Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় বিজন মণ্ডল

maro news
কবিতায় বিজন মণ্ডল

আজও ভালোবাসি তোমায়

তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম বসন্তের অন্তিম লগ্নে । বারান্দার রেলিং-এর ধারে এলো চুলে তুমি দাঁড়িয়েছিলে । তুমি রোজ বিকেলে তোমাদের দক্ষিণ বারান্দার পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে কোকিলের গান শুনতে , একটি কোকিল রোজ এসে বসতো রাস্তার ধারে জাম গাছটির ডালে তোমাকে গান শোনাবে বলে । কয়েকটি পরিযায়ী পাখিও ছিল ওরা বোধ হয় তোমাকে দেখার ছলে ভুলে গেছে আপন দেশে ফিরে যেতে । তুমি মায়াবী চোখে উদাস মনে তাকিয়ে থাকতে । কী যেন ভাবতে তুমি ! আমিও রোজ লুকিয়ে দেখতাম তোমায় । এমন ভাবে কেটে গেল কত কত বসন্তের বিকেল বেলা । তুমি একদিন মুচকি হাসলে বোধ হয় আমাকে দেখে । সে দিনের পর থেকে আর লুকিয়ে নয় একেবারে তোমার সামনে এসে তোমাকে দেখতাম । তুমিও বিভোর হয়ে লাজুক চোখে আমাকে দেখতে । একদিন বিকেলে তুমি নদীর পাড়ে বুড়ো পলাশ গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে আমি তোমার সামনে । তুমি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে আমাকে বললে, কেন দেখো আমায় ? আমি কোন উত্তর দিতে পারেনি সেদিন । শুধু চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে ছিলাম ভালোবাসি তাই । তুমি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করেছিলে । পলাশ ফুল ঝরে পড়েছিল বাতাসের মৃদু ছোঁয়ায় । ছুঁয়েছিলাম তোমায় যখন তুমি ছুট্টে পালাতে চেয়েছিলে । আমি তোমার আঁচল ভরিয়ে দিয়েছিলাম বসন্তের গন্ধে । এমনি করে তোমার প্রেমের গন্ধে ভরিয়ে রেখেছিলাম নিজেকে ।
তার পর হঠাৎ করে কোথায় যেন হারিয়ে গেলে তুমি । তোমাকে আর রেলিং- এর ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না । কোকিলের গান আর শুনতে পাই না ।
আমি আজও রোজ নদীর ধারে যাই তোমাকে খুঁজি বুড়ো পলাশ গাছটার নিচে , একটি বার তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য.. কিন্তু তোমাকে আর পাই না ।
এমনি করে কেউ হারিয়ে যায় বলো ? একটুও কষ্ট হয়নি তোমার ? তুমি আমার বুকে মাথা রেখে কথা দিয়েছিলে কোন দিন আমাকে ছাড়া থাকবে না ! তবে কি করে আছো তুমি ! একটুও ভাবলে না আমার কথা ? আমিও যে তোমার হয়েই থাকতে চেয়েছিলাম । আমার ভালোবাসাকে ছেড়ে কী করে পালিয়ে গেলে তুমি !
আজ বড্ড একা হয়ে গেছি তোমাকে হারিয়ে, হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে । আর একটি বার তোমাকে কাছে পেতে চাই আর একটি বার তোমার আঁচল ধরে বলতে চাই খুব ভালোবাসি তোমায় । দু'হাত তুলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ফিরে এসো আমার কাছে যদি পারো মরণের ওপার থেকে !

এখনো ওরা কাজ করে

এখনো ওরা কাজ করে । সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে অশান্ত জগতে । কারো ঘরে ওদের ছোট্ট শিশুটি তিন দিন না খেয়ে, কেউ অসুস্থ স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে । মরন ওদের বার বার আসে, মরনের আগে ।
এখনো ওরা কাজ করে । কেউ কয়লা খনিতে, আবার কেউ অন্যের জমিতে । কোমর বেঁধে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে ধানের বোঝা মাথায় করে । দু'মুঠো ভাতের আশায় অন্ধকার খনিতে নামে জীবন হাতে করে ।
এখনো ওরা কাজ করে । পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে, অন্যের বাড়িতে বাসন মাজে । খিদের জ্বালায় পেটে গামছা বেঁধে, বাবুদের বাড়িতে রান্না করে । সময়ের করাল গ্রাসে অশ্রু লুকিয়ে কেবল কাজ করে ।
মহামারীতে মানব জীবন যখন ঘরবন্দী, ওরা মুখ ঢেকে লজ্জা বিকিয়ে দোরে দোরে কাজ খুঁজে বেড়ায় । হয়তো সারা দিনে একটুও হয়না রোজগার ; দিন শেষে শুধু জল ফোটে, ফোটে না ভাত । তবু ওরা কাজ করে । আদি অনন্ত কাল ধরে এখনো ওরা কাজ করে ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register