গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী
মুক্ত কর হে
চোখ মেলে তাকাও কবি। দেখ আমি এসেছি।
তোমার নতুন বৌঠান। তাকিয়ে দেখ, এই যে আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কাল সারারাত ধরে তুমি যে কেবল আমাকেই ডেকেছ। তোমার কাতর স্বর আমাকে যে কষ্ট দেয় সে তো তুমি জানো। তাই আজো পর্যন্ত যখনই তুমি ডেকেছ, আমি তখনই তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নির্জন দুপুরে অন্ধকার চিলেকোঠার ঘরেই হোক বা মধ্যরাতে তোমার উপাসনা গৃহে হোক আমি এসেছি তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে। নশ্বর দেহ থেকে আমি অনেক আগেই মুক্তি নিয়েছি কিন্তু তোমার মায়ার বাঁধন থেকে মুক্তি পেলাম কই? তোমার প্ল্যানচেটের দিনগুলিতে আমি সবথেকে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করেছি। তোমার ডাক উপেক্ষা করতে পারিনি বলে কায়াহীন আমি
নশ্বর জগতের পরপার থেকে বহু বাধা পার করে এসেছি এই মোহময় পৃথিবীর বুকে। কখনো
কি ভেবে দেখেছ যে বারবার এভাবে আমাকে ডাকলে আমার কষ্ট হতে পারে? অশরীরী আত্মা প্রিয়জনকে কাছে পাবার জন্য ভৌতিক কর্মকান্ড করে সেটা তুমি জানো। কিন্তু একসময় আমাকে চূড়ান্ত অবহেলার পর আজ আবার এতো সঙ্গে থাকার বাসনা কেন তোমার? নিজে সুখে থাকবে বলে একদিন আমার উপস্থিতিকে অস্বীকার করেছ। আর আজ সবসময়ই তুমি আমাকে খুঁজে বেড়াও কেন?
তোমার ভালোবাসা এত নিষ্ঠুর কেন ?
যাকে চিরদিন হৃদয়ের সিংহাসনে ঠাঁই দিলে তার সুখ দুঃখের খোঁজ নিলেনা কেন ? তুমি ডাকলে আমি এভাবে আসতে পারিনা তবুও তুমি কাল কাতর কন্ঠে বললে, ” নতুন বৌঠান, একটিবার, শুধু একটিবার, শেষবারের মতো দেখা দাও তোমার অলীকবাবুকে। জীবনের শেষ ধাপে এসে আটকে রইলুম একা। বৌঠান,
আমার হাত ধরে পার করে দাও এই মায়া কারাগারের অদৃশ্য দরজাটুকু। মোহবিলাসী যে শরীর নিয়ে এত অহংকার সেই সোনার খাঁচা থেকে আমাকে মুক্ত করে দাও। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চল বৌঠান। আর কোনোদিনো আমি তোমায় ডাকবনা বৌঠান। আর কোনোদিন কোনো কষ্ট করতে হবে না।
আজ তোমার অলীকবাবুর এই প্রার্থনাটুকু পূরণ করে দাও। ভালোবাসা বড়ই অবুঝ। কখনো তা ভয়ানক নিষ্ঠুর। ভালোবাসার জনকে কাছে পাওয়ার জন্য এ জগতে সবসময়ই কিছু না কিছু নিষ্ঠুরতা সংঘটিত হয়ে চলেছে। ভালোবাসা হল মোহের কাজল। একবার যাকে ছুঁয়ে যায় তার আর মুক্তি নেই। আমি মুক্তি চাই। তুমি আমায় মুক্তি দাও। আমায় তুমি পূর্ণ কর আপন করে নিয়ে। এই রিক্ত জীবনে তুমি এনে দাও আনন্দ। মুক্তির আনন্দ। এসো এসো হে নিঠুর এসো আমার পরপাড়ের পানসিতে। আমার শেষের বেলার গানটিতে এসো এসো।।