সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৪৯)

রেকারিং ডেসিমাল

বলতে থাকেন ছেলের মা।
কি বৃষ্টি বাবা। অঝোরে জল। তার মধ্যে আমার সেই যন্ত্রণা। ছেলে ত আমার ছোটখাটোটি ছিল না কোন দিনই। সবে উনিশ পেরিয়েছি।
কি ব্যথা বাবা!!
আমার মা ছিলেন বড় জাঁদরেল গিন্নী। আসপাশের যত বাড়ির বউদের তলব পাঠিয়ে নিয়ে এসেছেন জজ সাহেবের মেম সাহেব।
দেখুন বড় চিন্তায় আছি। আপনারা থাকলে তবু ত ভরসা পাই।
মেয়ে বলে চলেন।
ভিতরের ঘরে আমার ত এই ব্যথার ফাঁকে ও মাথা কাটা যাচ্ছে।
কি জ্বালা বল দেখি। নিজে মরছি নিজের কষ্টে অস্থির, বাইরে দাওয়াতে বাদলার মধ্যে এত্ত লোক হাপিত্যেশ করে বসে। চা মুড়ি নারকেল সন্দেশ খাওয়া চলছে বটে, কিন্তু কাঁহাতক এমনি করে পরের মেয়ের ছেলে হবার জন্যে লোকে বসে থাকতে পারে অন্যের বাড়িতে। কি ছিদ্দত।
অথচ জাজ গিন্নীর কথা ঠেলে উঠে ও যেতে পারছে না।
আমার সব দিকে পাগল পাগল লাগছিল, উফ।
তিন দিনের মাথায় ফোরসেপ দিয়ে তবে ছেলে হল বাড়িতেই।
এত বর্ষা যে যত কাঁথা কাপড় বানানো ছিল বাচ্চার সে ত ভিজে চুপ্পুড়, এমনকি আমাদের যত শাড়ি সেও একবার এ দিক পেতে শোয়াই আবার অন্য দিক পেতে। তাও এক সময় শেষ। সারা ঘরবাড়ি শুধু ভিজে কাপড় মেলা কত দিন।
সেই থেকে জানি ত। ছেলে আমার রামবাদুলে।
এই বারে বড় মাসি গল্পের খেই ধরেন।
কিন্তু যুদ্ধের বাজার, সব চিঠি আসা বন্ধ বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়ার দিকে। তখন অবশ্য নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান। বাংলাদেশ তখনও হয়নি।
কিন্তু ও দিকে রাশিয়াতে চিঠি পাঠানো যাচ্ছিল।
ব্যানার্জি মশাই তখন ছিলেন রাশিয়া। আমরা সব খবর দিয়ে চিঠি পোস্টে পাঠাতাম রাশিয়ায়। সেইখান থেকে তিনি কলকাতায় ফের পাঠিয়ে দিতেন সব।
তবে কলকাতায় এ বাড়িতে খবর এল যে প্রথম বংশধর হইসে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।