T3 || বিশ্ব কবিতা দিবস || সংখ্যায় প্রদীপ গুপ্ত

অগ্নিবীণা..

তোমাদের কাছে আমি চিরঋণী
হে থ্রেসিয়ান বাসী।
তোমাদের নিষ্ঠুরতার জন্যই
আমার সুর আর আমাকে হত্যা করেছো বলেই
আমার সমাধিক্ষেত্রের চারপাশে
আজও গান গেয়ে চলে সুরেলা নাইটিংগেলরা।

আমি অর্ফিয়াস।
সুরের সম্রাট অর্ফিয়াস।
পাতাল থেকে তুলে এনেছিলাম আমার হারিয়ে যাওয়া মৃত প্রেম।

” লাইরের ” সুরে যখন থমকে যেতো বনজ হিংস্রতা,
চলতে চলতে আনমনা হয়ে বদলে যেতো নদীর গতিপথ,
পাথরের রুক্ষ বুক ছেঁচে ঝর্ণার মতো বয়ে যেতো কান্নার সুর,
জড়ত্ব হারিয়ে মাটি ছেড়ে উঠে আসতো শিকড়,
বয়ে যাওয়া সুর লহরির সাথে পথ চলতো তরুরাজি…

আমি অর্ফিয়াস।
হায় ইউরিডিস,প্রেম আমার, একমাত্র তোমার জন্যই..
তোমাকে।
হ্যাঁ, একমাত্র তোমাকে,
একমাত্র তোমার জন্যই…

লাইরের সুরতরঙ্গে কান্নায় ভিজেছিল দেবতাদের চোখ,
বীণার যাদুতে স্তব্ধ হয়েছিলো নিষ্ঠুর পাতালপুরী,
সারবেরাস — সিসিফাস — ইকসায়ঁ — ট্যান্টেলাস
সবার নীরব আশীর্বাদ, ফুল হয়ে ঝরেছিল সেদিন
মাটির নীচে, মিশকালো জমাটবাঁধা পাথরের অন্ধকারে।

আমি অর্ফিয়াস।
হায় ইউরিডিস, প্রেম আমার !
কেন আমি পিছন ফিরে চাইলাম?
কেন তুমি একবারও মনে করিয়ে দিলে না
এ অভিশপ্ত পাতালপুরীতে
তোমার দিকে তাকানোর নির্দেশ নেই !

যখন শিশিরপতনের শব্দ হারিয়ে যায়
যখন বেহেশতের ফুল শিউলির ঝরে পড়া স্তব্ধ হয়,
তখন বসন্তের নাইটিংগেল হয়ে আমি আসি
উড়ে বেড়াই আমার সমাধিক্ষেত্রের চারপাশে

আমি অর্ফিয়াস।
যার হাতের সুরবীণা লাইরের সুরে
দেবতাদের কান্নায় নেমে আসে বর্ষা
হায় ইউরিডিস!
সে বর্ষায় কি তুমি ধান্যবতী হয়ে হরিদ্রাভ শাড়ি পরে
বিরহের সুরে গেয়ে বেড়াও বুকভাঙা সুরের বিলাপ বাদল বাতাসে?

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!