রানীমা খুব ভালোই জানতো তার সৈন্য সামন্তরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো নারী মাংস। হয় প্রলোভন দেখিয়ে নয় খরিদ করে আর তাতেও রাজী না হলে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।

সমস্যা হলো এখানেই যার মেয়ে,বৌ বা দিদি বোন ধর্ষণ হতো সে বিদ্রোহ করে উঠতো। রানীমা দেখলো এই বিদ্রোহ মহামারীর আকার নিলে তো রাজ্যে আর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকবে না। তখন তিনি ঠিক করলেন ধর্ষিতার মাপকাঠি অনুযায়ী একটা মূল্য নির্ধারণ করলেই তো সমস্যা মিটে যায়।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। রানী মার সভাসদ , সৈন্যসামন্ত সবাই ধর্ষণ করা শুরু করলো। আর রানীমা তার তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ মূল্য দিয়ে পাঠিয়ে দিতে থাকলেন কোনো না কোনো সভাসদদের হাত দিয়ে।

মাসোহারা নেওয়া মহিলারা বিদ্রোহে অংশ নেবেনা রানীমা ভালোই জানে।

আবার সমস্যা হলো অনেকেই তার মেয়ের ধর্ষনের বদলে টাকা নিতে রাজি হলো না। তারা বললো আমরা বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে ন্যায় বিচারের দাবী জানাবো।

রানী মুচকি হাসলেন, তার হাতে গড়া বিচার ব্যবস্থা তার সৈন্য সামন্ত সভাসদদের কিভাবে শাস্তি দেবে।

কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটলো একদিন।

একজন ধর্ষিতার বাবাকে রানীমা দশ লক্ষ টাকা দিতে চাইলেন কারণ তার মেয়ে একজন সুচিকিৎসক ছিলেন। তাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলায় অনেক মানুষ আবেগের বশে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।

সেই বাবা প্রশ্ন করলেন এই টাকা কি আমি আমার ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারি ?

রানীমা মুচকি হাসলেন। টাকা নিলেই বিদ্রোহ শেষ। ওই ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলেন এই টাকা কি আমি আমার ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারি?

রানীমা বললেন স্বচ্ছন্দে। যদি আরো কিছু প্রয়োজন হয় তাকে জানালে সেটা রানীমা রাজকোষ থেকে নয় ব্যক্তিগত অর্থ ভান্ডার থেকে দিয়ে দেবে।

ওই ব্যক্তি হাতজোড় করে বললেন আপনি যদি ব্যবস্থা করেন আমি চাই এই টাকা নেওয়ার খবর সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। আপনি সমস্ত বার্তাবাহকদের যদি কাল এখানে পাঠিয়ে দেন এই আদেশ সহ যেনো আমার বার্তা সমস্ত রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

রানীমা মুচকি হাসলেন বললেন তথাস্তু।

পরেরদিন সারা রাজ্যের বার্তবাহকরা পৌঁছোলো ওই ব্যক্তির বাড়ি রানীমার আদেশে।

ওই ব্যক্তি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন রানীমা আমার মেয়ের ধর্ষণ হয়ে মৃত্যুর কারণে আমাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এই টাকা আমার, এই টাকা আমি যে কোনো খাতে খরচ করতে পারি স্বয়ং রানীমাই বলেছেন।

তাই আমি ঘোষণা করছি যদি কোনো ব্যক্তি রানীমার সভাসদদের একজনকেও মেরে ফেলেন আমি আপনাকে এক লক্ষ টাকা দেবো।

আর যদি কেউ স্বয়ং রানীমাকেই মেরে দেয় আমি তাকে সম্পূর্ণ দশ লক্ষ টাকা দিয়ে দেবো।

আমি জানি এই রাজ্যে বড় অভাব। তাই কেউ না কেউ তো এই কাজটি করবেই টাকার জন্য।

আমি শুধু চাই জীবনের বাকি দিনগুলো রানীমা সহ বাকি সভাসদ , সৈন্যসামন্ত সবাই আতঙ্কে থাক যে যেকেউ এসে তাকে মেরে ফেলতে পারে ‌।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register