সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে শ্রীরাজ মিত্র (পর্ব – ২)

ছায়াপথ, গুঁড়ো ছাই

দ্বিতীয় কিস্তি

আবার হয়তো চুরমার হয়ে যাবে শব্দের মিছিল, ব্যাকস্পেশে। অন্ধকার ছাদে বসে আমি আজ আঙুল ছুঁইয়ে লিখছি। কাগজ কলমের ভৌত জারণে যতটা সচ্ছন্দতা আসে, এখনও এসব আধুনিক যন্ত্র-অনুষঙ্গে আসেনি। আমি জানি, তোমার মনে একবার হলেও উঁকি দেবে কথাটা। নাচতে না জানলে উঠোনের দোষ! কিংবা উঠোন বাঁকা! না, আমি তা বলছিনা। বা বলব না।
আমি প্রথাগত লেখক নই। বা শব্দ দিয়ে যে সবসময় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি, তাও নয়। তবে হ্যাঁ, জীবন যাপনের নানা বাঁকে যখনই কোনো রহস্য এসেছে – আমি তাকে শব্দ দিয়ে আঁকবার চেষ্টা করেছি। বারবার। সব জয়, সব পরাজয়ের। তুমি হয়তো কখনও চেয়েছ চোখ তুলে, ডেকেছো আদরে- সৃষ্টিশীল প্রতিভা বলে! কখনও প্রবঞ্চনায়, কখনও সোহাগে। তাতে করিনি মাতামাতি। বরং চেষ্টা করেছি তা এড়িয়ে চলবার।
শিল্পী তো না আমি। সার্থক শিল্পী মাত্রেই দক্ষ, পেশাদার এবং মনোরঞ্জনকারী। আমার দক্ষতা, সে অর্থে কই? আমার দক্ষতা তো কেবল আত্মমন্থন, অবগাহন আর কিছু চর্বিতচর্বণ। তা হয়তো কাউকে আবিষ্ট করে। কখনও। জানি হৃদয়ের ভাষা হৃদয় কে স্পর্শ করে। তাই হৃদয়ের মৌলিক আবেগ কে মূল চালিকাশক্তি ধরে এগিয়ে চলা যায়। সৃষ্টি র সন্ধানে। পেশাদারিত্ব তো আপেক্ষিক। কিন্তু ঐ যে ‘চমকে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়… লাগায় চোখে ধাঁধা ‘ – মার্কা কোনো মারকাটারি বিনির্মাণ আমার ঠিক আসেনা।
•◇•
প্রকাশ ব্যানার্জি তার মনের কথা বলেন। আমরা তেমন কিছু মনে করিনা। আফটার অল, লোকটা তো আর পাগল নয়, গোঁড়া! আর তাছাড়া সে তো মন্দ বলে না কিছু। আমার সেই শর্টফিল্মের কথা মনে পড়ে যায়।
শর্টফিল্মের শুরুতে একজন রাসভারী শিক্ষক ক্লাসে এসে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন,
‘২+২ = ৫’
বাচ্চাদের মধ্যে হালকা শোরগোল শোনা গেলো। শিক্ষক ধমক দিয়ে বললেন- ‘চুপ করো’! তারপর পড়াতে শুরু করলেন, ‘বাচ্চারা বলো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ! পড়ো …।’
বাচ্চারা ইতস্তত করে পড়লো। শিক্ষক বললেন, জোরে পড়ো। বাচ্চারা জোরে পড়লো। শিক্ষক বললেন, আরও জোরে। বাচ্চারা সমস্বরে আরও জোরে পড়লো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
একটা বাচ্চা হাত তুলে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘স্যার, দুই আর দুই যোগ সমান চার না?’
শিক্ষক বললেন, ‘তোমাকে পড়তে বলা হয়েছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ… তুমি ওটা পড়ো। কোনো প্রশ্ন করবে না! বুঝেছো?’
‘কিন্তু আমি ভেবেছিলাম…’
‘ভাবতে হবে না। ভাবার দরকার নাই। দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। তুমি বসো এবং পড়ো।’
বাচ্চারা আবার সমস্বরে পড়ল, ‘দুই যোগ দুই সমান পাঁচ’!
তারপর একটা বাচ্চা সটান উঠে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘দুই যোগ দুই সমান চার। এবং সবসময় চারই থাকবে। পাঁচ কিভাবে হয় এটা?’
শিক্ষক কঠিন স্বরে ধমক দিলেন, ‘তোমাকে প্রশ্ন করার অনুমতি কে দিয়েছে? প্রশ্ন করার সাহস কোথায় পেলে তুমি?’
বাচ্চা দাঁড়িয়ে রইলো। শিক্ষক বললেন, বলো দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। বাচ্চাটা ঘাড় ফিরিয়ে, বাকি সবার দিকে ফিরে দুই হাতের দুই আঙুল জড়ো করে বুঝালো দুই যোগ দুই সমান চার, পাঁচ নয়।
শিক্ষক ধমকালেন, বাচ্চাটা হতাশ স্বরে বললো- ‘আপনি জানেন দুই যোগ দুই সমান পাঁচ নয়, চার। কেন পড়াচ্ছেন না সেটা?’
শিক্ষক খুব রেগে গেলেন। বাচ্চাটাকে চুপ করতে বলে ক্লাসরুমের বাইরে গেলেন। এইসময় সহপাঠীরা দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটাকে বলল, ‘চুপ করো। তুমি তো দেখছি আমাদের সবাইকে ঝামেলায় ফেলবে।’
শিক্ষক ক্লাসে ফিরলেন আবার, স্কুলের তিন জন সেরা ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে। বাচ্চাদের সামনে ওই তিন জনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘এরা স্কুলের সেরা ছাত্র। তোমরা বলো, দুই যোগ দুই সমান কত?’
সেরা ছাত্ররা সমস্বরে বলল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
শিক্ষক তখন প্রতিবাদী বাচ্চাটাকে ডেকে ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘অংকটা সমাধান করো।’
বাচ্চা ব্ল্যাকবোর্ডে দেখল,
‘২+২ = ‘
একবার পেছনে তাকালো। ততক্ষণে স্কুলের সেরা তিনজন ছাত্র হাত দুটো বুকের কাছে এনে রাইফেল তাক করার মতন করে ধরে রেখেছে বাচ্চাটার দিকে।
অংকে ভুল করলেই গুলি করা হবে। বাচ্চাটা ঘাড় ফেরালো, তারপর ব্ল্যাকবোর্ডে লিখল,
‘৪’
লিখে ব্ল্যাকবোর্ড পেছনে রেখে সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো। গুলি চললো তিন জনের হাত থেকে।
বাচ্চাটার রক্ত ছিটকে গিয়ে পড়ল ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা ‘৪’ এর উপর! শিক্ষক পেছন ফিরে ভীত বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আর কেউ আছো যে আজকের পড়াটা বুঝতে পারোনি?’
রক্তাক্ত মৃত বাচ্চাটাকে ক্লাসরুমের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লেগে থাকা রক্তের দাগ সহ পুরো অংক মুছলেন ডাস্টার দিয়ে। তারপর আবার লিখলেন,
‘২+২ = ৫’
বললেন,
‘সবাই লিখো, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!’
ভীত বাচ্চারা খাতায় লিখল, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ!
শর্টফিল্মের শেষ ক’টি সেকেন্ড।
অপর কোনে একটা বাচ্চাকে দেখা গেল, খাতায় সবার মতো করে লিখেছে, দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। লিখে একটু পরই ‘পাঁচ’ কেটে দিলো, পাঁচের পাশে লিখল,
‘চার’
গল্প শেষ!
একটি ইরানী শর্টফিল্মের কাহিনী এটি।
নাম ‘টু এন্ড টু’, বানিয়েছেন বাভাক আনভারি। ২০১১ সালে ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড এ বেস্ট শর্টফিল্ম এর নমিনেশন পায় এটি।
শর্টফিল্মটা দেখার সময়, আমি একটা মানচিত্র দেখতে পেয়েছি চোখে। আর অসংখ্য সহপাঠী। টিয়ার মতোন সুর করে পড়ছে… দুই যোগ দুই সমান পাঁচ। ‘চার’ বলতে নেই, লিখতে নেই। ‘চার’ রক্তাক্ত সংখ্যা।
আমার শুধু এইটুকু ভেবে ভালো লাগে, এই অসংখ্য’র ভেতর কোনো এক কোনায় হয়তো কেউ আছে, যার খাতায় ‘পাঁচ’ কেটে পাঁচের পাশে স্পষ্ট একটা সংখ্যা লেখা, ‘চার’। আমরা দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো ওই ‘চার’ একদিন চিৎকার করে বলতে শিখবে,’দুই যোগ দুই সমান চার এবং এটা সবসময় চারই থাকবে। আপনি ভুল, আমি সঠিক। আপনি মিথ্যে, আমি সত্য। আপনি পরাজিত, আমি বিজয়ী। আপনি দালাল, আমি কাণ্ডারী।’
•◇•
আজ আমাদের কর্ণগড় যাওয়ার কথা। যদিও হামেশাই যাই। যদিও আমাদের ঘুরে বেড়ানোই নেশা।
পরিখা ঘেরা প্রাসাদের ভিতরেই ছিল আস্ত একটা জনপদ, এক সময় ! পারাং নদীর কুল ঘেঁষা টিলার উপর সেই প্রাসাদে বাস করতেন রানি শিরোমণি। ইতিহাসে যিনি চূয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী। রানির বীরগাথা এখনও কর্ণগড়বাসীর মুখে মুখে ফেরে। ঐতিহ্যের সেই প্রাসাদ এখন ধ্বংসস্তূপ। চারিদিকে ঝোপঝাড় আর সাপখোপের ডেরা। জনশ্রুতি, এক সময় এই প্রাসাদই ছিল দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের আঁতুড়ঘর।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, ঐতিহ্যের এই প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপকে সংরক্ষণ করে এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। কর্ণগড় গ্রামে রয়েছে মহামায়া মন্দির। বহু পর্যটক ওই মন্দির দেখতে আসেন। অথচ মহামায়া মন্দির থেকে মাত্র কিলোমিটার দূরে শিরোমণির প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ। সে কথা অনেকেই জানেন না।
প্রায় ১২০ বিঘে এলাকা জুড়ে ছিল শিরোমণির প্রাসাদ বা কর্ণগড়। ইংরেজ কোম্পানির শাসকরা রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জমিদার ও তাঁদের পাইক-বরকন্দাজদের দমন করার চেষ্টা করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে বহু জমিদার জমিদারি হারান। জমিদারদের পাইক-বরকন্দাজরাও জীবিকা ও জায়গির-জমি হারিয়ে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বাংলার ইতিহাসে সেটি চুয়াড় বিদ্রোহ নামে খ্যাত। দু’দফায় এই বিদ্রোহ হয়েছিল। দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রানি শিরোমণি। জনশ্রুতি, গোপনে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতেন ও অর্থ সাহায্য করতেন তিনি।
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ইংরেজরা শিরোমণিকে চুয়াড় বিদ্রোহের মূল নেত্রী ঘোষণা করে পরোয়ানা জারি করে। ওই দিন ব্রিটিশ বাহিনী পৌঁছলে কর্ণগড় থেকে গোপন সড়ঙ্গপথে মেদিনীপুরের আবাসগড় প্রাসাদে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন রানি। তাঁকে বন্দি করে কলকাতায় নিয়ে যায় ইংরেজরা। প্রাসাদ লুঠ করে ধ্বংস করে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা। মুক্তি পাওয়ার পরে শিরোমণি আর কর্ণগড়ে ফিরে যাননি। মেদিনীপুরের আবাসগড়ের প্রাসাদে শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৮১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আবাসগড়েই তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রবীণ পুরাতত্ত্ব গবেষক ও ইতিহাসবেত্যারা বলেন- অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তিনিই প্রথম রাজনৈতিক বন্দি। ইতিহাসের স্বার্থেই প্রাসাদের ধংসাবশেষ রক্ষা করা জরুরি।
কর্ণগড়ের প্রাসাদটি মাকড়া পাথর এবং পোড়া ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। অনুমান, মূল প্রাসাদটি তিনশো বছরের বেশি পুরনো। প্রাসাদের লাগোয়া জলহরি দিঘি নৌকাবিহার করতেন কর্ণগড়ের রাজা-রানিরা। জলের মাঝে রয়েছে ‘হাওয়াখানা’।
ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এবং শালবনী ব্লক প্রশাসন। তাই, বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে,
মেদিনীপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে, শালবনী ব্লকের কর্ণগড় মন্দির’কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। মূলত, পারাং নদীর পাড় বরাবর কর্ণগড় মন্দির ও রাণীর গড়’কে কেন্দ্র করে এই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে রিসর্ট।
•◇•
মাস্টার তার স্কুলের গল্প বলে। একটা ছেলে তাদের স্কুলের বাংলার মাস্টারকে কি ব্যাখ্যা দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা র। আমরা মন দিয়ে শুনতে থাকি। সে কথা।
ক্লাসে বাংলার স্যার পচাকে জিজ্ঞেস করল, “বলতো পচা, রবিঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতায় সবথেকে পাজি এবং বদমাশ লোকটা কে?”
“এটা কি কোনো প্রশ্ন হলো স্যার? এটাতো সবাই জানে যে, সবথেকে পাজি এবং বদমাশ লোকটার নাম উপেন, আর ভালো লোকটা হলো জমিদার।”
“আমাকে বোঝাও তবে, উপেন কি করে পাজি হলো আর জমিদার কি করে ভালো হলো? আর যদি বোঝাতে না পারিস আমি মেরে তোর ঠ্যাং খোঁড়া করে রেখে দেবো।”
“এ আর এমন জটিল কি? আপনি মনে হয় পুরো কবিতাটাই ঠিক মতো পড়েননি, যদিও বা পড়েছেন ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি স্যার!”
দেখুন কবিতার শুরুতেই আছে – “শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋনে।” মানে, উপেন যৌবনে রোজগার বলতে কিছুই করেনি।
ঋণ করে ভালোমন্দ খেয়ে জমি বিক্রি করে পরিশোধ করেছে, এখন যখন মাত্র দুই বিঘা জমিতে এসে যখন ঠেকেছে তখন জমির প্রতি দরদ যেন উথলে উঠছে!
এবার আসা যাক উপেনের ছাত্রাবস্থার কথায় –
“একে একে মনে উদিল স্মরনে বালক – কালের কথা।/সেই মনে পড়ে জ্যেষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম -/অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম :/সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা – পলায়ন -“
এবার ভাবুন সকাল দুপুর রাত্রি শুধুই আমের চিন্তায় মশগুল, পড়াশোনা করার বালাই নেই, এতো পাজি যে স্কুলে যাতে পড়াশোনা করতে না হয় তার জন্য সেখানেও ফাঁকি। যদি জীবনে পড়াশোনাটা ঠিকঠাক করতো তাহলে টিপ ছাপ দিয়ে দুই বিঘা জমিটা জমিদার চালাকি করে নিতে পারতো না।
এবার আসি উপেনের বার্ধক্য বয়সে –
“মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখবে না মোহগর্তে, /তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।/সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য”…।
এই পর্যন্ত পড়ে ভেবেছিলাম শেষ বয়সে এসে ফাঁকিবাজ উপেন এবার বোধহয় ধর্মকর্মে মন দেবে, কিন্তু ভবি ভোলবার নয়! সাধুসঙ্গ ছেড়ে সেই আমতলায়, ওখানেও ফাঁকি। ওরে পাগলা দুই বিঘার মোহ কাটাতে পারছিস না, আর তুই হবি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী?
অন্যদিকে জমিদারটাকে দেখুন কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার।
“বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।”
লাইনটা লক্ষ্য করুন, চুরি বলেনি, বলেছে কিনে নেবো। তাছাড়া অতবড় একজন মানুষ তার কোনো অহংকার নেই, উপেনের মতো অকাট মুর্খকে পর্যন্ত তুমি তুমি করে কত মিষ্টি ভাবে কথা বলছে।
“বাপু, জান তো হে, করেছি বাগানখানা, /পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা। “
কতো সৌখিন মানুষ, সুন্দর একখানা বাগান করার স্বপ্ন দেখছেন। নগদ মূল্যে দাম দিয়ে জায়গাটা কিনে বাগান করবেন বলে মনস্থির করেছেন। এটা উপেনের সহ্য হলো না, সব বিক্রি করে পেটায় নমো করলো, আর এটা নগদে বিক্রি করতে ওর গায়ে লাগছে। আসলে তা নয়, আসল কথা হল হিংসে! জমিদারের বাড়বাড়ন্ত দেখে হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে। অন্যের ভালো দুচোখে সহ্য করতে পারে না । নিজে তো কিছু করতে পারেনি, তাই সুন্দর বাগান করতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এবার আপনিই বলুন স্যার কে ভালো আর কে খারাপ?
এতটা শোনার পর হো হো করে হেসে উঠি, আমরা

ক্রমশ …

(কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সম্প্রদায়ের জাত্যাভিমানে আঘাত বা আরোপ- এ লেখনীর বিন্দুমাত্র উদ্দেশ্য নয়। যে কোনো প্রকার সাযুজ্য আকস্মিক কিংবা দৃশ্যপট নির্মাণে সংবন্ধিত।)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।