Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ২৫)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৫৪
আমাদের ঘরেই ছিল পথের পাঁচালীর হরিহর। আমার বাবা। বাবার সঙ্গে অনেক জায়গাতেই যেতাম। রাতের অনুষ্টানগুলো একটাও বাদ যেত না। বিয়ে বাড়ির অনুষ্টান থাকলে রাত দুটো আড়াইটে বেজে যেত। গ্রামের ধুলো ওঠা রাস্তা। বাবা আর আমি রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফিরছি। বাবার হাতে হ্যারিকেন। বাবা এমনিতেই বেশি কথা বলত না। রাতের রাস্তায় তো কথাই নেই। আমি আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাতকে পড়বার চেষ্টা করতাম। কোনো কোনো জায়গায় এসে বাবা দাঁড়াত। চারপাশ এতো চুপচাপ যে আমরা আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম। মুখে না বললেও বাবার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে যায় ------ সেও রাতের সময়টুকু তার নিজের মতো করে রাতকে পড়ছে।
৫৫
বছর পাঁচেক আগের কথা। আনাজ বাজারে মৃণালদার সঙ্গে দেখা। আমার বাজার করাটা যেন একটা যন্ত্রণার মতো। শুরু থেকেই শেষ হওয়ার কথা ভাবি। মৃণালদা কিন্তু ঠিক এর উল্টো। উনি বেশ ধরে ধরে সময় নিয়ে বাজার করেন। কি একটা বিষয়ে কথা হতে হতে আমি হঠাৎ বলে বসলাম, " আচ্ছা মৃণালদা, শেষ কবে মনের কথা কাউকে বলছেন ? "দেখলাম মানুষটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেলেন। খুব কাছে দাঁড়িয়েও আমি যেন তাকে ছুঁতে পারছি না। " ঠিক বলেছ ভাই, অনেক দিন হলো কাউকে মনের কোনো কথা বলতে পারি না। " মনে হলো, উনি আরও কিছু বলতে চান। আমি আরও দু'একটা কথা বললাম, " একবার ভেবে দেখুন, বৌদির কোনো কথা বলার ইচ্ছা হলে আপনাকে বললেন। ভাইপো, ভাইঝির কোনো কথা বলার দরকার হলে ওরা আপনাকে বলবে। কিন্তু আপনি ? কোনো সুযোগ নেই। আপনাকে সব কথা বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখতে হবে। " দেখলাম, মৃণালদা চোখ বুজে। একটু পরেই দেখি উনি কাঁদছেন। আমি তো বেশ সমস্যায় পড়ে গেলাম। ভাবতেই পারি নি, কথাটা ওনাকে এতখানি আঘাত করবে।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register