Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

লে ছক্কায় (নির্বাচিত কবিতা) অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
লে ছক্কায় (নির্বাচিত কবিতা) অঞ্জলি দে নন্দী, মম

১। বাতায়ন

উন্মুক্ত বাতায়ন। সুদূরগামীনি দৃষ্টি। নম্র অগ্রহায়ণ। প্রকৃতির অপরূপা সৃষ্টি। দিগন্ত বিস্তৃত ধ্যান ক্ষেত। বইছে বায়ু মিষ্টি। গগনের বর্ণ-শ্বেত। আমার বৃহৎ বাতায়নের দৃশ্যমান সৌন্দর্য। এ যেন ওর উনমুক্ততার ঔদার্য। আমি উপভোগ করি আনমনে। এ হেন লগনে, নবান্নের পূজা হয় আমার মন্দিরে। আমি সেথা হাজির হই ধীরে ধীরে ধীরে। রজত মুকুট শোভিত মাতা শ্রী লক্ষ্মী দেবীর শিরে। এ সুলগণ প্রতি বছরে আসে ফিরে ফিরে ফিরে। অখন্ড দিয়া জ্বলে সারা নিশি আমার শান্ত নীড়ে।

২। করোনার করাল কালিমা

ছিঃ ছিঃ ছিঃ!!! ক্যানো মিছামিছি প্রাণ ধ্বংস করছিস? বেদনায় ধরা ভরছিস। তোর করাল গ্রাস করছে প্রাণ শক্তি হ্রাস। ওরে ও বোকা করোনা, শোন তুই! নিজেরে ভরিস না কালিমায় আর! সুকর্মই তো অমূল্য ধন। এবার কর তাই তুই! হ তুই প্রিয় সবার।

৩। বলাবলি

হাওয়ার কানে কানে, মেঘ কি কথা বলে, তা শুনতে কি পাও? হাওয়ার কানে কানে, বৃষ্টি কি কথা বলে, তা কি শুনতে পাও? হাওয়ার কানে কানে, জোয়ার কি কথা বলে, তা শুনতে কি চাও? হাওয়ার কানে কানে, পুষ্পের সুবাস কি কথা বলে, তা শুনতে কি পাও? হাওয়ার কানে কানে, উড়ন্ত ডানা কি কথা বলে, তা শুনতে কি পাও? হাওয়ার কানে কানে, প্রাণের শ্বাস কি কথা বলে, যদি শুনতে চাও, তবে, হৃদয়কে জয় করে নাও! আপন হৃদস্পন্দনের সুরে সুর মিলিয়ে গাও! অনুভূতিকে উজাড় করে দাও! আর, সকল বলাবলির উত্তর পাও!

৪। বিক্রী

রাস্তায় ফেরি করি পতাকা আমি। খুব বেশি নয় দামি। মাত্র দশ রূপিয়ায় একটা। কিনে নাও না গো বাবুমশাই! পেটে আমার আছে ক্ষুধা পোষাই। যদি পেট আমার একটা। তবুও ভরে না গো রোজ এটা। বড় কঠিন কাজ খিদে মেটা। বাবুমশাই কিনে নিয়ে লাগাও না গো তোমার গাড়ির সামনের দিকে! আমি স্বাধীন আজ। তাই তো পারছি বিক্রি করতে। পেট চালাতে করছি নিজেই কাজ। কত কিছুই না হয় করতে এই একটামাত্র পেট ভরতে। আজ কত জনে পতাকা তোলে দিকে দিকে দিকে... ইতিহাসও সব কিছুই রাখে লিখে। শুধু আমার পেটে চলার সংগ্রামটা থাকে চিরতরেই সংগোপনে। কে আর তাকে অন্তরে ধরে রাখে? কেউই এই সংগ্রামকে ঠাঁই দেয় না মনে। তবুও জীবন বেঁচে থাকে আপন দক্ষ-রণে।

৫। পতাকা

ইয়া বড় পতাকাটা উড়ছে। আহা কত স্বাধীন ওর ওড়া! খানিক দূরে ও ঘুরছে। ওই যে গো ও। ফুটপাতে থাকে যে। ওদের একটিই লোগো। মাইগ্রেন, ওরা। ও অপেক্ষা করছে। কখন যে রাতটা আসবে? পতাকাটা নিয়ে ফুটপাতে শোবো, ওটা বিছিয়ে। হয় তো জোৎস্নায় তখন ও ভাসবে। খোলা আকাশের নীচে। অথবা পতাকাটা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকবে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ভিজে। কে আর জনগণের খোঁজ রাখবে? অনাদরের তো পতাকা নিজে। সময়টা চলে গেলেই। দেয় তো সেই ফেলেই।

৬। পত্নী বিহীনা যজ্ঞ

শ্রী রাম রাজা। করছেন যজ্ঞ। চির দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাজকর্মে ইনি। হোমাগ্নিতে ঢালছেন ঘি, খাঁটি। বড় ভাগ্যবান, দেশের মাটি। বড়ই উনি বিজ্ঞ। সীতা পাচ্ছেন সাজা। ত্যাজ্য, পরিত্যক্তা তিনি। স্বামীর কাছে উনি অজ্ঞ। সোনার পত্নী পাশে। জীবন্ত পতি সিংহাসনে। প্রেমের সম্পর্ক করুন হাসি হাসে। পতি পত্নীর বন্ধন ছিন্ন। দেহে, মনে তাই তো ভিন্ন। জন্ম পরিচয় যাঁর মহর্ষির, রাজর্ষীর হল কর্ষণে এই তো জীবনের পরিণতি তাঁর। অশ্রু তাঁর জীবন বর্ষণে। বঞ্চিতা স্বামী পর্শনে। ঠাঁই নাই রাজ রাণীর পদ হর্ষনে। রাজার কোনও ভ্রুক্ষেপই নাই রাণীর অদর্শনে। ন্যায় পরায়ণ, প্রজা বৎসল তো তাই। পত্নী কী নন প্রজা? ন্যায় বিচারে তিনি নন কী বঞ্চিতা? প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কী সোজা? প্রশ্ন করে কলির সীতা। ভারতের অসহায় দুহিতা। আজও বাকি রয়ে গেছে অধিকার খোঁজা!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register