Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৩২)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৬৪
বর্ষাকাল এলে কার না ইলিশ মাছের কথা মনে পড়ে। আমিও সেই পথের পথিক। মনে পড়ে গ্রামের বাড়ির কথা। সন্ধে থেকে বৃষ্টি। সব বাড়ির গৃহস্থরা যখন মনে মনে ঠিক করে নেয় আজকের মতো আর কোনোভাবেই বাইরে যাওয়া নয় তখন আমাদের বাড়ির কর্তা অর্থাৎ আমার বাবা সন্ধে থেকে ঘুমিয়ে নিয়ে একটু রাত করে দোকান বের হন। গ্রামের বাজার তাও আবার রাত করে! তখনও হয়ত বৃষ্টি টিপটিপ করে পড়েই চলেছে। মুড়ি খেয়ে হ্যারিকেনের আলোয় আমি মুখে আওয়াজ করে (মায়ের জন্যে মুখ বন্ধ করে পড়ার কোনো উপায় ছিল না। মা মনে করত চুপিচুপি পড়া আসলে কোনো পড়াই নয়) পড়ছি। একটু রাত হলেই ঢুলুনি আসত। অন্যদিন হলে মা বলত, চোখে জল দিয়ে একটু পায়চারি করে আয় ঘুম কেটে যাবে। কিন্তু এইরকম বর্ষার দিনগুলোতে মা কখনও বারণ করত না। অবশ্য ভাতও দিত না ;  বলত, বাবা বাজার থেকে ফিরলে ভাত খাবি। বুঝতে পারতাম বাবা বাজার থেকে আজ নিশ্চয়ই কিছু নিয়ে আসবে।
আসলে বাজারে যাওয়ার আগে বাবা মাকে বলে যেত, আজ ইলিশ মাছ আনতে পারে। আর তার জন্যেই মা ভাত না খেয়েই একটু ঘুমিয়ে নিতে বলত। কারণ খেতে আজ অনেক রাত হবে।
কিন্তু রাতে ইলিশ মাছ কেন? মাছ তো মানুষ দিনেরবেলাই বাজার থেকে কেনে। আর দুপুরে তা রান্না হয়। কিন্তু আমার বাবার সকালে বাজার যাওয়ার কোনো সময় ছিল না। শুধু তাই নয় সকালে মাছ কেনার মতো পকেটের অবস্থা বাবার কোনোকালেই ছিল না। আর ইলিশ মাছের তো কোনো কথাই নেই। রাত হলেই মাছের দাম একটু কমত। আর বর্ষাকাল হলে সেই মাত্রাটা আরও একটু কমত। সেই সুযোগটাই বাবা নিতো।
গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম বাবা ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। মায়ের মাছ কোটা হয়ে গেছে। এবার পুকুরে ধুতে যাবে। আমাকে ঘুম থেকে তুলতো একটাই কারণে, আমাকে রেখে বাবা মা পুকুরে যাবে। দিদি উঠতো না, ঘুমিয়ে থাকতো।
গভীর রাতে ইলিশ মাছের গন্ধে সারা বাড়ি ভরে উঠতো। আমি ঘুম ঘুম চোখে ইলিশ মাছের তেল দিয়ে ভাত মেখে খেতাম। কোথাও কেউ জেগে নেই। সারা গ্রাম ঘুমিয়ে আছে। আর আমাদের বাড়িতে চলছে ইলিশ উৎসব। আজও এমন বাড়ির কোনো দোসর খুঁজে পাই না।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register