ক্যাফে কাব্যে সুজিত চট্টোপাধ্যায়

ইতিহাস কথা বলে

 

হে মান্যবর!
চেতাবনী আর দিতে হবে কতোবার?
ছয় বাই আটের এই ক্ষুদ্র পরিসর
কিন্তু অনেকটাই খোলামেলা আমার কাছে।
সামনে পিছনে কতো যে খোলা জায়গা পড়ে আছে
তোমার ধারণাই নেই।
তোমার বিপদটাও কিন্তু সেখানেই।
প্রতিদিন ‘ ফলো ইন ‘,
আটঘণ্টার কঠোর কায়িক শ্রম
শেষে যাবজ্জীবন ‘ লাইফার ‘ আমি
ফিরে এসে সেলে
পোড়া বিড়ি আর জ্বলে যাওয়া দেশলাই কাঠির কার্বনে লিখে যাই অবিরাম তোমার অত্যাচারের ইতিহাস সেলের দেওয়ালে।

হে মহামহিম মান্যবর!
তোমার বেতনভুক সেপাই সান্ত্রী,
মন্ত্রী ষড়যন্ত্রী সকলেই তাদের কাজের প্রতি
প্রয়োজনের অধিক নিষ্ঠাবান।
নিয়ম করে নানা অছিলায়
বিদ্ধ করে, আহত করে আমায়।
শুধুই যে কাজ ভালোবেসে, ঠিক এমনটাও নয়।

কারন মান্যবর! ওরা কিন্তু অনেকদিন
উৎসাহ ভাতা থেকে বঞ্চিত।
পেটে ভাতে বেঁচে থাকা
শৈশব উত্তীর্ণ স্কুলছুট কিশোরের মতো
ওরা আনন্দ পেতে চায়
ফড়িং বা প্রজাপতির ডানায়
সুতো বেঁধে তাকে উড়তে দিয়ে
আবার টেনে নেবার এক নিষ্ঠুর খেলায়।

হে পরাক্রমশালী মান্যবর!
ক্ষমতার নেশায় তোমার
বুজে আসা চোখে এসব কিছুই হয়তো অর্থহীন,
কিন্তু নিষ্ঠুর খেলায় ওরা অভ্যস্ত হয়ে যাবে যেদিন…
আমার মেয়াদ শেষে
আমি ফিরে যাবো
আমার নিজের খোলা আকাশে;
দুহাত ছড়িয়ে দেবো মুক্তির উল্লাসে
সেদিন আমার ফেলে আসা সেলে
নিক্ষেপিত হবে না তো তুমি?
কারণ, ততোদিনে ওরা অভ্যস্ত হয়েছে
নিপীড়নের বিভিন্ন কলায়,
খাজুরাহোর দেওয়ালে রতিক্রিয়ার
চৌষট্টি কলার মতো আঁকা আছে
সেলের দেওয়ালে তোমার নিপীড়নের ইতিহাস ।
বিরক্ত এবং শিক্ষিত সেপাই সান্ত্রীরা
বুঝে নিতে চাইবে তাদের ন্যায্য পাওনা।
আমারই মতো সেদিন অপারগ তুমিও
বুঝিয়ে দিতে হবে অক্ষম;
অতএব, আপ্তবাক্য আবারও ধাক্কা খাবে
সেলের দেওয়ালে…
” হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ “।
” ইতিহাস পুনরাবৃত্তির পথে চলে,
ইতিহাস কথা বলে “।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।