" বাবাঃ...এ কি আজব জায়গা... দিনে ঘুমোও... রাতে জাগো.....ঘুম এলে হয়...ভাবছি ডাইনিবিদ্যাটা একটু প্র্যাকটিস করবো ঘুম না এলে...শুনছি তো আমি নাকি দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরে বেড়িয়েছি..সে একবার কোনো রকমে পেরেছি বলে... কি জানি বাবা প্র্যাকটিস না থাকলে যদি পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙি!!এত হেভী হেভী ছেলে এখানে...অবশ্য কে যে ভূত আর কে যে রাক্ষস...তা আমিও তো ডাইনি.. নর্মাল ছেলে কি আর জুটবে...আমার বাবা এরকম ই ভালো....ঘুম না এলে একসাথে প্র্যাকটিস করবি??এই স্রোত?? ওঃ তোর তো আবার ব্যাপার ঘ্যামা...."
মিট্টির অবিরাম বকর বকর শুনতে শুনতেই ইসপ্যামার ডিজনিল্যান্ডের মতো অথবা ফেয়ারিল্যান্ডের মতো সুন্দর সাজানো রাস্তা ধরে আমরা সবাই ফ্লেজলিং হাউসের দিকে হাঁটছিলাম...তবে রিজ্ ছাড়া... কনফারেন্স হল থেকে বেরিয়েই রিজ্ আমাদের স্যরি বলে এক লম্বা দৌড় লাগিয়েছে...আর সমীর ঘোষণা করেছে...পটি পেলে দেবদানব রাক্ষসখোক্কস সব সমান....
আমি একটু মিট্টির কাছে সরে এলাম....
"মিট্টি একটু শোন্..."
মিট্টি জিজ্ঞাসু মুখে আমার দিকে তাকালো...
"আমার ট্রান্সফর্মেশনটা ঠিক কিরকম হয়েছিল রে??একটু বল্ না..."
মিট্টি সন্দিগ্ধ চোখে আমাকে মাপলো খানিক
"ইয়ার্কি করছিস না তো স্রোত??তোর কি হয়েছিল তুই সত্যিই বুঝিসনি??"
"বুঝলে তোকে জিজ্ঞাসা করবো কেন??"
"হয়তো আবার করে শুনে একটু ঘ্যাম দেখাতে চাইছিস্..... আমি হলে তো বাপু তাই করতাম..."
"উফফ্ মিট্টি প্লিজ!!! বললে বল্.... না হলে..."
"আরে আরে চটছিস কেন.... আসলে এরকম কান্ড ...মানে এরকম দৃশ্য বাপজনমে দেখিনি কি না....উফফ ঐ আলোহাদের মুখ গুলো দেখার মতো হয়েছিল...হেভ্ভী"
" তুই বলবি?? না বলবি না??"
"আরে তুমি তো সাঙ্ঘাতিক কান্ড করেছ স্রোত"।
কখন যেন ডাইকো, সুজি,প্যাম আর সমীর আমাদের কাছে চলে এসেছে...ওরা চারপাশ দেখতে দেখতে আমাদের অনেকটা পিছনে আসছিল।
" ডাইকো...প্লিজ একটু বলবে কি হয়েছে??সবাই আমাকে এইভাবে দেখছে...এমন কি প্রফেসর রাও..."
ডাইকো কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো... আমি এটা নিশ্চিত ছিলাম...ওর মতো সংবেদনশীল ছেলে নিশ্চয়ই আমাকে বিদ্রুপ বা হার্ট করবে না..
"স্রোত....আমি তোমাদের সবাইকে কয়েকটা কথা বলতে চাই..তোমরা প্লিজ ভেবো না আমি শো-অফ করছি....বা উটকো জ্ঞান দিচ্ছি.... আমি সত্যিই তোমাদের থেকে ইসপ্যামা সম্পর্কে বেশি জানি...কারণ আমার গ্রেট গ্র্যান্ড পা...যার বয়স এখন প্রায় একশো ষাট....উনিও একজন ইসপ্যামিয়ন...যদিও উনি ইসপ্যামার সার্ভিসের বদলে বাইরের ওয়ার্ল্ডে আমাদের টিবেটেরই একটি বিখ্যাত মনেস্ট্রি....নাম 'ড্রাপিং'.....তার হেড ছিলেন... উনি দালাই লামা হওয়ার জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন... কিন্তু যেহেতু উনি একজন ভ্যাম্পায়ার ছিলেন...তাই উনি...."
"আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, ওনাকে ছেড়ে এবার আগে এগো"
প্যামের কথায় ডাইকো অপ্রস্তুত একটু
"না তাই বলছিলাম.....উনি ছোট থেকেই আমাকে আইডেন্টিফাই করেছিলেন....আর একটু একটু করে আমাকে মেন্টালি প্রিপেয়ার করেছেন...ইসপ্যামার হিস্ট্রি পড়িয়েছেন...এর গতিবিধি নিয়ম-কানুনের সাথে আমাকে আগে থেকেই পরিচয় করিয়ে রেখেছেন... এই প্রসঙ্গে তোমাদের একদিনের একটা ঘটনা না বললেই নয়..."
"আচ্ছা কিছু মনে করিসনা ডাইকো.. স্রোতের প্রশ্নের উত্তরে তোর বাপঠাকুদ্দার এত খতেন আসছে কেন??এর পর না ঘুমোলে কিন্তু চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল চলে আসবে"।
"প্লিজ মিট্টি একটু ধৈর্য ধরো... আমার মনে হচ্ছে স্রোতের তো বটেই....তার সাথে আমাদের সবারও এই কথাগুলো জানা ভীষন দরকার... আর স্রোতের ট্রান্সফর্মেশন টাও এর সাথেই রিলেটেড..."।
আমারও কেন জানি না মনে হচ্ছিল ডাইকোর কথা গুলো শোনা আমাদের সবারই খুব দরকার এবং উচিত ও।
"ডাইকো প্লিজ তুমি কন্টিনিউ করো...আমাদের বুঝতে হবে...আমরা আর কেউ আগের মতো নেই..."
"থ্যাঙ্কিউ স্রোত...হ্যাঁ যেটা বলছিলাম...আজ থেকে কয়েকবছর আগে আমি বোধহয় তখন তেরো কি চোদ্দো বছরের...এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল... আমি দেখলাম আমার সামনে গ্যাগ্যা.... মানে আমার গ্রেট গ্র্যান্ডফাদার এসে দাঁড়িয়েছেন...ভ্যাম্পায়ার হওয়ার সুবাদে উনি বন্ধ দরজা দিয়েও ঢুকে আসতে পারতেন...তাই এ নিয়ে আমি অবাক হইনি... অবাক হলাম অন্য কারণে..... আমি দেখলাম গ্যাগ্যা কাঁপছেন...আর কাঁদছেন...ওনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ওনার বুক ভিজে গেছে....কাঁপা কাঁপা গলায় উনি বললেন.... ওনার কাছে ফোর গডেস বার্তা পাঠিয়েছেন....এক সাঙ্ঘাতিক বার্তা.... এক ভয়ঙ্কর মহাযুদ্ধ শুরু হতে চলেছে...সেই লড়াইতে নাকি গোটা ইউনিভার্স উল্টেপাল্টে যাবে... ভালো খারাপের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে... আর আর মৃত্যু... প্রচুর মৃত্যু....সেই যুদ্ধে আমাদের নাকি বিশাল ভূমিকা নিতে হবে... সৃষ্টি কে রক্ষা করতে হবে... ইউনিভার্সের ব্যালেন্স... প্রাণীদের রক্ষা করতে হবে....এ হবে ভালোর সাথে খারাপের লড়াই...আর কে কোন পক্ষকে নির্বাচন করবে...তার উপর টিকে থাকবে তার অস্তিত্ব... আর সেই যুদ্ধে গডেস রা তাদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে এক অবতার কে তৈরি করে পাঠাবেন....সেই মহাশক্তিই ভালো পক্ষকে পথ দেখাবে ... তাদের গাইডিং পাওয়ার হয়ে উঠবে এই মহাযুদ্ধে... সে একা পারবে না যদিও.... তার সাথে তার সহযোদ্ধাদের ও দরকার..তারাও গডেসদের আশীর্বাদ আর শক্তির অংশ পাবে... হয়তো এমনও হতে পারে... সেই অবতার এবং তার পক্ষের সহযোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে এই ইউনিভার্সের ভালো খারাপের ব্যালেন্স ফিরে এল... সৃষ্টি রক্ষা পেলো....."
"মানে সিরিয়াসলি.... মাঝরাতে তোকে ঘুম থেকে তুলে তোর একশো ষাট বছরের গ্যাগ্যা তোকে এই আষাঢ়ে রূপকথার গল্প শুনিয়েছিলেন... তোর ঘুমটা নষ্ট হয়েছিল বলে... সেই প্রতিশোধ তুই এখন আমাদের উপর নিচ্ছিস তাই তো??"
সুজির কথায় আমরা সবাই হেসে উঠলাম...ডাইকোও
"না না সুজি তা না...গ্যাগ্যা আমাকে ফাইন্যালি বলেছিলেন...যে আমাকে নাকি এই যুদ্ধে এক বিশাল ভূমিকা নিতে হবে....সেটা কি তা সময় এলে আমি নিজেই জানতে পারবো...
"সে ঠিক আছে ডাইকো... কিন্তু আমার ট্রান্সফর্মেশন এর সাথে কিভাবে জড়িত সেটা ঠিক বুঝলাম না এখনো...."
"বুঝলি না??? আমি বুঝেছি... ডাইকো একটাই রচনা পড়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে... নদীর রচনা... এখন গোরু পাহাড় যা আসুক...ওকে ঐ রচনা দিয়েই ম্যানেজ করতে হবে...." মিট্টি সশব্দে একটা হাই তুললো...
"না তা নয় মিট্টি....স্রোত আমার মনে হয়... তুমিই ফোর গডেসের দ্বারা নির্ধারিত সেই অবতার..."
এবার আর শুধু মিট্টি নয়...আমরা সবাই এত জোরে হেসে উঠলাম...যে ডাইকো হকচকিয়ে গেল...
"শোন স্রোত ডাইকোর কথা ছাড়্...ও মালের জ্ঞান উপচে পড়ছে... আমরাই তোকে বলে দিচ্ছি.... তোর কি কি হয়েছিল...তুই তো এগিয়ে গেলি....বল্ টায় হাত দিলি...তারপর...বাবারে...কী আলো বেরোতে শুরু করলো....যেন চোখ অন্ধ হয়ে যাবে আমাদের...তারপর চোখ যখন সয়ে এল...আমরা দেখলাম...তুই হাওয়ায় ভাসছিস...বাবারে কি বিকট চেহারা তোর..এই সুন্দর থোবরা..না না ভুল বললাম..থোবড়া টা সুন্দরই আছে শুধু মুখের দুপাশ দিয়ে দুটো বাঘের মতো দাঁত..."
"ওটাকে ক্যানাইন টীথ বলে...ভ্যাম্পায়ারদের স্পেশালিটি...."
"আরে আমরা বুঝে গেছি ডাইকো...জ্ঞান দেওয়ার একটা চান্স ও তুই মিস্ করবি না...হ্যাঁ তারপর স্রোত যা বলছিলাম..."
"এই মিট্টি...এবার আমি বলবো....প্যাম প্রায় লাফাতে লাফাতে আমার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো...
"হ্যাঁরে স্রোত....তোকে যে কেমন লাগছিল...কি বলবো...তোর পিঠের উপর আবার দুটো ডানা...আর মাথায়...ওঃ গডেস্...এই দ্যাখ কেমন কাঁটা দিচ্ছে আমার গায়ে....তোর হাফ মাথায় কালো সাপ কিলবিল করছে...আর হাফ মাথায় সাদা সাপ কিলবিল করছে....আর দুটো হাত.. পুলিশ হ্যান্ডস-আপ বললে যেমন করে তুলতে হয়... তেমনি করে তুলে রেখেছিলি...একটা হাতের পাম দিয়ে আগুন বেরোচ্ছিল...আর একটা হাত দিয়ে কি সুন্দর সাদা সাদা ফুল ঝরে ঝরে পড়ছিল....
আর প্রফেসররা চিৎকার করে মন্ত্র পড়ছিল...আর আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তো...তাই আমাদের শান্ত থাকতে বলছিলেন... সব থেকে খেল দেখালো তো আলোহাদের দল...যে যেদিকে পেরেছে দৌড় মেরেছে....আলোহা অবশ্য ওর ই মধ্যে ডায়ালগ মারার চেষ্টা করছিল.... হিহিহিহি....হেই মেটস্ তোরা ভয় পাসনা আমার ও অনেক পাওয়ার আছে....সি ইজ জাস্ট এ ফ্রিক....এই সব...কিন্তু কে শোনে ওর কথা.. ...ওর পাশের বিশ্বন্যাকা মেয়েটা তো কেঁদেই ফেললো..."
"এই....কিয়ারাকে নিয়ে কোনো কথা হবে না ওক্কে...?....ওকে আমার...ইয়ে... মানে... দারুণ লেগেছে"
"ওয়ে ওয়ে...সমীর.....উলাল্লা....এর মধ্যে নাম ও জেনে ফেলেছিস...! ওঃ আর পারি নাঃ"
মিট্টি,প্যাম আর সুজি, সমীর কে চুল টেনে কাতুকুতু দিয়ে লেগ পুল্ করতে লাগলো...
কথা বলতে বলতে আমরা যে কখন ফ্লেজলিং হাউসে পৌঁছে গেছি.... কেউ খেয়াল করিনি
"ডাইকো....একটা কথা" ওরা হাউসের সিঁড়িতে উঠে যাওয়ার পর আমি পিছন থেকে ডাইকো কে ডাকলাম...ডাইকো পিছিয়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো
"বলো স্রোত"
"ডাইকো... আমার ট্রান্সফর্মেশন থেকে তোমার কি ধারণা হোলো??? আমার মধ্যে কি পাওয়ার আছে?"
" স্রোত.... বুঝতে পারো নি?!!... তিনরকমের মিলিত শক্তি আছে তোমার....ভ্যাম্পায়ার...উইচ্ আর আর...গডেসের সুপারপাওয়ার" ....ডাইকোর গলা সম্ভ্রমে গভীর হয়ে উঠলো...
"কিন্তু ডাইকো... এই শক্তি...কি শুভ শক্তি?? মানে তুমি যেটা বললে.....কোনো মহাযুদ্ধ হতে পারে... সেক্ষেত্রে ভালো বা খারাপ যে কোনো একটা পক্ষ নির্বাচন করা...মানে আমি বলতে চাইছি নেগেটিভ পাওয়ার তো খারাপ বা অশুভ দিকই নির্বাচন করবে...বাই দ্য ওয়ে....কার সাথে বা কাদের সাথে কবে কি ভাবে এই যুদ্ধ হবে...তোমার গ্যাগ্যা...সে ব্যাপারে..."
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই এক তীক্ষ্ণ তীব্র বুকফাটা কান্নার আওয়াজে আমি আর ডাইকো দুজনেই চমকে উঠে হাউসের ভিতরে দৌড়লাম...কারণ কান্নার আওয়াজটা হাউসের ভিতর থেকেই আসছিল...আর আওয়াজটা পুরুষ কন্ঠের...
দৌড়ে দুদিকের বেশ কয়েটা ঘর পেরিয়ে গিয়েই দেখলাম একটা ঘরের সামনে আমার সব বন্ধুরা জড়োসড়ো হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে...ঘরের উপরে নেমপ্লেটে নাম লেখা আছে 'রিজওয়ান মালিক্'
আমি আর ডাইকোও ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম.... আমি নিজেকে মিট্টি আর সুজির মাঝখানে গলিয়ে দিয়ে উঁকি মেরে... কি হয়েছে... সেটা বোঝার চেষ্টা করতে করতেই দেখলাম...
ঘরের আলো ঠিকরে বেরোনো পাথরের ফ্লোরের উপর হাঁটু মুড়ে মেঝেতে মুখ গুঁজে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছে আমাদের বন্ধু রিজ্ ওরফে রিজওয়ান মালিক
0 Comments.