Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্ঘ্য রায় চৌধুরী (পর্ব - ১৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্ঘ্য রায় চৌধুরী (পর্ব - ১৭)

মুনকে লেখা‌ চিঠিগুলোর থেকে

সতেরো

সূদীর্ঘ রজনীর পর যেমন দিবাকর তাঁর প্রসন্ন দ‍্যুতির সংস্পর্শে বিশ্বজগৎকে আলোকিত করে তোলেন, ভয়ঙ্কর নিরবচ্ছিন্ন দূর্যোগের পর সহ‍্যাদ্রীর দিগন্ত বিস্তৃত বনাঞ্চলও অংশুমালীর সেই প্রসন্ন আলোকস্পর্শে হেসে উঠলো, কিন্তু আমি ওই মাইলের পর মাইল বনের ভেতর সেই ছোট্ট কিকউয়ী গ্রামে আটকে পড়লাম।কারন নীরার ওপর সেই কাঠের সাঁকো পুরোপুরি জলমগ্ন, আর সহ‍্যাদ্রীর ওই উপত্যকা থেকে বাইরে আসার একমাত্র পথ হলো ওই সাঁকো, এছাড়া আর উপায় নেই। বিঠঠলও আমার অবস্থা বুঝতে পারল, বলল,"ঘরি যাইছে কা? পন ই হালৎ মধ‍্যে কাসা যাইছে?" বাড়ি যাবে তুমি? কিন্তু এই অবস্থায় কি করে যাবে? আমি নীরার দিকে তাকালাম। ছোট্ট পাহাড়ি নদী, জানিনা এর উৎস কোথায়, কিন্তু ভীষণ খরস্রোতা, বহু দূর থেকেও নীরার দিকে তাকালে ওই উন্মত্ত স্রোতের প্রাবল্য বোঝা যাচ্ছিল। নীরার ওপারে একটা ছোট্ট টিলার বুক চিড়ে বেরিয়ে গেছে পায়ে চলা পথ, ওই পথ আরো অনেকটা হেঁটে শেষ হয়েছে আরেকটা সাঁকোর কাছে, সেই সাঁকোর নীচে গভীর গিরিখাত তার নীচে দিয়েও বয়ে গেছে নীরা, তারপর সেই ব্রীজ পার হয়ে অনেকটা চড়াই ভেঙে সেই বানেশ্বর শিবমন্দিরের রাস্তা, যার কথা তোমাকে আগের চিঠিতে লিখেছি। ওখান থেকে জঙ্গল পার হয়ে একটা ছোট গঞ্জ এলাকা, তারপর আরো‌ বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলে নসরাপুর ফাটা, ওখানেই রাখা আছে আমার বাহন।নসরাপুর থেকে পুনে পঞ্চাশ কিলোমিটার। কিন্তু মুন আমি যতবার জল মাপার জন্য নীরার দিকে তাকাতাম, এক দিগন্তপ্লাবি দৃষ্টিনন্দন সবুজ আমার চোখের ওপর যেন তার নরম করস্পর্শ বুলিয়ে দিত, আমার মনে হত কি হবে আর ফিরে, তার থেকে এখানেই থেকে যাই সব ছেড়েছুড়ে। বিঠঠলের সঙ্গে এই বনভূমি, এই জ‍্যোৎস্নালোকিত সহ‍্যাদ্রীর গভীর উপত্যকায় বিঠঠলের মতই বেঁচে থাকি। কিন্তু তার উপায় ছিল না।আমরা শহুরে জীব।নাগরিক সভ‍্যতার ফাঁসে আটকে পড়া অসহায় মানুষ।যদিও এখন মাঝেমাঝে মনে হয় মানুষ কারা? আমরা? না বিঠঠলের মত ওই বন পাহাড়ের গিরি কন্দরে অভুক্ত সেইসব সহজ সরল নির্লোভ মানুষরা, যাদের আমরা আদিবাসী নাম দিয়ে তাদের প্রান্তিক সীমান্ত নির্ধারণ করে দিয়েছি? এবার বোধহয় নতুন করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। ওই দুর্যোগ থেমে যাওয়ার পর একদিন আমরা রাজগড় ফোর্টের নিচের গভীর উপত‍্যকার সেই আমলকী বনে গেছিলাম। আমলকী গাছগুলো ওই সূদীর্ঘ বৃষ্টির পর সূর্যকিরণের স্পর্শে উজ্জ্বলতায় আরো ঝলমলিয়ে উঠেছে, মাটি তখনও ভেজা, বনের ভেতর থেকে সেই পার্বত্য পাথুরে মাটির সুগন্ধ আমাদের মোহিত করে দিলো।সেই নির্জন সুগন্ধি আমলকী বনের ভেতর একটা পাথরের ওপর আমরা অনেক্ষণ বসে ছিলাম।সামনেই সহ‍্যাদ্রীর গগনচুম্বী নীলাভ পাহাড় চূড়ায় মারাঠা বীরত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল রাজগড় ফোর্ট।ঝরঝর করে বয়ে আসছে হাওয়ার শব্দ।খাপ খোলা তলোয়ারের মত ঝকঝকে সূর্যালোক সেই রাজগড় দূর্গের মাথার ওপর স্বর্নাভ শিরস্ত্রাণের মতোই শোভা বর্ধণ করে চলেছে।

চন্দ্রতাড়িত।

মুনকে লেখা চিঠি এই পর্যন্তই, এর পরে আর লিখিনি। আমার স্বত্বার একটি অংশ আবহমানকাল ধরে সহ্যাদ্রীর ওই অসামান্য বন পাহাড়ের গভীরে, বিঠঠলের সঙ্গে থেকে যেতে চেয়েছে। তাই এই ওবধি লিখেই এ লেখাতে ইতি টেনেছিলাম। শেষে আর একটি পর্বই বাকি থাকে। ওই পর্বটি লেখার ভার প্রণম্য পাঠকের কল্পনাকেই দিলাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register