Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

হৈচৈ ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী তে ঈশানী রায়চৌধুরী (পর্ব - ৯)

maro news
হৈচৈ ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী তে ঈশানী রায়চৌধুরী (পর্ব - ৯)

চললুম ইউরোপ

সুইস রেলওয়ের এই ট্রেনগুলো দারুণ। SBB না কি যেন নাম। হন্তদন্ত হয়ে ট্রেনে তো ওঠা গেল, মনে মনে ভাবছি এখন জব্বর একখানা ঘুম লাগাতে হবে। যথেষ্ট দৌড়ঝাঁপ হয়েছে! ঘন্টাখানেক লাগবে এই জার্নিতে,আমি শুনে নিয়েছি। এখন বাপবেটার কাছ থেকে একটু দূরে বসতে হবে নয়তো বকবক করে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেবে। সুবিধেমত একটা সিটের খোঁজে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি...অনেক ফাঁকা সিট। একটা পরিবারকে দেখে খুব ভাল লাগল..... মহিলা মনে হচ্ছে ডাচ ( এই কদিনে একটু চেনা হয়েছে ) আর ভদ্রলোক এ‍্যফ্রো ইউরোপিয়ান বোধহয়। ভাল লাগল যে ভদ্রলোক ল‍্যাপ বেবিকে কোলে রেখেছেন আট-দশ বছর বয়সের বড় ছেলেরও টেক কেয়ার করছেন চমৎকার। আবার ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথাটাও তাঁর কাঁধে যত্ন করে ধরে আছেন।
আহা কি চমৎকার একটা উষ্ণ বলয়! যাই ওদের কাছে বসলেও মন ভাল হয়ে যাবে! ঠিক পেছনের রো তে বসব বলে এগোচ্ছি বাবাই বলল ' মা এদিকে এসো। ডানদিকে বসতে হবে,প্রায় সারা রাস্তা এই জেনিভা লেক আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলবে। এটাই এই জার্নির বিউটি!এদেশে এই লেক ৭৩ কিলোমিটার লম্বা আর বাকিটা আছে ফ্রান্সে ' বাপরে ৭৩ কিমি, বলিস কিরে? লেক আবার এত লম্বা হয় নাকি! ' ঠিক বলেছ এটা একটা বিস্ময়! তবে সেটা মাত্র ৬০ভাগ এই দেশে, বাকিটা ফ্রান্সের মধ‍্যে আছে। ' চোখ গোল গোল করে বাইরে তাকাতেই চোখ আটকে গেল। কি অসামান্য ল‍্যান্ডস্কেপ! দূরে নীল পাহাড় আর হাতের কাছে লেকের নীল জল, সবার ওপরে অসীম নীলাকাশ! আকাশে পাহাড়ে জলে যেন রংয়ের ফোয়ারা। বরফ আর মেঘের যুগলবন্দীও চোখ টেনে রাখছে । সমস্ত মনটা জুড়িয়ে গেল... চোখের ঘুম উধাও হয়ে কোথায় চলে গেল! কেবল একটা সুর বাজতে লাগল হৃদয় জুড়ে। " নীল আকাশের নিচে এই পৃথিবী আর পৃথিবীর 'পরে ওই নীলাকাশ".....আহা হেমন্ত মুখার্জী ! আজ রোদঝলমল দিন হওয়াতে আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই আলো,আকাশ.পাহাড় আর লেকের সুরবাহার। ঈশ্বরকে বললাম তোমার সৌন্দর্য ই তো ছড়িয়ে আছে পৃথাবীতে, একথা যেন অন্তর দিয়ে অনুভব করি! মানুষকে তুমি যে শক্তি দিয়েছ তাই দিয়ে সেও অসাধ‍্যসাধন করে চলেছে ! কোন দূরদেশ থেকে পাখির মত উড়িয়ে আমাদের এখানে এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে বসিয়ে দিয়েছে। ছেলেকে বললাম এই জায়গাটা কত উঁচু রে বাবাই? ' দাঁড়াও দেখে বলি। সমুদ্রতল থেকে ৩৮০ মিটার উঁচুতে। কোথাও কোথাও ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া আর সবচেয়ে বেশি গভীরতা ৩১০ মিটার '। গম্ভীর হয়ে বসে থাকা সহযাত্রীকে বললাম, কি গো কেমন লাগছে.... তুমি তো দেখছি হ‍্যাঁ ও কর না, হুঁ ও কর না। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন ভাল করে তাকিয়ে দেখ..... কখন একঘণ্টা পেরিয়ে যাবে টের পাবে না।
চলতে চলতে পথ ফুরিয়ে আসতে লাগল..... এখন আমাদের গন্তব‍্যের নাম কি জানেন....মন্ত্র (Montreux)। এই স্পেলিংয়ের এই উচ্চারণ কি করে হয় তা আমার মাথায় ঢুকল না। যাই হোক বাপু মন্ত্র যখন তখন জপ করতে করতে কি পাওয়া যায় দেখা যাক ! হঠাৎ একটা হাসির আওয়াজে দেখি দুজন বয়স্ক মহিলা নিজেদের মধ‍্যে দিব্বি হাসাহাসি করছে। বাঃ বলিরেখার পাশাপাশি ওদের মুখের হাসির রেখাগুলো একেবারে নিওন বাল্বের মত ঝকঝক করছে। সুন্দর পরিবেশের প্রভাব নিশ্চয় মানুষের মনেও পড়ে। অবশ‍্য আমাদের মত আনডার- ডেভেলপড দেশে তো আমরা এই সম্পর্ক নিয়েই বাঁচি । অনেক না পাওয়ার মধ‍্যেও যে বৈভব আমাদের আছে তা ই বা কটা দেশ পায়! সূর্যদেব ধীরে ধীরে পশ্চিমপথে পাড়ি দেওয়ার জন‍্যে প্রস্তুত হচ্ছেন। আর আমরাও মুগ্ধ হয়ে পথের রেশটুকু মনের খামে যত্ন করে ভরে রাখছি

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register