ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত

প্রথম অধ্যায় || দ্বিতীয় পর্ব

বায়োস্কোপওয়ালা লোকটি, হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঘোষনা করছে, ” এখন, কিছুক্ষণের জন্য বিরতি; খোকাবাবুরা, বাক্সের খোপ থেকে মুখ বের কর; এবার কাহিনী- কারের মুখ থেকে শোন।”

কথাকার শুরু করেছে তার বর্ণনা – “ভগৎ সিং’র ঠাকুরদা, অর্জন সিংজি’র জন্ম, সিপাহী বিদ্রোহের (1857) পর। একজন নিষ্ঠাবান খালসা, কিন্তু তিনি যুগের বহু আগে বিচরন করতেন;ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন জাতীয়তাবাদী, স্বাধীনতা সংগ্রামী। স্বামী দয়ানন্দের আর্য- সমাজের ঘনিষ্ঠ একজন, তাই তাঁর পক্ষে দেশের সংস্কৃতির পুনঃজাগরণের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে নিতে দেরি হয়নি। সে যুগে যখন মন্দির থেকে আর্য-ভবনে যাওয়াই ছিল দুষ্কর, তখন তিনি স্বচ্ছন্দে ভবন থেকে গুরুদ্বারে আসা- যাওয়া করতেন; এটাই তো একটা বিরাট বিপ্লবী পদক্ষেপ; সহযোগী ছিলেন যোগ্য সহধর্মিনী মাতা জয় কাউর। স্বামীর ইউনানী পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ে, স্ত্রী ছিলেন যোগ্য সহায়িকা। অভিজ্ঞ কম্পাউন্ডারের মত ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে ছিলেন দক্ষ।”

“অর্জন সিংজি’র তিন পুত্র, কিষেন সিং, অজিত সিং ও স্বর্ণ সিং। যেহেতু নিজের প্রচেষ্টায় তিনি বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন
করেছিলেন, তাই তাঁর পক্ষে পুত্র কিষেন সিং ও অজিত সিংকে জলন্ধরের’সাঁইদাস অ্যাংগ্লো- সংস্কৃত হাইস্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল; জাঠ- শিখরা ঐ সময় তা ভাবতেও পারতোনা।”

“জলন্ধরের কংগ্রেস নেতা ও সেই সময়কালে নামকরা আইনজ্ঞ রাইজাদা ভগৎ রামের অধীনে মুনশি হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে অর্জন সিংজি, একদিকে যেমন আর্য- সমাজের সমাজ – কর্মীরূপে সমাজের আমূল পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন, অন্যদিকে কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতির জগতে একটা বিশেষ দাগ কেটেছেন।”

“1893সালে দাদাভাই নারোজির সভাপতিত্বে লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে তিনি ও তাঁর দাদা সুরঞ্জন সিংজি নিজেদের গ্রাম্য জাঠ- পোষাকে জলন্ধরের ডেলিগেট হিসেবে যোগ দেন। অন্যান্যরা যখন পশ্চিমী পোষাক পরিহিত, তাঁরা দু’ভাই তখন জাতীয় পোষাকে, ভাবা যায়!
সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন; সভাপতি, অভিভূত হয়ে জলন্ধর রেল ষ্টেশনে দু’ভাইকে নিজের কম্পার্টমেন্টে তুলে নেন ও লাহোর অধিবেশনে যান।”

“শুধু তাই নয়, প্লেগ অধ্যুষিত এলাকায় বিনা- খেসারতে বৃটিশ সরকার, রোগ- প্রতিরোধে ঘর- বাড়ি ভেঙ্গে দিলেও তিনি বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের কাজকে সমর্থন করেন। ছোট ভাই, মেহার সিং’র সঙ্গে এ বিষয়ে মনোমালিন্য হলে ও, তিনি নিজের কাজে অনড় ছিলেন।”

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।