সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৪১)

একচল্লিশ

আমি লুলিয়াকে বললাম, “তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে”। লুলিয়া হঠাৎ বলে উঠল, ” হ্যাপি বার্থডে অর্ক “। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “তুমি জানলে কি করে? লুলিয়া নিজের মাথার তালুতে হাত দিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলো। আমার কথা শুনে হাতটা থামিয়ে বললো, “মাথার এখানটায় লেগেছে। কিন্তু ফোলেনি দেখছি। তোমার জন্মদিন আমি ঘটনাচক্রে জানতে পেরেছি। তুমি যে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল, অ্যাকসিডেন্ট এর পর তোমার কাছ থেকে পাওয়া পার্সটা আমাকে দিয়েছিলো রাখার জন্য। আমি সেটা বাল্মীকিকে দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার অনুমতি ছাড়াই খুলে দেখে নিয়েছিলাম। সেখানে একটা ব্লাড ডোনার কার্ডে তোমার ডেট অফ বার্থ লেখা ছিল। ক্ষমা করে দিও প্লিজ “। বলে লুলিয়া মুখটা কচু মাচু করে হাত জোর করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করলো। আমি হেসে উঠলাম। সাথে সাথে লুলিয়াও। বুঝলাম লুলিয়া এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। তার পর ও বললো, “জানো? আজ সকাল থেকে তোমার জন্য লাঞ্চ বানিয়েছি। ভেবেছিলাম বার্থডের সারপ্রাইস ট্রিট দেবো। কিন্তু মাথা ঘুরে পরে সব ভেস্তে গেল। আমি পাল্টা বললাম, “আরে ট্রিট তো আমার দেওয়ার কথা!সেটা অন্য দিন হবে। আজ তোমার হাতের রান্না খেয়ে সেলিব্রেট করবো। রোজ বাল্মীকির হাতের রান্না খেয়ে খেয়ে বোরে হয়ে গেছি ‘। লুলিয়া বললো, “কি করে জানলে যে আমি তোমার বাল্মীকির মতো বোরিং রান্না করিনা? আর নিত্য নতুন রান্না খেতে ইচ্ছে হলে বিয়ে কর না কেন? দেখবে তখন তোমার বৌ কত সুন্দর সুন্দর রান্না করে তোমায় যত্ন করে খাওয়াবে”। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম লুলিয়া এতক্ষণে উঠে দাঁড়ালো। বসা থেকে ওঠার সময় একটু টোলে গেল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ধরতে গেলাম। ও বলে উঠল, “নানা ধরতে হবে না। আমি ঠিক আছি। আই ক্যান ম্যানেজ “। আমি বললাম, “মনে হয় তোমার প্রেসার ফল করেছে। একটা ডাক্তার ডাকা উচিত”। লুলিয়া বললো, ” ছাড় তো মাঝে মধ্যে আমার ওরকম হয়। তুমি যদি কিছু মাইন্ড না কর একটু বসার ঘরে বসবে? আমি একটু চেঞ্জ করে আসছি “। ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই’। বলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বসার ঘর গিয়ে বসলাম।
আমি বসে বসে ভাবছি। প্রথমে ঘরে ঢুকে লুলিয়াকে ওই অবস্থায় দেখে ভীষণই ঘাবড়ে গেছিলাম। এখন ও সুস্থ দেখে বেশ ভালো লাগছে।
বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা করেছিলাম। কিন্তু একটা কথা ভেবে খুব অবাক লাগছে। লুলিয়া নিশ্চই বুঝতে পেরেছে ও কি অবস্থায় অজ্ঞান হয়েছিল। বাথরুম এর দরজাতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায়। তাহলে খাটে এনে সোয়ালো কে? নিশ্চই আমি। ওকে নাইটি পরালো কে? নিশ্চই আমি। অর্থাৎ আমি সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখেছি। একজন নারীর সম্পূর্ণ দেহ পরপুরুষ দেখে নিলে যে আড়ষ্টতা থাকার কথা সেটা ওর মধ্যে নেই। ও আমার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করছে এটা বেশ আশ্চর্যের। ওকি সব বুঝেও অস্বস্তিকর পরিবেশ এভোয়েড করার জন্য স্বাভাবিক আচরণ করছে? আমি লুলিয়াকে সব ঘটনা বলে ক্ষমা চেয়ে নেবো? না সেটা বোধহয় ঠিক হবে না। লুলিয়া বুদ্ধিমতী মেয়ে। ও নিশ্চই জেনে বুঝে ব্যাপারটা এভোয়েড করছে। তাহলে ব্যাপারটা খোঁচানো উচিত হবে না। প্রসঙ্গটা ওঠালেই অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। হঠাৎ নাকে একটা সুন্দর গন্ধ এল। দেখলাম সাদা একটা শাড়ি পরে লুলিয়া ঘরে ঢুকলো সবই সাদা ড্রেস। শাড়ি সাদা ব্লউস সাদা, হাতে চুরির গোছা, কানের দুল,নাকছাবি, গলার হার এমনকি কপালের টিপটাও সাদা পড়েছে। মোটা কালো বিনুনি করা চুলে মোটা বেলফুলের মালা জড়িয়েছে। বেলফুলের স্নিগ্ধ গন্ধ আমার খুব প্রিয়। এই বেলফুলের গন্ধটাই কিছুক্ষণ আগের থেকে পাচ্ছিলাম। বুঝলাম লুলিয়া ওর দেশীয় সাজে সেজেছে। কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে ওকে। মনে হচ্ছে শুভ্রবসনা দেবী সরস্বতী, আমি উঠে ওকে ফুলের তোড়াটা দিলাম। ও দারুন খুশি হয়ে বললো, ” থ্যাংক ইউ। অর্কিড আমার খুব ফেভারিট “। আমিও না বলে পারলাম না, “আর আমার বেল ফুল”। লুলিয়া পেছনে সরিয়ে রাখা ওর হাত দুটো সামনে এনে আমার হাতে কিছু একটা দিয়ে বললো, “দিস ইস ফর ইউ, হ্যাপি বার্থডে, “। আমি ছোট্ট প্যাকটা খুলে দেখলাম একটা রিস্টওয়াচ।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।