কবিতা সিরিজে তুলসী কর্মকার

১| প্রত্যয়

কতগুলো মেঘ ছুটে
কতগুলো মেঘ স্বপ্ন দেখতে দেখতে সমুদ্র হয়
কতগুলো তৃষ্ণাদগ্ধ গাছ আকাশ দিকে তাকিয়ে
কতগুলো ধুলো অনেক দিন কাদা হয়নি
তেঁতুল ডোবাতে জল বড্ড কম
পাল পুকুরে মাছগুলো খাপসি খায়
নদীর বালি আলগা হয় মিনমিনে জল ধুঁকতে থাকে
একঝাঁক ছাগল চুমুক দিতে দিতে ফুঁ করে
মেটেল মাঠ হা হয়ে ফেটে যায়
বেদির কুঁয়োতে বেনে বউ জল তুলে
কতগুলো পাখি বলে ফটিকজল ফটিকজল
মেঘ বৃষ্টি হয়
গাছ ভিজে যায়
মাটি চুষে খায়
কিছু বৃষ্টি নাগাল এড়িয়ে নদী হয়
কিছু মোহনায় গর্জন শোনা যায়
লবণ মেখে জোয়ার ভাটা খেলা করে
কিছু স্বপ্ন সত্যি হয় কিছু মেঘ সমুদ্র হয়ে যায়…..

২| গুজরান

বা’হাত মুঠো করে ধরে ডানহাত অ্যান্টিক্লক ওয়াইজ ঘুরালাম
ছোটটির মুখ খুলে গেল
একই নিয়মে বড়টির ঢাকা আলগা হল
ছোট বড় মুখে লাগিয়ে হেলাতে থাকলাম
অল্প বেসামাল হতেই কেলেঙ্কারি
কিছু ভিতরে গেল কিছু বাইরে
বউ ভৎর্সনা শুরু করে
সামান্য কাজ তাও ঠিকঠাক করতে পারো না
বয়স বাড়লে হাতেবশ কমে
আপোষ করা ছাড়া উপায় নেই
মনটা খারাপ হয়ে যায়
তেল ঢালতে গিয়ে এমন বিভ্রাট……..

৩| অজুহাত

আজ পৃথিবীর প্রয়োজনে বেঁচে আছি
ভেঙেছি পাথর
পেড়েছি আম
ছিঁড়েছি কলা
অপেক্ষা করেছি তাল তলায়
ওরা খুব চেয়েছিল ওদের সন্তান হউক
আমার বাগানে আজ আম কলা তাল
তাঁদের আমি লালন করি পালন করি বিক্রি করি ফল
তাঁদের আমি সাবেক মুনিব এ আমার কর্মফল
অভিযোগ নেই
ডালপাতা ছিঁড়ি
ছাগলকে দিই
ছাগল বড় হয়
ছাগল কাটা যায়
তালপাতার পুটলিতে মাংস বিক্রি করে
এসবে আমার স্বার্থ নেই পৃথিবীর চাহিদা আছে
যেটুকু দরকার পেট আর পেটের নীচে একটু সুখ
তাতেই আমি বাবা তাতেই আমি মা হয়ে যায়
অধিকার ফলিয়ে রাজ করে সে
বেঁচে থাকার ইচ্ছে অনেক দিনের হয়
যতদিন টাকা আছে
যতদিন বিলাসিতা আছে
যতদিন সুখ আছে
যতদিন স্ত্রী-সন্তান চায়
তবু চলে যেতে হয় মৃত্যু আসে
এসবে আমার কিছু নেই পৃথিবীর স্বার্থ আছে

৪| ত্রিতাল

নীলিমা চলে ইটরঙা শাড়িতে বুকভরা সুধা
নির্লিপ্ত কামনায় অপেক্ষারত এক স্বাধীন
চোখ তার স্বপ্নে ভরা সুখ কথারা অধীন
সুসময় নামতা পড়ে নেমে এলো সন্ধ্যা
এলোমেলো তারা জ্বলে দেখে বসুধা
একফালি জ্যোৎস্না ছড়ায় চাঁদের অধীন
কাটা ধান মহাপ্রাণ মাঠে চিকিৎসাধীন
কালী কোলে জবা ফুলে আছে সেথা বন্ধ্যা
ইচ্ছে তারা উপায় খুঁজে অসুখ থাকে না
সংসার বসে ভাবে চিন্তিত অতীন
পিঠ চাপে সাহস জোগায় ও পাড়ার যতীন
সরকার চ্যুত হবেন ভাবেন জনতা
কুকুর গুড় খায় পেলে চেটেতেটে
ধর্ম তার বর্ম পরে ক্ষমতার অধীন
লোকালয়ে যৌনাচার আজব স্বাধীন
জন্ম মৃত্যু বিবাহ রন্ধ্র সাজে রজনীগন্ধা

৫| দাদরা

অন্ধকার নেমে এল চোখ হল বাঁধা
কারা যেন বলে গেল চলে এসো সুধী
পরলোক গমন করি ইহলোক কানা
জীবন যা পেয়েছে যতন যাতনা
সুখগুলো হাতে গোনা তুমুল মৈথুন
খেলাঘরে দোলাচলে আর থাকি না
চলে যাই অনেক দূর নেই কোন বাধা
মিছে জালে মায়া ছলে আছে সমাধি
দেহে আর মন নেই একি ছলনা
পোকা খেয়ে মাটি করে মাংস রাখে না
আমি আমি সাঙ্গ করে এই হল মতি
আমার তো কিছু নেই তা যে মানি না
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।