Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ২৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ২৩)

কেমিক্যাল বিভ্রাট 

দরজার কাছে গিয়ে মাসির উদ্দেশে হাঁক পাড়ার আগে কী মনে হল ওঁর বাবার। ফের ঘরে ঢুকে ঔপমানব যে-খাটের উপর বসে স্লেট-পেনসিল নিয়ে লিখছিল, তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবং দাঁড়ানো মাত্র যেন আকাশ থেকে পড়লেন তিনি। ছেলে তাঁর কথা বিন্দুবিসর্গ বুঝবে না জেনেও বললেন, কী রে, আমি যেগুলি লিখে দিয়ে গেলাম হাত বোলানোর জন্য, সেগুলো কোথায়? নিশ্চয়ই তোর মা ওগুলি মুছে দিয়ে এগুলি লিখে দিয়ে গেছে, না? অঙ্কের মাস্টারনি তো... অঙ্ক ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না... ভাবে অঙ্কই সব। আরে বাবা, শব্দ হল ব্রহ্ম। আগে ওটা শিখতে হয়। স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনবর্ণ না শিখলে কিচ্ছু হবে না... নাঃ, তোর মাকে নিয়ে আর পারা যায় না! কিন্তু তোকে নিয়ে যে এখন বসব, তারও উপায় নেই। আজ আবার প্রথম পিরিয়ড থেকেই আমার ক্লাস। ঠিক আছে, তোর মা যখন দিয়ে গেছে, ওটাই শেখ। ওঁর বাবা যখন একা একা বকবক করছেন, ঔপমানব তখন স্লেটের উপরে আঁকা ওই চিহ্নগুলির উপরে ছোট ছোট হাত দিয়ে হাতড়াচ্ছেন, আর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চাইছেন। সেটা দেখে ওঁর বাবা ঝপ করে ওঁর পাশে বসে ওই চিহ্নগুলির উপর আঙুল রেখে রেখে বলতে লাগলেন, এটা যোগ চিহ্ন, এটা ভাগ চিহ্ন, এটা গুণ চিহ্ন আর এটা হল বিয়োগ চিহ্ন। তার পর ওর গাল আলতো করে টিপে বললেন, এগুলো সব তোমার মায়ের ডিপার্টমেন্ট, বুঝেছ? মা স্কুল থেকে ফিরলে তার কাছ থেকেই শিখে নিয়ো, কেমন? এক দুই শেখার আগেই অঙ্কের এই চিহ্নগুলো খুব ভাল করে চিনে গিয়েছিলেন ঔপমানব। কিন্তু পরে যখন তাঁকে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ শেখানো হতে লাগল, তিনি তখন বুঝেই উঠতে পারলেন না, দুই আর দুইয়ে কেন চার হয়, পাঁচ হয় না কেন! ছয় হলেই বা ক্ষতি কী! না, অঙ্ক তাঁর মাথায় ঢুকত না। তাঁর মাথার মধ্যে তখন আর ওই চিহ্নগুলি নয়, শুধু ছোট বড় নানা মাপের অসংখ্য শূন্য ছোটাছুটি করছে। কখনও সেগুলি দল বেঁধে আবার কখনও সখনও দলছুট হয়ে একা একাই বসে পড়ছে নয়, সাত, পাঁচের একেবারে গা ঘেষে। উনি এ সবের কিছুই বুঝতে পারতেন না। ক্লাস ওয়ানে তিনি যখন পরীক্ষা দিলেন, তাঁর মা-বাবা ভেবেছিলেন, তিনি এ বার পরীক্ষায় নির্ঘাত ইয়াব্বড় একটা গোল্লা পাবেন। কারণ, পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যেই খাতা জমা দিয়ে উনি হল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। আসলে কোনও আঁকিবুকি নয়, বড় বড় জটিল অঙ্কের খুব সহজ সমাধানের এক-একটা সাংকেতিক চিহ্ন। সেই চিহ্নগুলি সম্পর্কে সড়গড় হতেই তাঁর বাড়ি থেকে যখন তাঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হল, তিনি প্রথমেই বললেন, আমি বিয়ে করতে রাজি আছি। তবে একটা শর্ত আছে। আর তা হল, তাঁকে দেখতে শুনতে যেমনই হোক না কেন, সে যেন অঙ্ক জানে। অঙ্ক বোঝে এবং অঙ্ককে ভালবাসে। হ্যাঁ, সে রকমই একটা মেয়ে পাওয়া গিয়েছিল। যে অঙ্ক ছাড়া আর কিছু বোঝে না। অঙ্ক বলতে একেবারে পাগল। তিনি তাঁকেই বিয়ে করেছিলেন। যিনি ইচ্ছে করলে শুধু কলেজেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েও অঙ্কের অধ্যাপিকা হিসেবে নিয়োগ হতে পারতেন। তার জন্য যা যা লাগে, তাঁর সবই ছিল। কিন্তু কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে গেলে যে সময় দিতে হয়, যে ঝক্কি সামলাতে হয়, তিনি সে সব থেকে শত হাত দূরে সরে থাকতে চেয়েছেন। তিনি কেবল চেয়েছেন অঙ্ককে আরও বেশি করে সময় দিতে। অঙ্কের মধ্যে ডুবে থাকতে। ফলে তাঁর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত তিনি যখন গাঁটছড়া বাঁধলেন, তখন এক-এক করে সব ক’টা চিহ্নের সঙ্গেই তাঁর পরিচয় হয়ে গেল। উনি এখন মোটামুটি অঙ্কের প্রায় সবগুলি চিহ্নকেই চেনেন। কিন্তু গত ক’দিন ধরে যে চিহ্নগুলি তাঁর সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেগুলি যে কীসের সাংকেতিক চিহ্ন, উনি সেটাই বুঝতে পারছেন না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register