বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে শূন্যতা

অন্য রাজ্যের কথা জানি না, এই মুহূর্তে রাজ্যে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। এর মূল কারন হিসেবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন অনেকেই। কিন্তু আসল কারন হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন এর ক্ষেত্রে মেধাবী, পঠনদক্ষতা সম্পন্ন, বুদ্ধিমান শ্রমিকদের এগিয়ে না আসা। মুষ্টিমেয় কিছু এগিয়ে এলেও তাঁদের বাধা দেন অধিকাংশ নিম্নমেধার নেতৃত্ব। গরিষ্ঠ অংশের নীচুতলার নেতারা প্রচুর মিথ্যা বলেন, নিজস্ব চাওয়া পাওয়া নিয়ে দরবার করেন, অন্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন, মুখে ধর্মের কথা বলেন কাজে করেন ঠিক উল্টো। এরা শ্রমিকদের সংগঠিত করে তাদের মানসিকতার উন্নতিসাধনের চেষ্টা করার কথা ভাবতেই পারেন না। দাবী আদায়ে আন্দোলনের বদলে হাতজোড় করে কাজ পাওয়ার চেষ্টা করেন আর হম্বিতম্বি দেখান নিরীহ শ্রমিক বা বাবুদের ওপরে। কাজের জন্য ঘুষ দেওয়া নেওয়া এঁদের কাছে বৈধ। শ্রম আইন, নিজের ক্ষেত্রের বিভিন্ন আইন, নিয়মনীতি, কার্যক্ষেত্রের বিভিন্ন সার্কুলার কিছুই এঁরা পড়েন বা জানেন না, অথচ প্রকাশ্যে দেখান যে এঁরা সব জানেন। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ এনাদের কাছে কাজের জন্য এলে তাদের কাজ করে দেওয়ার পরিবর্তে টাকা থেকে নানারকম খাওয়াদাওয়া দাবী করে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেন। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে এইসব স্বঘোষিত নেতারা তখন সেই দলের ট্রেড ইউনিয়নে ঢুকে যান। আর আশ্চর্যের ব্যাপার সেই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব এঁদের মাথায় তুলে ফের ছোটখাটো কোনো পদে বসিয়ে দেন। এর ফলে শ্রমিকদের কাছে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য হয়ে যায়। কাজের জন্য আসা শ্রমিকেরা এঁদের নেতা হিসেবে মান্যতা না দিয়ে ঠিকাদার হিসেবে দেখেন। হয়তো একদিন সব রাজনৈতিক দল বুঝবেন এরা থাকলে দলের উন্নতি হয় না, সেদিন শ্রমক্ষেত্রে প্রকৃত সূর্যোদয় হবে।

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাহিত্যিক, দুর্গাপুর

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।