কবিতায় ডাঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়

মগডাল

গাছের কাঙ্ক্ষিত ফলটা মগডালে আছে -।
হাটতে হাটতে অনেক দুর থেকে তুমি
ঠিক পৌঁছে গেছো বিশাল গাছটার কাছে,
তারপর আস্তে আস্তে, উঠে যাচ্ছো,
একটার পর একটা শাখা -প্রশাখা পেরিয়ে উপরের দিকে —
হঠাৎ গাছের উপরে বসে থাকা
মানবাকৃতির কয়েকজন চীৎকার করে উঠলো,
“ওহে ভাই, আর উঠতে যেওনা উপরে , সাবধান,বড় বিপদ আছে” —
তুমি থমকে গেলে, তারপর ভাবলে, “অনেক চড়াই -উৎরাই পেরিয়ে এসেছি, কিসের বিপদ “!
আবার উঠবার চেষ্টা করলে,
আবারও তোমাকে থামিয়ে, দমিয়ে পথ বিচ্যুত করবার প্রচেষ্টা!
তুমি উঠতে চাইলেই কি মগডালে ওঠার অনুমতি পাবে!
ওখানেই তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলটা,
তার রাজকীয় মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে বিরাজমান।।
তবু অনেক প্রচেষ্টা, ঘাম রক্ত ঝরানোর পরও
সে ফল তোমার অধরা রয়ে যাচ্ছে
অনুমতির চিঠিটা কিছুতেই, তোমার হাতের কাছে
টুপ করে ঝরে পরছেনা
অনুমতি অনেক সময় অধরা থাকে, কিছু বাছাই করা গাছের
বাছাই করা ফল পাড়তে গেলে ;
আজ নয় কাল নয় ,
হয়তো কখনোই সেই অনুমতির চিঠি,
গাছের রাজার পারিষদদের কাছ থেকে এসে পৌঁছয়না।।
আগামী অনেক ভোর কেটে, এভাবেই রাত নেমে আসে ;
মগডালে উঠবার অনুমতি পাওয়া যায়না ওভাবে।
শর্ত থাকে, হিসেব থাকে, বুঝে নেবার থাকে!
সবসময় না হলেও অনেকসময়,
সেই সব শূন্যস্থান পূরণ না করলে,
মগডালের মিষ্টি রসাল ফল অধরাই থেকে যায়।।
যারা আগে থেকে ডালগুলো দখল করে আছে,
ওরা সহজে তোমাকে ওদের কাছাকাছি আসতে দেবেনা!
টালবাহানা আর স্থানের বিরুপতার অবতারণায়
মনের মধ্যে তখন দ্বন্দ্ব আর দ্বিধার দ্বৈরথ –
নিরুৎসাহিত এক পাহাড় ভাঙা হৃদয় তখন কি এক মূষিক হৃদয়ের কম্পনে অনুরণিত হবে!
ওই মগডালের বাসিন্দারা তোমাকে ভয় দেখাবে!
তাদের শেষ অস্ত্র!
ওই পথ থেকে বিচ্যুত করে, তোমাকে অন্য পথে পাঠিয়ে দেওয়া।
তুমি ফিরে আসবে, এতদিনের সব শ্রম সব স্বপ্নকে
তারপর সবকিছু একটা নোংরা ঝুলিতে ভরে,
বিসর্জন দিয়ে দেবে সব
যার মধ্যে সবটাই তুমি, তোমার আজন্মের লালনকথা।
শঙ্কা আর উদ্বেলিত আবরণে ধীরে ধীরে তুমি ঢাকা পড়ে যাচ্ছ —
রুটি, রুজির ভবিষ্যত প্রশ্নচিহ্নর দেওয়াল তুলে দিয়েছে ;
প্রশ্নচিহ্ন তোমাকে উদ্বেল করে দিচ্ছে
তলিয়ে যাচ্ছ, তুমি তলিয়ে যাচ্ছ এক নৈরাশ্যের অন্ধকারে –
বাঁধার প্রাচীর ভেঙে, সেখানে একটি স্বপ্নের চারাগাছ রোপণ করা অনেক কঠিন!
পরাজয় নয়, জয় যে দাঁড়িয়ে আছে, এই রাস্তার বাঁকে।
হাটতে হাটতে আবার একদিন পথ ভেসে উঠবে
এক অন্যরকম সূর্যোদয়ের সংকেতে,
একটি অমাবস্যার রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের বুক চিরে –
যা তোমাকে আবার একদিন
ঠিক পৌঁছে দেবে মগডালে –
তখন তোমার ক্ষতবিক্ষত,রক্তাক্ত পায়ের দিকে তাকিয়ে,
পৃথিবীর দু ফোঁটা জল, নির্যাস হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইবে
তার হৃদয়ের চোখ থেকে –
সেই দুফোঁটা জল তোমাকে প্রণাম করবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।