Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (অন্তিম পর্ব)

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (অন্তিম পর্ব)

রাজলক্ষ্মী

-বাসতাম। - আজ ? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কমলা। দুচোখ বেয়ে ঝরে চলেছে শ্রাবণের ধারার মতো ফোটা ফোটা বৃষ্টি। - যদি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো, তাহলে আজ আমরা পালাবো। - কোথায় ? - যেদিকে দু'চোখ যাবে । পারবেনা আমার সাথী হতে? আমার কাছে জামা কাপড় নেই তো। এখন নয়।আজ রাতে পালাবো।তুমি গোচগাচ করে রেডি হয়ে থাকবে। সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আমরা বার হবো। কোথায় দাঁড়াবো? -তেঁতুলতলায় বসবা।আমি ওখানে চলে আসব। সারাদিন রোজার পর ইফতার করে নামাজ পড়ল কমলা। তারপর জামা কাপড় সব গোছগাছ করে নিল। তারাবি পড়ে রাতের খাবার খেয়ে অপেক্ষা করতে লাগল, কখন সবাই ঘুমাতে যাবে। এক সময় সকলে ঘুমিয়ে পড়ে। কমলা বেরিয়ে পড়লো বাড়ি ছেড়ে। তারপর তেতুল তলায় এসে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। সারাদিনের ক্লান্তি একটু পা ছড়িয়ে বসে পড়লো। রাত বাড়তে থাকে। কলিমুদ্দিন আসেনা। একসময় গাছের গোড়াতেই ঘুমিয়ে যায় কমলা। মধ্যরাত্রি পার হয়ে সেহেরির সময় চলে আসে। রাত জাগানো দল গজল গেয়ে সকলকে ঘুম ভাঙাতে থাকে। পায়ে পায়ে চলতে থাকে গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। মাঝে তেতুলতলা দিয়ে যেতে হবে।সবাই থমকে দাঁড়ালো। কে ওখানে তেঁতুল গাছের গোড়ায় পা ছড়িয়ে বসে আছে? ছেলেদের দল এগিয়ে গিয়ে দেখে হাতেম আলির বড়ো মেয়ে কমলা। সবাই জিজ্ঞাসা করলো এত রাতে এখানে কেন? কমলা সমস্ত বিষয় তাদের কাছে বলল।ছেলেরা তখন দুজনকে সেখানেই দাঁড় করিয়ে অন্য দুজন কালিমুদ্দিকে ডাকতে গেল। কলিমুদ্দিন ও সারাদিন রোজা ছিল তারাবি পড়ে খেয়ে একটু গড়িয়ে নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।তার আর ঘুম ভাঙ্গেনি।পরিচিত কণ্ঠে নাম ধরে ডাকায় ঘুম ভেঙে গেলো।ছেলেরা কমলার কথা বলতেই কালিমুদ্দি একটা বড়ো ব্যাগ নিয়ে ওদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো। তেতুলতলায় এসে দেখে তখনও কমলা তেঁতুলগাছে হেলান দিয়ে বসে আছে। কালিমুদ্দিকে দেখে কমলা ডুকরে কেঁদে ওঠে। কালিমুদ্দি কমলা হাত ধরে বললো ভুল হয়ে গেছে। চলো এখনও রাত বাকি আছে। আমরা বেরিয়ে পড়ি। চোখ মুছতে মুছতে কমলা উঠে দাঁড়ালো।তারপর গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।মাঠ পেরিয়ে বড়ো পাকা রাস্থাধরে তারা যদুরহাটি এসে পৌঁছালো। কমল কোনো দিন দুরে কোথও যায় নি।সে ভয় করছিল। এই প্রথম অজানা পথে পাড়ি জমালে কালিমুদ্দিনের হাত ধরে। তিনটে চল্লিশের প্রথম বাস এলো কোলকাতা গামী।দু'জনে উঠে বসলো বাসে এক নতুন ঠিকানার নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register