মার্গে অনন্য সম্মান মিনতি গোস্বামী (সম্পাদকীয় কলম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১১৩
বিষয় – মরসুম

মরশুমি সবজি

বেলা অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে চায়ের জল চাপাতেই শাশুড়ি গীতা দেবী তরকারির একটা বড় ঝুড়ি দালানে নামিয়ে দিলেন। বৌমার উদ্দেশ্যে বললেন, ” এই দেখো চার আটি মেথি শাক আছে, রাতে পরোটা হবে। আর কাল পেঁয়াজকলি ভাজা, মটরশুঁটি দিয়ে বাঁধাকপি হবে, সঙ্গে মাছের মাথা দেবে। পালং শাক, শিম, বেগুন, মূলো, বরবটি দিয়ে ছ্যাচরা হবে, তাতে বড়ি দিও। মূলো, বেগুন, বড়ি দিয়ে মৌরলা মাছের টক। ফুলকপির পোস্ত আর সাদা তিলের বড়া। আমি তরকারীর ঝুড়ি নামিয়ে টিভি দেখতে যাচ্ছি। যা তরকারি বললাম, তা যেন নড়চড় হয় না। মরশুমি সবজি কর্তা খেতে ভালোবাসেন, তাই থলি ভর্তি বাজার আনেন। তোমার সুবিধার জন্য আগের দিন সবজির বাজার করাই। সকালে গিয়ে মাছ আনবেন, টাটকা মাছ যা আনবেন রেঁধো। আমি যাচ্ছি, আমার চা টিভির ঘরে দিয়ে এসো।। ”

বেলা চায়ের জল বসিয়ে ফিরিস্তি শুনতে শুনতে কাল সকালে পৌঁছে গেছিল। চায়ের জল শুকিয়ে গেছে, সম্বিত ফিরতে দু ‘কাপ জল ঢেলে দিল।
চা করে সবাইকে দিয়ে, নিজে দুটি মুড়ি খেয়েই কাজে লাগতে হবে। রাতে এক হাতেই এক কেজি ময়দা মেখে মেথির পরোটা বানাতে হবে। তারপর পরের দিনের জন্য তরকারি কেটে রাখতে হয়।।
বাড়িতে শ্বশুর, শাশুড়ি , দুই ননদ আর স্বামী অলোক থাকে। দুই ননদ লেখাপড়া করে বলে কোন কাজ করে না। বেলা কে একা হাতেই সব কাজ করতে হয়।

বেলা ভালোবেসে অলোককে বিয়ে করেছিল। অলোক ফ্লিপ কার্ডে চাকরি করে, রোজ বর্ধমান থেকে শ্রীরামপুর যায়। প্রাইভেট চাকরি, কটা টাকাই বা মাইনে পায়, তাই বেলাকে মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়। বেলাও বিয়ের পর স্টেট ব্যাংক এ লোন রিকভারি পোস্টে একটা ক্যাজুয়াল চাকরি পায়, ১০ হাজার টাকা মাইনের। শহরের মধ্যে বলে সংসার সামলে কষ্ট করে কাজটা করে।
শাশুড়ি সব সময় শাসান, ” সেবা করলে তবেই বাড়িতে থাকতে দেবেন। বাড়ি হাতছাড়া হলে তাদের দাঁড়াবার জায়গা নেই, তাই মানিয়ে চলা। শাশুড়ির আজ্ঞা নরন চরন হয় না।

মরশুমী সবজি কাটতে কাটতে বেলার মন চলে যায় অন্য জায়গায়। এই হেমন্তের শেষেই তো বেলা
তাদের বাড়ির ছোট্ট উঠোনে আর ছাদে মরশুমি ফুল, সবজি লাগাতো বাবার সঙ্গে। বাবা লাউ, শিম, বেগুন, লঙ্কা, ফুলকপি লাগতো উঠোনে, আর বেলা গাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা লাগাতো সারি দেওয়া টবে।
চন্দ্রমল্লিকা আর গাঁদার গাছ ভর্তি ফুল হলে বেলা সেজেগুজে তাদের পাশে বসে ছবি তুলে, ফেসবুকে পোস্ট করতো। মরশুমি, মরশুমি, মরশুমি ভাবতে ভাবতে বেলার চোখে মরশুমের সর্ষে ফুল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।