সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৮)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

তারপর আড়াই তিনবছর কেটে গেছে, পৃথিবীময় করোনার ভেল্কিতে রোয়াকের আড্ডা উধাও, আর ফুলটুসি বৌদিও ঘরবন্দী। সময় কাটে না। নিজেকে কলে পড়া জন্তুর মতো মনে হয়। বিয়ের আগে, বাপের বাড়িতে থাকার সময়, তাও সন্ধ্যের সময় গা ধুয়ে, ধোয়াকাচা শাড়ি পড়ে, হারমোনিয়ামে গলা সাধতে বসতেন। পাড়ার ধুর্জটিবাবুর গানের স্কুলে দুবছর ডিস্টিংশন পেয়ে পাশও করেছিলেন। থার্ড ইয়ারে যখন পরিক্ষা দোড়গোড়ায়, ঠিক তখুনি করোনার ছায়া ধীরেধীরে সারা পৃথিবীতে ছেয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেসময় পাশের পাড়ার চামেলি, সেই যে ফোন করে ফেসবুকের সমস্ত নান্দনিক দিকগুলো ওকে বুঝিয়ে বললো —- ব্যাস, সাথে সাথে ফুলটুসি বৌদির সমস্ত যন্ত্রণার উপসম হলো।
সেই ফুলটুসি বৌদি এখন প্রথিতযশা একজন কবি। প্রতিটি কবিতায় তিনশো চারশো লাইক, দেড় দুশো কমেন্ট। রান্নাবাড়া চুলোয় উঠেছে, নির্বিরোধী স্বামী, অফিসে বসের কাছে ধ্যাতানি খেয়ে বাড়ি ফিরে চা চাইলেও ধ্যাতানি শুনতে হয়।
— বাপের বয়েসে তো শুনিনি যে গুষ্টির কেউ দুছত্র লিখেছে, আগে আমার মতো লাইক কমেন্ট পেয়ে দেখো, মাথা ঘুরে যাবে। তারচেয়ে ভালো হয়, নিজের চা নিজেই একটু বানিয়ে নিলে, এ যেন সেই ” অভিমান ” সিনেমার কেস। ঘরের বৌ কেন কিছু করবে? যা কিছু করার যেন ওনারাই করবেন!
ভদ্রলোক এতোক্ষণ চুপ করে শুনলেন সবকিছু। তারপর শান্তভাবেই বললেন,
— কবিতা! কে লেখেন? যতক্ষণ ধরে বকবকালে ততোক্ষণে এককাপ চা কি হয়ে যেতো না? বেশ দিতে হবে না চা জলখাবার, আমিই ব্যবস্থা করছি।
বলেই ফোনটা তুলে বলে উঠলেন — আমি মিষ্টার তলাপাত্র বলছি, তোমার বাড়ির রান্নার লোককে একটু পাঠাবে প্লিজ! সকাল বিকেলে একজনের চা জলখাবার সাথে দুপুরের আর রাতের খাবার করে দেবে, কী? কি বললে? রোজ কিনা? হ্যাঁ হ্যাঁ, রোজ, প্রত্যেকদিন, মাসে তিরিশ দিন, বছরের তিনশো…
ফুলটুসি এতোক্ষণ ধরে চুপচাপ শুনছিলেন, এবার তিনি ভদ্রলোকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে চিৎকার করে উঠলেন — কে? আপনি কে বলুন দেখি? কী নাম আপনার? চুপ করে আছেন কেন? বলুন ওই ভেড়ামার্কা লোকটার সাথে আপনার কতদিনের সম্পর্ক?
কোন উত্তর না পেয়ে ফোনটার দিকে তাকালেন ফুলটুসি, সেখানে তো কারো নাম্বার দেখাচ্ছে না, জ্বলজ্বল করছে তারই ফোনের নম্বর। যেটা মিষ্টার তলাপাত্র অফিসে পৌঁছে তাকেই রুটিনমাফিক করেছিলেন।

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।