Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

দিনলিপিতে তৃণা ঘোষাল - ২

maro news
দিনলিপিতে তৃণা ঘোষাল - ২

বাড়ির গল্প ২

আমরা রায়গঞ্জের যে বাড়িটাতে থাকতাম সেখানে একটা বারান্দা ছিল।আর সামনে বাস স্ট্যান্ড। আমি ছোটবেলাতে খুব অসুখে ভুগতাম।তখন চুপটি করে বারান্দায় বসে বসে লোকের যাওয়া আসা দেখতাম।কত লোক,কত হইচই।আমি মনে মনে কত আবোলতাবোল ভাবতাম।একবার মায়ের ওপর রাগ করে ওই বাসস্ট্যান্ড অবধি চলে গেছিলাম।বাবা গিয়ে অনেক আদর করে আর চকোলেট লজেন্সের লোভ দেখিয়ে আমাকে বাড়ি নিয়ে এসেছিল।দুপুরবেলাতে বাসস্ট্যান্ডটা চুপচাপ হয়ে যেত।মা দুপুরে যেদিন যেদিন ভিসি আরে সিনেমা দেখত সেদিন সেদিন আমার বারান্দায় যাওয়ার পারমিশন থাকত।আমি বারান্দার গ্রিল বেয়ে এভারেস্টে ওঠা প্র‍্যাকটিস করতাম।বারান্দায় এক কোনে একটা মানিপ্ল্যান্ট থাকত।আমার কেমন একটা ধারণা ছিল ওই গাছটা রূপকথার টাকার গাছেরই মত।গভীর রাতে হয়তো বা টাকা ঝরে পড়ে ওখান থেকে। রায়গঞ্জ থেকে আমরা উত্তরপাড়া চলে আসি ছিয়ানব্বই সাল নাগাদ।আসার সময় মা বাবার মন খারাপ, আমারই বরং তখন আসার উত্তেজনা,দাদু ঠাম্মার কাছে যাচ্ছি যাচ্ছি একটা ব্যাপার।বাড়ি এসে যখন আসবাবগুলো সাজিয়ে রাখা হচ্ছিল আমাদের ঘরে তখন হঠাত করে গলার কাছটা ব্যাথা করে উঠে খুব কান্না পেয়ে গেছিল।লুকিয়ে লুকিয়ে অঝোরে কেঁদেছিলাম আমি। ওই যে বারান্দাটা তে আর কোনদিন বসা হবে না,আশ্রমে মাস্টারমশায়ের কাছে আর কখনো যোগব্যায়ামের ক্লাসে যাওয়া হবে না,ইচ্ছে হলেই বাবাই মান্তার সাথে গল্প করতে পারব না,ঝিলিক মামারবাড়ি আসবে কিন্তু আমরা আর একসাথে পুতুলের বিয়ে দেব না - এইসব অর্থ হীন ভাবনা গুলো ঝুপ্পুস হয়ে চোখ দিয়ে নামছিল। রায়গঞ্জে আর কখনো যাওয়া হয় নি।মাঝে মাঝে মনে পড়ে বাড়িটাকে।ওই তো দোতলা বাড়িটা।কেমন আছে কে জানে।ওই বারান্দাটা যেন খুব ভাল থাকে। ভাল থাকুক আর ভাল রাখুক সব্বাইকে।

চলবে...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register