সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৫৬)

রেকারিং ডেসিমাল


তারপর সেকি কাণ্ড। 
ফুলশয্যার ঘরের দরজা আটকেছে ছোটরা। 

দাদা পয়সা দে। নইলে ঢুকতে দেব না। 

দিদা হেসে কুটিপাটি হচ্ছেন। 

ও কুমার, কি করবি ? 

নতুন বর গম্ভীর বদনে চেয়ারে বসে ঘরের বাইরের খাবার টেবিলের পাশে। 

আমার কাছে কিছু নেই। বসে থাক সকলে। 

মা, কাকিরা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসেন। গুরুজন। তাই সামনে হাসা উচিৎ না, এই আর কি। 

আসন পাতা হয় দরজার সামনে। দিদা বলেন, এই বউ,  অনেক তো লম্বা চুল। নমো করো বরকে, চুল দিয়ে পা মুছে দিতে হয়। 

বউ হাঁটু মুড়ে বসেছিল নমো করতে। 
ঘোমটা দিয়েছিল। চিরকাল মাকে যেমন দিতে দেখেছে। 

এইবার ফ্যাঁস করে উঠলো। 

ইস, বয়ে গেছে তোমার নাতির পা মোছাতে। 

মায়েরা তাড়াতাড়ি শান্তি শান্তি বলেন। 
না না, অত বাড়াবাড়ি করতে হবে না থাক। এই বাচ্ছারা দরজা ছাড়। বরের পকেটে কিস্যু নেই। আয় এদিকে, পাবি পয়সা। 

একমাত্র ভগ্নীপতি মুচকি হেসে এগিয়ে আসে শালার পাশে। 
চল ভাই, ঘরে ঢোক সপরিবার। এত সুন্দর করে খাট সাজালাম যুগলে ছবি তুলি। খাটুনি সার্থক হোক। 
তারপর তুমি খেটো। 
চোখ টিপে হাসির বহরা দেখে বর ক্রমশ গম্ভীর হতে থাকে। কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচেকা ও। 
নানান পোজে ছবি তোলা শেষ হতেই, বউ, আচ্ছা, গুড নাইট, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, বলে দেয়ালের দিক ঘেঁষে উঠে বসে খাটে। 

ননদাই হেসে বললেন, বাবা এত মারাত্মক স্মার্ট। আচ্ছা, গুড নাইট। 

সবাই বেরিয়ে যেতেই, দরজায় ছিটকিনি মারে বর। 
তারপর খাটে বসে বলে, বাপ রে, কি কাণ্ড! 

বউ কোন কথা না বলে ঝপাঝপ গয়না খুলতে থাকে। 
উফ, কি জ্বালা। এত কিছু এতক্ষণ পড়ে থাকা যায়!! 

সব গয়নাগাটি খুলে বালিশের তলায় চালান করে শান্তি । 
বর ঘরের আলো নিভিয়ে তসরের পাঞ্জাবী খুলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে ততক্ষণে। 

হঠাৎ, দরজায়, ঠুক ঠুক। 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।