Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

একই ভাব নিয়ে লেখা একটি অনুগল্প ও একটি কবিতায় সুখেন্দু দাস

maro news
একই ভাব নিয়ে লেখা একটি অনুগল্প ও একটি কবিতায় সুখেন্দু দাস

অনুগল্প: লড়াই

তোমার মধ্যে একটা আগুন দেখেছি, পাপা। একখন্ড আগুন তুমি আমাকেও দিয়েছো। আমার ভিতরের সত্ত্বাকে তুমি জাগিয়েছো। যে দুঃখে কাঁদতো, 'পারিনি' বলে কষ্ট পেতে, তাকে তুমি গলা ছেড়ে গান গাইতে শিখিয়েছো, পাপা। তোমার জোর দিয়ে বলা শব্দগুলো এখনো কানে বাজে : জানবি যত দিন বেঁচে আছিস জীবনটা একটা সংগ্রাম। এতে হেরে যাওয়া শেষ হয়ে যাওয়া বলে কোনো শব্দ নেই; যা আছে তা হল লড়াই, লড়াই, লড়াই।
যেদিন আমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় ফেল করে বাড়ি ফিরেছিলাম। তুমি একটুও আমায় বকোনি। অবাক ভাবে ভেবেছিলাম - কেন?
তুমি বলেছিলে - আমাকে দেখ, হতে পারতাম একটি কলেজের প্রফেসর, হতে পারতাম একটা স্কুলের শিক্ষক, কিংবা হতে পারতাম সরকারি কেরানী বা গুডসগার্ড; কিন্তু কিছুই তো হতে পারলাম না। তোরা ভাবলি আমি হেরে যাওয়া এক সেপাই, আমি ভাবলাম "গতস্য শোচনা নাস্তি", যা চলে গেছে তা চলে গেছে। যারা আমার টেলেন্ট বুঝতে পারলো না, তারা অবুঝ কিংবা তারা চায় 'স্বজনপোষণ' করতে। আমি তাদের পরিচিত কেউ নই বলে জোর করে পরিচয় বাগাতে হবে, এ তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি আমার মধ্যে ক্ষমতা থাকলে তা আপনি বেরোবে, তার জন্য আমি তোষামদে বিশ্বাস করি না। এখন আমি সব চেষ্টা ছেড়ে লেখালেখিতে বিশ্বাস করলাম।
আমার প্রতিবেশী বন্ধু বঙ্কু এসে বললো, দাদা এরমভাবে তোমার কেরিয়ার নষ্ট করো না। এত ব্রাইট স্টুডেন্ট তুমি, এত ভালো লেখাপড়ায়, শুধু উচ্চমাধ্যমিকে খারাপ হয়েছিল বলে তুমি পাশ কোর্সে পড়াশুনা করো, তবু তো বি.এড করেছো, নেট-সেট পাশ করেছো। চাইলে অনায়াসে পিএইচডি করতে পারো, তারপরেই প্রফেসর। এইভাবে হার মানাটা কি ঠিক হচ্ছে ?
আমি বললাম - হারতে আমি শিখিনি। লড়তে শিখেছি।
অবাকভাবে দেখলাম তোমার লেখনি, একে একে মুখোশ খুলে দিচ্ছে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের। আগুনের অক্ষরে লিখিত হচ্ছে সমাজের অসুখের ভাষা। তুমি বলতে -
ভালো-খারাপ বুঝি না। সবই আপেক্ষিক। তবে এটুকু বলতে পারি - যদি দেশে কিছু খারাপ থাকে যা দেশের উন্নতির অন্তরায় তাকে জেলে না ভরে কাজে লাগানো উচিত। প্রতিটা চোর আর ছিনতাইবাজকে ধরে যদি বর্ডারে ডিউটির জন্য প্রশিক্ষণ করানো হয় তাহলে তাজা প্রাণগুলো শেষ হয়ে যায় না। সেপাইদের বুদ্ধি আর শক্তিগুলো অনেক কষ্ট করে তৈরি। ওরা অকালে চলে গেলে বুকে ব্যথা লাগে। ওদের প্রাণ অমূল্য। বরং একটা চোর-ডাকাত-ধর্ষককে দীর্ঘদিন জেলে রেখে সংশোধন করার চেষ্টা বৃথা। এতে শ্রম এবং শক্তি উভয়েরই অপচয় হয়।
কত কথাই না তুমি বলে গেছো। রূপকথার গল্পের মতো ভালোদের তুমি জয় ঘোষণা করতে চাওনি। ভালোর ক্যাথারসিস বহন করা উত্তর প্রজন্মকে তুমি শিখিয়েছ - খাওয়া-পরা-শিক্ষা সরকারের কল্যাণের কর্মসূচি দিয়ে হয় না। ওগুলো স্বপ্রচেষ্টা। প্রতিটি ব্যক্তিকে এগিয়ে চলার জন্য সরকারকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। কথায় আছে -
উদ্যমেন হি সিধ্যস্তি কাৰ্য্যাণি ন মনোরথৈঃ ।
নহি সুপ্তস্য সিংহস্য প্রবিশন্তি মুখে মৃগাঃ ॥
কর্ম না করে কখনো সুপ্ত সিংহের মুখে মৃগ বা হরিণ প্রবেশ করে না। দুঃখের বিষয় আমাদের সরকার তাই করছে। এখনো অবাক লাগে; কত বাস্তব এ কথা ….

কবিতা: একখন্ড আগুন

পাপা, তুমি তো জানো তোমার বুকের মধ্যে আছে - একখন্ড আগুন একখন্ড আমাকেও দিয়েছো হার মানবো না মানছি না - শিক্ষা দিয়ে তুমি বলতে - আমাদের জীবনটা শুধু লড়াই লড়াই লড়াই পাইনি বলে দুঃখ করতে নেই : গতস্য শোচনা নাস্তি জানবি না-পাওয়ার ভিতরে শেষ নয় : সূচনা আছে কিছু নতুন করে-দেখানোর …
পাপা, তোমার মনে পড়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে কেমন বাচ্চার মতো হাত-পা ছুঁড়ে কেঁদেছিলাম মা খুব বকেছিল : এত বড় ধেড়ে মেয়ে ওই পুঁচকেদের কাছে হেরে গেলি - ছিঃ ! তুমি ছিলে চুপ : ধ্যানমগ্ন যোগীর মতো ! মাথায় হাত বুলিয়ে সেদিন বলেছিল - কাঁদিসনে মা, কাঁদলে তুই দুর্বল হয়ে যাবি তোর ভিতরের তেজ যাবে নিভে হেরেছিস, তুই হেরেছিস হেরো, হেরো কোথাকার তুই হেরেছিস এ হার তোকে স্বীকার করতেই হবে, তবে এই শেষ নয় - জ্বালিয়ে তোল তোর ভিতরের আগুনকে জ্বলে উঠুক তোর ভিতর জ্বলে উঠুক তোর প্রাণ\ জ্বলে উঠুক তোর 'তুই' লড়তে হবে তোকে লড়তে হবে লড়তেই হবে আজ তোকে দেখাতে হবে তুই হারতে জানিস উঠে দাঁড়াতে জানিস জিততেও জানিস কাম অন, কা-ম অ-ন, ফাইট ফাইট ফাইট
পরের বছরেই পাল্টে গেছলো জীবনের নক্সা হারতে আমি শিখিনি পাপা তুমি শিখিয়েছ জিততে আমি পারতাম না পাপা তুমি জিতিয়েছ
শিখিয়েছ তুমি জীবনের পথচলা এ পথ শেষ হবার নয় একটা গন্তব্য শেষ হলে আর একটা গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে আর একটার পরে আরও একটা পায়ে পায়ে এ-পথ শুধু বেড়ে চলে বেড়ে চলে জেতা-হারার গল্প
তারপরে কোনো এক দামাল সন্ধ্যার বুক চিরে তোমাকে যখন আবার দেখি হার-জিতের 'পরে এক সমাহিত যোগীর মতো শান্ত অথচ তেজী সৌম অথচ বিদ্রোহী তখন বুঝতে পারি তুমি অনন্য তুমি অ-সাধারণ হতে পারতে তুমি প্রফেসর হতে পারতে তুমি শিক্ষক কিংবা সরকারি কর্মী অথচ হয়ে গেলে লেখক : যে লেখার শব্দগুলো ছুরির মতো তীক্ষ্ণ দাঁত উচিয়ে কামড় বসিয়েছিল রাক্ষুসে নেকড়েদের বুকে যারা জানে না প্রীতির বন্ধন যারা জানে না বন্ধুর বাঁধন যারা বোঝে শুধু স্বজন-পোষণ স্বার্থন্বেষী লেলিহান শিখা তাদের মুখোশ তুমি দিয়েছ খুলে "নষ্ট শশা পচা চাল-কুমড়োর ছাঁচে" বেরিয়ে এসেছে তাদের বীভৎস রূপ নষ্ট-প্রায় সমাজের বুকে ...
পাপা, তোমার লেখনীর প্রতিটি ভাব লিখেছে সমাজের অসুখের ভাষা : এ অসুখ যেন সারবার নয় প্রতিদিন বেড়ে চলে তাঁর পীড়া তবুও তো স্বপ্নে দেখি বারবার রূপকথার গল্পের মতো : নিছক রূপকল্প-বাস্তব ভালো ভালো ভালোর মতো যেন ভালোর মোড়কে গাঁথা সেই ন্যারেটিভের পাতায় মন্দেরা আসে সাসপেন্স নিয়ে অন্তিমে জয়ী ভালোদের বুকে 'সুখে-শান্তিতে থাকা'র ক্যথারসিস গেঁথে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register