Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অনিরুদ্ধ গোস্বামী (পর্ব - ১৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অনিরুদ্ধ গোস্বামী (পর্ব - ১৫)

অদৃশ্য প্রজাপতি

  সাড়ে এগারো টা নাগাদ আবাদ প্লাজা র রেস্টুরেন্ট এ আমি ,কুটটি আর জিনু। জিনু আমাদের অনেকদিনের ডিস্ট্রিবিউটর। তার কাছে জানলাম ত্রিবান্দ্রাম এর কোম্পানি টির মালিক একজন ডাক্তার ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু ডাক্তার। কোম্পানি টি বিসনেস করে বিশেষ কয়েকটি জায়গায় মানে "পকেট সেল"। আর পুরোটা চলে ডাক্তার দের কন্টাক্ট এর ওপর। সেলস ফোর্স এর কাজ যোগাযোগ টি ঠিক রাখা বিভিন্ন সার্ভিস এর মাধ্যমে। কোম্পানির অ্যানুয়াল রিপোর্ট এ খুব ভালো নেই, প্রফিট এ চলছে না। এই প্রোডাক্ট টি তুরুপের তাস। এবং এটি ঠিক না দাঁড়ালে কোম্পানি খুব সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে না। লাঞ্চ এর পর আমি আর কুটটি অফিস এ গেলাম। তাদের আর আমাদের প্রোডাক্ট টি পাশাপাশি রেখে তুলনা করে দেখলাম হুবহু এক। একটা তালিকা করলাম প্রথমে। কুটটি বললো "নীল আপনি লিখুন আমি বলে যাচ্ছি" ১]১০ টি করে ভায়াল একটি স্ট্রিপ এ ২ ]৫০ টাকা পুরো স্ট্রিপ মানে ৫ টাকা একটি ভায়াল ৩]এম্বার রং এর ভায়াল। ৪] প্যাকিঙ একই রকম ৫]দশ টি ভায়ালএ একটি ফ্রি (১০% ট্রেড অফার)। মানে আমাদের বিসনেস প্ল্যান পুরো নকল করা হয়েছে। কিছু ইনফরমেশন যেমন Amber রঙের ভায়াল , ফটো সেনসিটিভ প্যাকেজিং, দাম এবং ট্রেড অফার যা কেবল আমি আর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানতাম। আর কিছুটা বিন্সি। এরা জানলো কি ভাবে? পুরো ব্যাপারটা ৩৬০ ডিগ্রী চিন্তা করতে হবে ও একটা SWOT-সট (স্ট্রেংথ,উইকনেস ,অপর্চুনিটি ,থ্রেট ) এনালাইসিস করতে হবে। এই এনালাইসিস মার্কেটিং এর এক কার্যকর পদ্ধতি। এই অবস্থায় কি করণীয় আমাকে একটা দিশা পেতে হবে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে-কর্পোরেট ওয়ার । টিকে থাকা আর জেতার লড়াই। কুটটি জি কে বললাম কাল আমি বসবো তার সাথে আর সিদ্ধান্ত নেবো কি কি করণীয়। বিন্সি কে ডেকে নিলাম চেম্বার এ। "পেইন ইস ইনভিটেবল বাট সাফারিং ইস অপশনাল " -যন্ত্রনা অবশ্যম্ভাবী ,কিন্তু তার থেকে কষ্ট পাওয়া টা নিজের ওপর-- আমার প্রিয় এক লেখকের কথা । যদিও কথাটা স্পোর্টস এর ওপর বলা কিন্তু জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতে অবিচল রাখতে খুব ই সাহায্যও করে। বিন্সি র সাথে বসে আমরা ঠিক করলাম আমাদের এই প্রজেক্ট এ ভালো কি কি আছে আমাদের হাতে মানে স্ট্রেংথ কি কি ? বিন্সি নোট করে বললো আমাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি , ভালো গুণগত এম্বার রঙের ভায়াল ,যেখানে তাদের ভায়াল গুলি ভালো মানের নয়। আমাদের সক্ষম সেলস ফোর্স ,প্রশস্ত প্রেসক্রাইবার বেস। আমাদের গুণগত প্যাকেজিং। আমি বললাম দুর্বলতা একটাই আমরা প্রোডাক্ট লঞ্চার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান এ। কারণ আমরা জানতাম না তারা এতো তাড়াতাড়ি মার্কেট এ লঞ্চ করে দেবে। বিন্সি -কিন্তু তারা ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ পিছিয়ে কিভাবে তাড়াতাড়ি জাস্ট আমাদের প্ল্যান কপি পেস্ট করে দিলো। ইটস এ কেস অফ সাবোটাজ-অন্তর্ঘাত! নীল -বিন্সি এটা আমি খুঁজে বার করবোই তার আগে প্রজেক্ট টা কে জেতাতে হবেই। ইটস এ চ্যালেঞ্জ "এই উইল শো ইট ইন সেলস ফিগার " । সুযোগ আমাদের রয়েছে। আমরা ডাক্তার দের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবো আমাদের গুণগত মান ,সায়েন্টিফিক ডাটা আর পেশেন্ট দের সুবিধার জন্য আমরা কি করছি । ডাক্তার রা তখনি খুশি হন যখন তাদের পেশেন্ট রা সুস্থ আর খুশি থাকে। দুটোই আমরা দেব। বিন্সি : বস কোয়ালিটি প্রোডাক্ট তো আমরা দিচ্ছি। কিন্তু প্রতিটি ভায়াল এর দল ১০ টাকা বেশি। পেশেন্ট খুশি হবে কি ভাবে ? নীল : প্রাইস আমি কম করবো না। প্রিমিয়াম প্রাইস ই থাকবে। বিন্সি :তাহলে ট্রেড অফার কি বাড়িয়ে দেবার কথা ভাবছো? নীল: না তা ভাবছি না ,কারণ তাতে কোম্পানির প্রফিট মার্জিন কমে যাবে। কি করবো জানি না। এটা নিয়ে আজ একটু চিন্তা করি। কাল সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো। বিন্সি:থ্রেট একটাই তাদের প্রাইসিং আর বিশেষ পরিষেবা কিছু ডাক্তার আর ডিস্ট্রিবিউটের দের প্রতি। নীল :বিন্সি ,আমার মনে হয় আমাদের কন্ট্রোল এ আছে আমাদের স্ট্রেংথ এর দিক গুলি। সেটার ওপর কাজ করা যাক। আর সুযোগ এর জায়গাটা একটু দেখা যাক ভালো ভাবে। বিন্সি: নীল আমরা আমাদের ডাক্তার বেস এ জেনারেল ফিজিসিয়ান এবং RMP দের (Registered Medical Practitioner ) নিতে পারি। নীল :ব্রাইট আইডিয়া বিন্সি। এটাই চাইছিলাম তোমার কাছে। বিন্সির ব্লাশ করা চোখ এড়ালো না আমার। আলোর একটা রেখা দেখতে পাচ্ছি। মিটিং শেষ হতে বিন্সি বললো নীল এবার চলো কফি শপ এ যাই। দুজনে বেরোলাম "ইন্ডিয়ান কফি হাউস " এর দিকে। আথিরার একটা কথা হটাৎ মনে পড়লো ,বলেছিলো " আই হ্যাভ ময় স্ট্রং বিলিফ অন ইওর ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইউ ক্যান টার্ন অ্যারাউন্ড এনি এডভার্স সিচুয়েশন "I কখন বলেছিলো মনে পড়লো না ...জানতে হবে। বাড়ি ফিরে এই উত্তর গুলো খুঁজবো ঠিক করলাম। স্টেট অফ মাইন্ড "ডার্কনেস ইস রিলাক্সেশন ,টোটাল রিলাক্সেশন," অন্ধকারেই শান্তি কারণ অন্ধকার শাশ্বত। আলো তো আসে আর যায়,অন্ধকার থেকে যায়। বাড়ি ফিরে মিউজিক সিস্টেম এ স্যাক্সোফোন এ হালকা জ্যাজ চালিয়ে দিলাম। ফ্রিজ থেকে কোক নিয়ে পুরো ঘর এর আলো বন্ধ করে ব্যালকনি তে বসলাম। ব্যাক ওয়াটার এর দিক থেকে ঠান্ডা হাওয়া মনকে শান্ত করতে পারছে না । ব্যাক ওয়াটার এর জল কালো জল কি সত্যিই শান্ত না কালো রং টাই শান্ত ভাব। কালো কে আমরা ভয় পাই । চোখ বন্ধ করে নিজের ভেতরে যাবার চেষ্টা করতে থাকলাম। যত এগোতে থাকলাম তত যেন এক ভয় গ্রাস করতে লাগলে ,একা হবার ভয়। কিছক্ষন পর মন সত্যি আর থাকলো না বা শান্ত হতে শুরু করলো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register