সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র পর্ব ১)

মানুষ মাত্রই অনুভূতি ও আবেগপ্রবণ তবে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাপারটা বড়ই আপেক্ষিক ৷ সময়টা বড়ই ম্যাড়মেড়ে রং হীন৷ অভিমানের ক্যানোপিতে এক অদ্ভুত ধ্বংসের ছাপ ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বটের ঝুরির মতো সমস্যা. প্রত্যেক মানুষের জীবনের গলিপথে চরে বেড়ায় অবলীলায় ৷খুশির জোনাকি গুলো সরে সরে যায় ৷ মনের মধ্যে চাপের সৃষ্টি হয় ৷ আমদের নিঃশব্দতা থেকেই এই চুপের ভিতর চাপ সৃষ্টি হয় ৷ মনের দরজা বন্ধ করে ডিপ্রশনে চলে যাই , নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনা পরিস্থিতির সঙ্গে ৷ আমাদের সকলেরই সময় সবসময় একভাবে চলে না , ওঠা পড়া লেগেই থাকে ৷ কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা সবসময় নিজেদের সামলে নিতে পারি না ৷ তবে আমাদের মনে রাখতে হবে জীবনে সবকিছুই সাময়িক ৷ বৃষ্টি যখন ঝরতে শুরু হয় সেটা যেমন আজীবনের জন্য ঝরে না তেমনি দুঃখ কষ্ট বা সমস্যাও চিরজীবনের জন্য নয় ৷ কিন্তু আমরা ভুলেই যাই এই গভীর সত্য ৷ গ্রীনল্যান্ডে যেমন ছমাস রাত্রির পর দিন আসে তেমনি একই ভাবে জীবনে কোনোকিছুই দীর্ঘস্হায়ী হয় না ৷ জীবনের খারাপ সময়গুলোতে দিশাহারা না হয়ে বিশ্বাস রাখতে হবে যে এরও শেষ আছে ৷ যখন কিছু খারাপ বা ভুল হয় তখন নিজেকেই নিজের প্রতি যত্ন রাখতে হবে ৷
দুশ্চিন্তা ও দোষারোপ কোনোটাই কিছু বদলাতে পারে না ৷ আমরা সবসময় খারাপ কিছু ঘটলেই নিজেকে বা অন্যকাউকে দোষারোপ করি ৷ দুশ্চিন্তা করে খারাপ সময় আরও খারাপ করে তুলি ৷ কিন্তু এই আচরণ কি আমাদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে ? বরং মানসিক অস্হিরতা বাড়িয় তোলে ৷ তাই দোষারোপ বা দুশ্চিন্তা না করে নিজেকে সামলানোর জন্য মনকে অন্যকাজে নিযুক্ত রাখার চেষ্টায় নিয়োগ করতে হবে ৷ অন্ধকারের শেষে যেমন আলো থাকে তেমন খারাপ সময়ের পিছনেও কিছু সঠিক জিনিস হচ্ছে এটা ভাবতে পারলে আমাদের সহ্যশক্তিও বাড়বে আর আমরাও কাটাতে পারবো দুঃখদশা ৷ তাই এমন সময়ে শুধুমাত্র খারাপ জিনিসের প্রতি লক্ষ্য না করে জীবনে কি ভালো ঘটেছে বা ঘটছে সেটা সামান্য পরিমাণেই হোক না কেন সেই দিকটাকেও নজর করতে হবে ৷সবসময় আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের প্রতি এবং আর এই বিশ্বাস পারবে আমাদের এই সমস্যা থেকে বের করে নিয়ে আসতে ৷ সমস্যা হলে তার সমাধানের উপায়ও আছে অঙ্কের নিয়মেই তা প্রমাণিত ৷
যখন আমাদের সঙ্গে কোনো কিছু খারাপ হয় আমরা নিজের প্রতি তখন ভাবনা বা যত্ন দুটোই ছেড়ে দিই ৷ কিন্তু খারাপ সময়টা আমাদেরই নিজেকেই অতিক্রম করতে হবে তাই সবার আগে নিজেকেই ভালোবাসতে হবে এবং নিজেকে নিয়মের বেড়াজালে জড়াতে হবে ,না হলে এই সময় শেষ হবার আগেই নিজেই হয়তো শেষ হয়ে যাবো ৷ তাই ঠিকসময়ে খাওয়া দাওয়া ও পাশাপাশি বিশ্রাম করতে হবে ৷ আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় অতিবাহিত করতে হবে ৷ আবেগ না লুকিয়ে কষ্ট হলে তা শেয়ার করা উচিৎ আপনজনদের সাথে ৷ কষ্ট চেপে রাখলে এর ফল হতে পারে মারাত্মক ৷ মানসিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায় এর পরিণতি ৷ তাই কঠিন সময়ে আবেগ চেপে না রেখে পরিবার বা বন্ধুদের সাহায্য নিলে অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়া যাবে হয়তো তাড়াতাড়ি ৷
মানুষের জীবনে খারাপ ও ভালো দুরকম সময় আসে ৷ খারাপ সময়কে যত তাড়াতাড়ি মেনে নেওয়া যাব,ভেঙ্গে না পড়ে তত তাড়াতাড়ি উপায় বার হবে ৷ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সহজেই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷ সব সময় ইতিবাচক চিন্তা, মেডিটেশন এই পরিস্থিতিতে খুবই কার্যকর ৷ ইতিবাচক চিন্তা জীবনের দুঃসময় পার করার অন্যতম হাতিয়ার ৷ ” আশায় বাঁচে চাষা ” একটা প্রবাদই আছে ৷ যেটা হয়েছে তারচেয়ে ভালো কিছু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এটা মনে করতে পারলেই আমারা সমাধানের দিকে অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবো ৷আমরা কি হারিয়েছি ,কেন হারিয়েছি ,সে সব থাকলে কত ভালো হত এসব চিন্তা না করে ভবিষ্যতে আমরা কি অর্জন করতে পারি সেই নিয়ে ভাবতে পারি ও তারজন্য নিজেকে সেই অনুযায়ী তৈরী করতে পারি ৷ যা হারিয়েছি তারজন্য অভিযোগ না করে পুণরায় ফিরে পাবার জন্য চেষ্টা করতে পারি৷ জীবনের কঠিন সময়গুলো আমাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে যায় ৷ চাকরি হারানো , আর্থিক সমসমস্যা , শারীরিক অসুস্থতা , আপন জন হারানোর সময়গুলোতেই বোঝা যায় কে আমদের আপনজন আর কে অভিনয় করছিল ৷ এ শিক্ষা আমাদের সারাজীবন সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে যা কোনো বই পড়ে সহজে উপলব্ধি করা যায় না ৷ তাই জীবনের কঠিন সময়কে অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ হিসাবে ভাবতে শিখুন ,জীবন গতিময় হবে ৷ আজ এই পর্যন্তই ৷ পরবর্তীতে যাপনের অন্যকোনো দিক উপস্থাপন করবো ৷ সবাই ভালো থাকবেন ৷ সকলকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা ৷

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।