Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব - ৭)

maro news
ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় A.F.M Shebgatulla (পর্ব - ৭)

পর্তুগীজ জাহাজ ঘাঁটি আবিষ্কার - শেষ পর্ব

উদ্ধারকারী দলের লোকরা ঠিক করলো উপর থাকে দ্বিতীয় তলে ওরা থাকবে তার পরে না হয় নিচের তলে নামবে। এরকম একটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার হল ঘর আর চার দিকে ঘর। ওরা এমনই একটি ঘরে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেল। সাবির পায়ের কাছে দেখলো কি একটা ঠেকছে। টর্চের আলোয় দেখে প্রায় আঁতকে উঠলো! দেখলো দুটো কঙ্কাল আলিঙ্গনরত অবস্থায়! দৃশ্য দেখে ওরা তাজ্জব হয়ে গেলো । আসে পাশের ঘরে আরো বেশ কিছু কঙ্কাল। আসবাবপত্র বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো ছিটানো।
কোনার দিকে দেখলো একটা আলমারি! না জানি কত শতাব্দীর সাক্ষী এই আলমারি! না জানি কি আছে এর মধ্যে। আলমারির দরজা খোলার সাথে সাথে হয়ত খুলে যাবে বহু অলিখিত ইতিহাসের দরজা। এক গবেষক আলমারির দরজা খোলার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। অন্যান্য রাও চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হলেন।
এবার ওরা নামলো আরো এক তলা নিচে। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে গা ছম ছম করে উঠলো! সিড়ি দিয়ে বেশ কিছু নিচে নামলো ওরা।এবারে ওরা পরস্পর গা ঘেঁষেই হাত ধরা ধরি করে নামার চেষ্টা করছে।এখানে যেনো নিজের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।দিব্যেন্দু কাকা আর এক গবেষক বলাবলি করছে এই তলটা দেখে ওরা বাইরে বেরিয়ে যাবেন।কেমন যেনো অস্বস্তিকর পরিবেশ বলে মনে হচ্ছে । উপর দিয়ে তৃতীয় তলে ওরা আসতে পারেনি! এমন সময় এক গবেষকের পা থেকে থেকে ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ হলো। ওরা সব্বাই থমকে দাঁড়ালো। সিড়ি দিয়ে অনেক টা নিচে নামার পরে দেখলো এই তল টা জলের তলায় আছে। টর্চের আলোয় আবছা আলো সাথে জলের প্রতিফলনের আলো এই জায়গাটাকে অন্য রকম মনে হচ্ছে।শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়া এই বদ্ধ জলে টর্চের আলো যেনো মরুদ্যানের অনুভূতি। সিড়ি থেকে ওরা দেখলো মোটা মোটা থাম ছাদের দিকে উঠে আছে। বাকিটা জলের তলায়! কঙ্কাল , কাঠের টুকরো, আরো কিছু নমুনা নিয়ে ওরা বেরিয়ে গেলো।
বেরিয়ে যাবার সময় পাড়া প্রতিবেশীরা , সাবির সুবীরের বন্ধুবান্ধব ওদেরকে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করতে থাকে। সাংবাদিকরা গবেষক ও সাবির সুবীরকে প্রশ্ন করতে থাকে। ওদের মধ্যে বলা ছিল কেউ কিছু প্রশ্ন করলে বিষদে কিছু বলা হবে না। ও ঘরে কি ছিল কি নেই কিছুই বলা হবে না। শুধু মাত্র অনুভূতির কথা বলা হবে। যা বলার সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হবে। এদিকে ব্রেকিং নিউজে সাবির সুবীর পরিচিত মুখ হয়েগেলো।
এবার থেকে এই বট গাছ তলা সরকারি আওতায় বলে ঘোষিত হলো। সরকারি অনুমতি ছাড়া এখানে আসা একেবারে নিষিদ্ধ হয়েগেল। আসলে আলমারিটা এখনও ওরা বের করে নিয়ে যেতে পারেনি তাই ওই অবস্থা করা হয়। সাথে পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কানায় কানায় ভিড়। উপস্থিত সাবির সুবীর, দিব্যেন্দু কাকা , টিংকু মামা, আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিম। সাবির সুবীরের বাড়ির কিছু লোকজন পাড়ার লোকজন ও এসেছে। দুই বালকের দিকে প্রায় বাংলার মিডিয়া! প্রধান গবেষক প্রথমে বললেন।তারা যে বাড়িটাতে অভিযান চালিয়েছিলেন ওটাই হল পর্তুগিজ জাহাজ ঘাঁটি।আর ওটাই সেই মোটা থাম ওয়ালা পর্তুগিজদের নাচ ঘর ও বটে। নাবিক ,বণিকদের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল সেখানে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বাড়িটা কি ভাবে মাটির তলায় বসে গেল! গবেষক গণের মতে , এক কালে সুন্দরবন অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে জলোচ্ছাস হয়েছিল বলে কিছু কিছু লেখা থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।উক্ত গবেষকদের মতে ওটা ছিল সুনামি। যার ফলে গোটা বাড়িটাই বসে যায়। এক সময় জন মানব শুন্য হয়ে যায় আর আবার জঙ্গলে পরিণত হয়।ধীরে ধীরে জন স্মৃতি থেকে ওই জাহাজ ঘাঁটি অবলুপ্ত হয়ে যায়।
গবেষকরা জানালেন তারা একটা আলিঙ্গনরত অবস্থায় কঙ্কাল উদ্ধার করেছেন। সম্ভবত সুনামির দিন ওরা আটকা পড়ে যায়! তাজ্জব হবার মত একটা খবর জানালেন। একটা পুরুষ কঙ্কাল আর একটা নারী কঙ্কাল! গবেষকরা এমন একটা কথার উল্লেখ করলো যা শুনে গোটা সাংবাদিক মহল প্রায় অবাক হয়েগেলো। পুরুষ কঙ্কালটি পরীক্ষা করে জানা গেছে ওটা নর্ডিক সম্প্রদায়ভুক্ত, আর নারী কঙ্কালটি মিডিটেরেনিয়ান সম্প্রদায়ভুক্ত! তার মানে এই পুরুষ কঙ্কালটি ইউরোপীয় সম্ভবত পর্তুগিজ আর নারী কঙ্কালটি সম্ভবত বাঙালি সম্প্রদায়ভুক্ত!! এরা কি স্বামী স্ত্রী, নাকি সঙ্গী সে ব্যাপারে এখন আর কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে গবেষকরা ঘোষণা করলেন: নৃতত্ত্ব চর্চায় যুগান্তকারী আবিষ্কার পূর্ব আফ্রিকার ইউথুয়পিয়াতে প্রাপ্ত কঙ্কাল ' লুসি ' নাম করন করা হয়। তেমনই বিদ্যাধরীর তীরে প্রাপ্ত এই কঙ্কাল যুগলের নামকরণ পরে করা হবে। আর এটি থাকবে , কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে।
গবেষকরা এর একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন যা শুনে টিভির পর্দার সামনের লোকেরা প্রায় হতবাক হয়ে গেলো। সাবির সুবীর যে কাঠ টা পেয়েছিলেন ।সেই ভাঙ্গা কাঠ টা তে কার্ক কথাটি পর্তুগিজ ভাষায় উল্লেখ ছিল। সেটা দেখেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে প্রথম দিন থেকেই। গোয়ায় নিযুক্ত পর্তুগিজ গভর্নর আলফানস আলবুকার্ক এর সমসাময়িক হতে পারে এই কাঠ। আর উপর থেকে প্রথম তলে যে সিন্দুক টা পাওয়া যায় , সেটা ভেঙে সোনার বাট পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করে জানা গেছে ওই সোনার বাট তৈরি হয় পশ্চিম আফ্রিকার টাম্বাকটু তে। কত কত বছরের পুরাতন এই সোনার বাট আজ অমুল্য। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কে এটা দান করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
প্রধান গবেষক এরপর বলেন বাড়িটিতে আরো কিছু নমুনা আছে। যা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে পরে জানানো হবে। আর বিদ্যাধরীর ওই পর্তুগিজ জাহাজ ঘাঁটি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আয়ত্তাধীন করা যায় কি না এই বিষয়ে প্রাথমিক কথা বার্তা চলছে। সব শেষে প্রধান গবেষক সাবির সুবীরকে পাশে ডেকে সাংবাদিক মহল কে জানিয়ে দিলেন। এই দুই ক্ষুদে এই পর্তুগিজ জাহাজ ঘাঁটির আবিষ্কারক। এরাই প্রথমে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। নিজেদের অজান্তেই ওরা এক অজানা গুরুত্তপূর্ণ ইতিহাস আবিষ্কার করে ফেলেছে। সাবির সুবীর যেমন আগে পাড়ার হিরো ছিল। এখন ওরা প্রায় সারা বাংলার পরিচিত বিচ্ছু।

সমাপ্ত

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register